ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রত্যাখ্যান ১৪ দলের
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। একইসাথে রায়ের পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়েছে। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে থাকা বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বাদ দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
রবিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, একটি সার্বভৌম সংসদকে অবহেলা করে, ইচ্ছাকৃতভাবে খাটো করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের যে রায় সেদিন দেয়া হয়েছে, ১৪ দলের কাছে এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এ রায় প্রত্যাখ্যান করি। এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ।
তিনি বলেন, আমাদের আইনমন্ত্রী যেভাবে যুক্তিসঙ্গতভাবে রায়ের ওপর সরকারের পক্ষ অবজারভেশন দিয়েছেন, আমরা তার সাথে একমত। আমরা মনে করি ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালত শুধু অন্যায়ই করেননি, ’৭২-এর সংবিধানের পথে যে যাত্রা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হচ্ছিল তা বাধাগ্রস্ত করেছেন। আমরা মনে করি ষোড়শ সংশোধনীর যে রায় হয়েছে সেগুলো সংশোধন হওয়া উচিত, সেটি বাতিল হওয়া উচিত।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেশের মানুষের জন্য লজ্জাজনক দাবি করে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে ষোড়শ সংশোধনী পাশ হয়েছে বিচারকদের সম্মানে রেখে। তাদের অপসারণের যে ক্ষমতা সংসদ নিয়েছিল রাষ্ট্রপতিকে নেতৃত্ব দিয়ে, এটি সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক চেতনার প্রকাশ। আইয়ুব খানের দেয়া সামরিক আইন, পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের দেয়া সামরিক আইনকে যারা বৈধ বলেছেন, তারা বরং গণতন্ত্রকে চপেটাঘাত করেছেন, সামরিক শাসনকেই তারা অনুসরণ করেছেন। এটা অত্যান্ত দুঃখজনক, বাংলাদেশের মানুষের জন্য লজ্জাজনক।
রায়ের পর্যবেক্ষণ প্রত্যাখ্যান করার দাবি জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এত বড় পর্যবেক্ষণ দুনিয়ার কোনো রায়ে কোনো দিন হয়েছে বলে আমি জানি না। যে পর্যবেক্ষণের মধ্যে এত আপত্তিকর কথার উল্লেখ করা হয়েছে, বলতে আমার দ্বিধা হয়। আজকে যাঁর নেতৃত্বে, যাঁর অনুপ্রেরণায় ও সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো তাঁকে কটাক্ষ করা হলো এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে তিনি বঙ্গবন্ধুকে খাটো করেছেন। বরং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ও অনান্য বিচাপতি যারা এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, ১৪ দল তীব্রভাবে এর নিন্দা করে। এই পর্যবেক্ষণ থেকে এগুলো অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
এ রায়ের মধ্যদিয়ে বিএনপি পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে দাবি করে তিনি বলেন, আজকে এই পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে বিএনপি এখন মাঠ ঘোলা করার চেষ্টা করছে। পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। তারা কি মনে করে যে এই অবমাননার মধ্য দিয়ে কোনো অশুভ শক্তিকে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আনতে চায়? এগুলো পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি আমরা বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে। আর একটা অশুভ শক্তি এক হয়ে গেছে। এবং তাদের কাজই হলো চক্রান্ত করা। এই রায়কে কেন্দ্র করে তারা মাঠে নেমেছে। কিন্তু বাংলার জনগণ এই চক্রান্ত সফল হতে দেবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সম্প্রতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের যে রায় হয়েছে ১৪ দলের পক্ষ থেকে সেই রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ প্রকাশ করেছি। এই রায় জনগণের অধিকার হরণের রায় হয়েছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে ১৯৭৭ সালের সামরিক সরকারের নির্দেশিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ফিরে যাওয়াটা জনগণের ক্ষমতা হরণ করার সামিল ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি এই রায়ের পুনর্বিবেচনা করা হবে। সেই সাথে এই রায়ের পর্যবেক্ষণে কিছু মীমাংসিত বিষয়কে বিতর্কিতভাবে তুলে আনা হয়েছে। আমরা আশা করি এই বিষয়গুলো বাদ দিয়ে ষোড়শ সংশোধনীর রায় পুনর্বিবেচনা করা হবে। এটা আমাদের প্রত্যাশা।
জাসদের একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে কার্যত বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করা হয়েছে। এটা কটাক্ষ করার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয় অমিমাংসিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি সেই সময় কোথায় ছিলেন, আমরা জানি না। হয়তো তিনি এ সম্পর্কে ইতিহাস জানেন না। সেই কারণে ‘বাংলাদেশ একজনের নেতৃত্বে স্বাধীন হয়নি’- এই কথাটি বলার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। এই বক্তব্য স্পাঞ্জ করাটা আমাদের সবার দাবি। তাছাড়া আমরা মনে করি যখন দেশে স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছিল, তখন এ রায়ের মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বিএনপি জামায়াত যাতে আগামী নির্বাচন ভন্ডুল করতে পারে সেজন্য প্রধান বিচারপতি তাদের একটি হাতিয়ার দিয়ে দিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, জাসদের একাংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।