তিন বছরের ভিসা পেলেন প্রধান বিচারপতি
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও তাঁর স্ত্রী সুষমা সিনহা তিন বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেয়েছেন। গতকাল শনিবার আদালত প্রশাসনের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
৫ অক্টোবর গুলশান-২ নম্বরে অবস্থিত ভিসা আবেদন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে পাঁচ বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ভিসার জন্য আবেদন করেন প্রধান বিচারপতি ও তাঁর স্ত্রী। প্রক্রিয়া শেষে সেদিনই পারিবারিক ভ্রমণের জন্য ওই ভিসা দেওয়া হয়, যার মেয়াদ ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ায় প্রধান বিচারপতির বড় মেয়ে সূচনা সিনহা বসবাস করেন।
এক মাস অবকাশকালীন ছুটি শেষে গত ৩ অক্টোবর সর্বোচ্চ আদালত খোলে। এর এক দিন আগে ২ অক্টোবর শারীরিক অসুস্থার কারণ দেখিয়ে এক মাস ছুটি প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে রাষ্ট্রপতির বরাবর আবেদন করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ছুটিতে যাওয়ার ২ দিন পর ৫ অক্টোবর তিনি জনসমক্ষে বের হন। প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে বলে সেদিনই বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
ছুটির আবেদন বিষয়ে পরিষ্কার হতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিবৃতি দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, যিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানও। গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।
আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির ছুটির যে চিঠি প্রকাশ করেছেন, ওখানে কয়েক জায়গায় বানান ভুল রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে ওই চিঠি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, প্রধান বিচারপতির মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তি পাঁচটি বানান ভুল থাকা চিঠিতে স্বাক্ষর করতে পারেন কি না। তিনি এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দাবি করে বলেন, তাঁকে খোলা জায়গায় আসতে দেওয়া হোক, আইনজীবীদের মাঝে আসতে দেওয়া হোক। ওই চিঠি (ছুটির আবেদন) সম্পর্কে প্রধান বিচারপতিকে ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান জয়নুল আবেদীন।
প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বর্তমান অবস্থা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি গতকাল সমিতির মিলনায়তনে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় আজ রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ দেশের প্রতিটি জেলা আইনজীবী সমিতিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, গত দুই দিনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা সাক্ষাৎ করেছেন। অথচ তাঁদের সাক্ষাৎ করতে সুকৌশলে বাধা দেওয়া হয়। এতে প্রমাণিত হয়, প্রধান বিচারপতি স্বেচ্ছায় ছুটিতে যাননি। জয়নুল আবেদীনের অভিযোগ, তিনি (প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) ‘অন্তরীণ’। একমাত্র সরকার নির্দেশিত ব্যক্তিরাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন, অন্যরা নন।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি, একজন সহসভাপতি, সম্পাদকসহ কার্যনির্বাহী কমিটির ৮টি পদে আছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। একজন সহসভাপতি, সহসম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ কমিটির অপর ৬টি পদে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা আছেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিপন্থী নেতারা উপস্থিত ছিলেন, তবে আওয়ামীপন্থী নেতাদের দেখা যায়নি।
সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহসভাপতি উম্মে কুলসুম বেগম, সহসম্পাদক শামিমা সুলতানা, সদস্য শেখ তাহসিন আলী, আয়শা আক্তার ও হাসিবুর রহমান।
এদিকে, সমিতির আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অংশের নেতারা আজ রোববার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।প্রথম আলো