বৃহস্পতিবার, ৩০শে নভেম্বর, ২০১৭ ইং ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বহুল প্রতিক্ষিত ভাষণে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এড়িয়ে গেলেন পোপ ফ্রান্সিস

AmaderBrahmanbaria.COM
নভেম্বর ২৮, ২০১৭

---

মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে  দেয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে  ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এড়িয়ে গেলেন পোপ ফ্রান্সিস। খবর বিবিসির। এই সময় ঐক্য সহিঞ্চুতা ও ক্ষমার আহ্বান জানালেন পোপ।বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পোপ তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার সর্তকভাবে এড়িয়ে যান।

এর পরিবর্তে তিনি বলেন, এই মানুষরা প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের শিকার। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পোপ বলেন, মানবাধিকারের কথা চিন্তা করেই প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন করতে হবে।

 

এর আগে, রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা অভিযানের নিন্দা জানিয়ে, তাদেরকে ভাই ও বোন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন পোপ। মিয়ানমার প্রশাসন এই সফরে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার না করতে পোপকে রাজনৈতিকভাবে অনুরোধ করে । অন্যদিকে মানবাধিকার গোষ্ঠিগুলো পোপকে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে তাঁদের স্বনামে ডাকার আহ্বান জানায়। অন্যদিকে ক্যাথলিক গোষ্ঠি পোপকে জানায়, তার রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার মিয়ানমারের খ্রিষ্টানদের জন্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
২০ আগষ্টের পর থেকে সহিংসতার শিকার হয়ে প্রায় ৬ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ্ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্প্রতি সমঝোতা হয়েছে। এই ইস্যুতে পোপ বলেন , মানবাধিকার রক্ষার্থে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

তবে সরাসরি রোহিঙ্গাদের কোন উদাহরণ না টানলেও জাতিগত অধিকারের বিষয়ে নিজের শক্তিশালী অবস্থানের কথা বললেন পোপ। তিনি বলেন, মিয়ানমারকে ভবিষ্যতে অবশ্যই সমাজের প্রতিটি মানুষের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত, প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শন, প্রতিটি গোষ্ঠির গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা এবং তাদের আইনগত অধিকার দিতে হবে।
ফ্রান্সিস বলেন, মিয়ানমারের জনগণ অভ্যন্তরীণ সংকট ও সংঘর্ষে ভুগছে। মিয়ানমারে গভীর বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। একটি জাতি হিসাবে সবাইকে অবশ্যই শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে এবং রাজনৈতিক ও নৈতিক শুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে।
বক্তৃতা দেয়ার আগে পোপ অং সান সুচির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। পোপের ভাষণের পর নিজের ভাষণে সু চি ও পোপের মত সরাসরি রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোন কথা বলেন নি। তবে তিনি রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, এটি বিশ্বের নজর কেড়েছে। তিনি বলেন, রাখাইনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ইস্যুতে বিশ্বাস, ঐক্য ও সহযোগিতা ফিরিয়ে আনা হবে।

এর আগে সাবেক মহাসচিব কফি আনান ও মিয়ানমারের ক্যাথলিক চার্চ পোপ ফ্রান্সিকেকে দেশটি সফরে যেয়ে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চার করার যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা তিনি পুরোপুরি মেনে চলেছেন। চারদিনের সফরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার পোপ ফ্রান্সিস দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠকের পর দেয়া ভাষণে বলেছেন, মিয়ানমারে গভীর বিভেদ রয়েছে। বলেছেন, মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তরুণ প্রজন্মের হাতে। এও বলেছেন, মিয়ানমারের নেতাদের মানবিকভাবে কাজ করে যাওয়ার যাতে সবাই লাভবান হয়। পোপ বলেছেন, পুনর্গঠনের কথা, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার কথা, মর্যাদা ও মানবতার সঙ্গে সমন্বয় করার কথাও বলেছেন। পোপ ধৈর্য, ঐক্য ও ক্ষমার কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি তার ভাষণে একটিবারও রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি।