g সন্তানকে নামাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলার ১০টি কার্যকরী উপায়! | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বৃহস্পতিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং ২৭শে আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সন্তানকে নামাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলার ১০টি কার্যকরী উপায়!

AmaderBrahmanbaria.COM
অক্টোবর ৮, ২০১৭
news-image

---

মাওলানা মিরাজ রহমান : আমরা মুসলিম। আর এই কারণেই নামাজ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই নামাজের মাধ্যমেই আমরা নিজেদেরকে আল্লাহর সামনে পেশ করতে পারি। তাছাড়াও নামাজ হচ্ছে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মাঝে দ্বিতীয় স্তম্ভ। ইসলামের প্রথম স্তম্ভ হচ্ছে কালেমা শাহাদাত। সুতরাং আমারা আমাদের সন্তানদেরকে এই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভটি আদায়ের প্রতি অনুপ্রেরণা দিতে পারি এবং তাদেরকে নামাজ পড়তে অভ্যস্ত করে তুলতে পারি। আমরা সবাই চাই তারা নিজেরাই নামাজ পড়তে শিখুক এবং দোয়া করতে শিখুক। এগুলো তারা বাবা-মার জন্য বাধ্য হয়ে করুক এটা কেউই চায় না। একজন সন্তানকে আগে বুঝতে হবে যে ‘ইবাদাত’ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আরোপিত একটি বিষয় এটা ইচ্ছা বা স্বাধীনভাবে পালন করার কোন বিষয় নয়। নিম্নে এমন কিছু পথ উল্লেখ করছি যার মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানকে নামাজ পড়ার প্রতি উৎসাহিত করতে পারবেন।

১. উদাহরণের মাধ্যমে শেখানো : শিশু সন্তানরা সাধারণত মা-বাবার অনুকরণ করে থাকে। সুতরাং তাদেরকে দেখান যে আজান শুনার সাথে সাথে আপনি অজু করে নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মুসলিম মা-বাবা হিসেবে আপনি আপনার সন্তানের কাছে প্রথম উদাহরণ। আপনি যদি সারা দিন ইবাদত-বন্দেগীকে অগ্রাধিকার দেন এবং এই ক্ষেত্রে কোন অলসতা বা অবহেলা না করেন তাহলেই আপনার সন্তান নামাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। আপনি তাদেরকে বলতে পারেন, নামাজের সময় হয়ে গেছে এখন আমি আর দেরি করতে পারবো না।

২. ছোট থেকেই শুরু করুন : আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাজ শিক্ষা দাও, যখন তাদের বয়স থাকে সাত। আর যখন তারা দশ বছরে পৌঁছে যাবে তখন তোমারা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাজের জন্য প্রহার করো। এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও (আবু দাউদ) যদিও সাত বছর বয়সে শিশুরা নামাজ আদায় করতে বাধ্য নয় কিন্তু তারা সাত বছর থেকে নামাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে, তরুণ হওয়ার পরেও নামাজের বিষয়ে অনাগ্রহী হবে না।

৩. সন্তানের জন্য নামাজের জায়গা নির্ধারণ করে দিন : আপনার বাসায় যদি জায়গা থাকে তাহলে নামাজের জন্য একটি রুমকে নির্দিষ্ট করে রাখুন। আর যদি অতিরিক্ত জায়গা না থাকে তাহলে অন্তত একটি রুমের এক কোণায় সামান্য জায়গা নামাজের জন্য নির্ধারণ করে রাখুন। যাতে করে আপনার সন্তান বুঝতে পারে নামাজ পড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যার কারণে একটা নির্দিষ্ট জায়গা রাখা হয়েছে। আপনার সন্তানদেরকে শিক্ষা দিন যে, এটা শুধু নামাজের জন্য নির্ধারিত জায়গা। এই জায়গাকে সব সময় পরিষ্কার ও পবিত্র রাখতে হবে।

৪. সন্তানদের চাক্ষুষ বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিন : ছোটরা চক্ষুষ বিষয় ও পুরস্কারের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে। আপনার বাসায় ইসলামী ক্যালেন্ডার ঝুলিয়ে রাখুন। এটা আপনার সন্তানদের প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করবে। কেননা ইসলামী ক্যালেন্ডারটি আপনার সন্তানের চাক্ষুষ অনুস্মারক হিসাবে কাজ করবে। আর প্রতিটি শুক্রবার তাকে স্মরণ করিয়ে দিন।

৫. টাইম ম্যানটেইন : যখন আপনার সন্তানের বয়স সাত হয়ে যাবে তখন তাদেরকে নামাজের সময় শিক্ষা দিন। তাদের জীবনের এই নতুন অধ্যায়কে উৎসাহিত করার জন্য আপনার সন্তানের বন্ধুদের বাসায় আমন্ত্রণ জানান এবং তাদেরকে হিজাব, তাজবিহ অথবা আজান দেয় এমন এলার্ম ঘড়ি প্রদান করুন যাতে করে তারা নামাজ আদায় করতে পারে।

৬. আল্লাহ সম্পর্কে তাদেরকে শিক্ষা দিন : আল্লাহর বিষয়টি বোঝা ছাড়া, প্রার্থনা শুধু একটি অনুষ্ঠান হয়ে উঠবে এবং পালনকর্তার সাথে আধ্যাত্মিক এবং মানসিক সংযোগের অভাব হয়ে পরবে। শৈশব থেকে, আপনার সন্তানদের আল্লাহর বিষয়ে শিক্ষা দিন। আল্লাহ কীভাবে কীভাবে সবকিছু তৈরি করেছেন। তাদেরকে কি কি দিয়েছেন এবং তাদেরকে কীভাবে রক্ষা করবেন ইত্যাদি বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলুন। এর মাধ্যমে আপনার সন্তানদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি এক গভীর ভালোবাসা তৈরি হবে।

৭. নবীদেরকে তাদের জন্য মডেল হিসাবে তুলে ধরুন : নবীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাসায় কথা বলুন। তাদের জীবনী পাঠ করুন এবং তাদের সিরাত নিয়ে কথা বলুন। এটা আপনার জীবনে দৈনিক একটা রুটিন বানিয়ে নিন। নবীদেরকে তাদের সামনে মডেল হিসেবে তুলে ধরুন। তাহলে তারা তার মতো হতে চেষ্টা করবে। এবং তাদের মতো ইবাদত করতে চেষ্টা করবে।

৮. ছোট ধাপ : এটা একটা নাটকীয় পরিবর্তন হতে পারে, যে একদমই নামাজ পরে না সে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছে। তো শুরু হোক এই ছোট পরিবর্তন দিয়ে।

৯. অটুট থাকুক : আমরা সব সময়ই চাই আমাদের সন্তানরা নামাজকে ভালোবাসুক। কিন্তু এমন সময়ও আসবে যে, তারা অলসতা করবে এবং নামাজ পড়তে চাইবে না। মা-বাবা হিসেবে তাদের দায়িত্ব হবে তারা যেন সব সময়ই নামাজ পড়ে সেই ব্যবস্থা করা। বিশেষত তাদের বয়স যখন দশ বছর হয়ে যায়। তখন নামাজ ছেড়ে দেওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। নামাজ পড়ার বিষয়টা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে কঠিন কিছু নয়।

১০. পারিবারিক সময় : নামাজ একটি ইতিবাচক মনোভাব, এটাকে উৎসাহিত করার একটি উপায় হচ্ছে এটি নিয়ে একটি যৌথ অনুশীলন করতে হবে। প্রতিদিন পরিবারিকভাবে কমপক্ষে একবার নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন। আপনার সন্তান যদি আজান দিতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে আজান দেওয়ার দায়িত্ব দিন। যদি সম্ভব হয় তাহলে শুক্রবারের নামাজে এবং ঈদের নামাজে আপনার সন্তানদের নিয়ে এক সাথে যান। একসঙ্গে নামাজ পড়ার বিষয়টা একটু ভিন্ন বিষয়। এতে নিজেদের মনোবল বৃদ্ধি পায়।