ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাংকিং খাতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। খেলাপি ঋণ অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ তদারকির অভাবে ব্যাংকিং খাত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এত দিন সরকারি ব্যাংকের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ থাকলেও এখন তা বেসরকারি ব্যাংকেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বেশেষ তথ্য অনুযায়ী খেলাপি ঋণ ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। যেখানে সরকারি আটটি ব্যাংকের ৪০ হাজার ৯৯ কোটি টাকা খেলাপি। শতাংশের হিসেবে যা ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারি ব্যাংকগুলো ৪ টাকা ঋণ ঋণ বিতরণ করলে ১ টাকা খেলাপি হচ্ছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা দায় চাপাচ্ছেন পরিচালকদের ওপর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে বলেছে, অনেক ক্ষেত্রেই তাদের কিছু করার ছিল না। তবে, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গনমাধ্যমে বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বল তদারকির কারণেই খেলাপি ঋণের এই অবস্থা।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক জোর অবস্থান নিতে পারত এর বিরুদ্ধে। বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো আগে বের করা উচিত ছিল যে পরিস্থিতিটা কোনদিকে যায়। এখানটায় আমি বলব তাদের ব্যর্থতা আছে। সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারকেই দায়িত্ব ভার নিতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি মনে করি দুই দিক থেকেই ব্যর্থতা আছে। এখন ব্যাংকের এমডি যদি শক্ত অবস্থান না নেয়, চাকরি হারানোর ভয়ে যদি কাজ করে তবে তা দুঃখজনক। ব্যাংককাররা ভালো ভাবে যাচাই বাছাই করে না। চেনাশোনা থাকলে কারসাজি করে ঋণ করে।’
এদিকে, পুরো ব্যাংকিং খাতে অবলোপনকৃত ৪৫ হাজার কোটি টাকা হিসেবে নিলে খেলাপি ঋণ প্রায় ১লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। প্রকৃত অবস্থা আরো খারাপ, কেননা গত ৫ বছরে ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে না।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা বেড়েছে। ওই পর্ষদের লোকেরাই নীতি নির্ধারণ, ব্যবস্থাপনা, নির্দেশনা দেয়। যা খারাপ।’
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে আস্থা হারানোর ফলে যদি আমানতের প্রবাহ কমে যায় তো সার্বিকভাবে উৎপাদন খাতে ঋণের পরিমাণ কমে যেতে পারে। সেটা আমাদের কাঙ্ক্ষিত জাতীয় প্রবদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা সেখানে বাধার সৃষ্টি করবে।’