মালয়েশিয়া প্রবাসীদের জন্য শুধু সান্ত্বনা পুরষ্কার !!
AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ৬, ২০১৭
---
শামীম সরকার,মালয়েশিয়া : সেই দেশের কথা বলছি, যে দেশ আধুনিকতায়, আভিজাত্যে আর অর্থনীতিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যতম একটি দেশ- হ্যাঁ, সেটি মালয়েশিয়া৷ এ দেশের সেবা, কৃষি, ও নির্মান শিল্প মারাত্মকভাবে বিদেশী শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল৷এর ফলে, এ দেশে বছরে বছরে বিদেশী শ্রমিক ভাড়া করা হয়। সেদিক থেকে সোর্স কান্টি’র (শ্রমিক ভাড়ার জন্য নির্দারিত দেশ) তালিকার শীর্ষে আছে বাংলাদেশ৷মালয়েশিয়ার উন্নয়নমূলক কাজের অলি-গলিতে বাংলাদেশীদের পা’য়ের ছাপ, দেয়ালে দেয়ালে হাতের ছাপ লেগে আছে৷কিন্তু এই দেশ গড়ার অংশীদার বিদেশী শ্রমিকদের কপালে কি জুটেছে, জুটছে বা জুটবে?
সাম্প্রতিক সময়ে এ দেশে বিদেশী শ্রমিকরা বেশ শঙ্কটময় সময় পার করছে, মানে অবৈধ অভিবাসী আটকের বেশ জোড়ালো অভিযান চলছে এখানে৷ এটা এ দেশের নিয়মিত ঘটনা, থেকে থেকে এমনটিই ঘটে এখানে৷কিন্তু এ দেশে অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা কেন বাড়ছে, পেছনে কি কারণ- এর উত্তর কি খোঁজে এই দেশ বা খুঁজে পাওয়া উত্তরের সমস্যার সমাধান কি করছে এ দেশ? থাক, এর কারণের পথে আজ না হাঁটি৷একটু সুখ স্বপ্নকে হাতে পাওয়ার আশায় আমারা কেউ জমি, গরু, ছাগল, বউয়ের সোনার অলংকার বা নিজের শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে মালয়েশিয়ার পথে পা রাখি৷এসব বিক্রি করার সামর্থ যাদের না থাকে, তারা উচ্চমাত্রায় সুদে ধার করা অর্থের বিনিময়ে মালয়েশিয়ায় আসি৷ এ সকল শ্রমিক এদেশে আসার সময় দু’দেশের স্বার্থ ও শ্রমিকের কল্যাণের চুক্তিতে চুক্তির পাতা বাড়ে। কিন্তু দেশ থেকে আসার আগেই কল্যাণচুত হয় বিদেশগামী শ্রমিক। অর্থাৎ সরকারের নির্ধারিত খরচের তিন চারগুন বেশি খরচে মালয়েশিয়ায় আসতে হয় তাদের৷বিদেশে যেতে ইচ্ছুক এসব ব্যক্তি মানুষের উচ্চতায় যেন এতটাই খাটো হয় যে, সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিগোচরই হয় না৷মালয়েশিয়ায় এসে নিয়োগকর্তাদের উদাসীনতার কারণে অবৈধ হয়ে যায় অনেকে৷অবৈধ হয়ে যাওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটি একটি৷
দেশে করা ধারদেনার বোঝা মাথায় নিয়ে স্বল্পবেতনে মাসে ৩০ দিনই কাজ করে অনেকেই, তার উপরে থাকে অবৈধতার অভিশাপ৷অপরদিকে এ সকল অবৈধ শ্রমিক দু:শ্চিন্তার কারণ হয় মালয়েশিয়ার৷অবৈধ অভিবাসী প্রসঙ্গে যথন কথা বলে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ। তখন তাদের ক্ষোভের তীরের লক্ষ্য থাকে নিয়োগকর্তাদের উপর৷অবৈধ হওয়া শ্রমিকদের আটক করতে মাঠে নামে অভিবাসন বিভাগ৷আমাদের দেশে একটা কথা প্রচলিত আছে- ‘শিলে পাটায় ঘষাঘষি, মরিচের কাম শেষ’। এই কথার সাথে যেন মিলে যায় মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ আর নিযোগকর্তাদের কর্মকান্ডের সাথে। ঐ গ্রেফতার থেকে নিজেকে বাঁচাতে অনেকেই জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অভিযানের সময় কেউ কেউ আশ্রয় নেয় বাসার ছাদে, কোন কোন সময় পানির ট্যাঙ্কিতেও৷এমনও হয়েছে লাফিয়ে পালাতে গিয়ে কেউ মরেছে, না হয় পঙ্গু হয়েছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, জেলে যেতেই হয়েছে৷ ঝিকে মেড়ে বউকে শাসন করা হলেও, মার কিন্তু ঝিয়ের উপরই পড়ে। শত শত অবৈধ শ্রমিকের আটকের খবর পাওয়া গেলেও, নিয়োগকর্তাকে আটক বা শাস্তি দেয়ার খবর কমই পাওয়া যায়৷কর্তৃপক্ষের ক্ষোভের ধারালো তীরের আঘাতে রক্ত বের হয় শ্রমিকেরই৷ক্ষণে ক্ষণে এসব ঘটনা স্থানীয় ও দেশের গণমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে আর কোমল মনের মানুষেরা শিউরে ওঠে৷অভিবাসন বিভাগ ও নিয়োগকর্তার দ্বন্দ্বের চাপে পড়ে শ্রমিকই যেন চ্যাপ্টা হয় বারবার৷
পহেলা জুলাই এর মাঝরাত থেকে এ পর্যন্ত অবৈধতার অপরাধে ৭৫২ জনেরও বেশি বাংলাদেশী অভিবাসী আটকের খবর পাওয়া গেছে৷একেকজন ব্যক্তি জেলে গিয়েছে, দেশে একেকটি পরিবারের চলার চাকা থেমে গিয়েছে৷আটক হওয়া কেউ আমাদের নিজের মানুষ না হলে তাদেরকে নিয়ে আমরা ক’জনই বা ভাবি! সাজা ভোগের পর কতদিন তাদেরকে বন্দীশিবিরে থাকতে হয় কে জানে ! বন্দীশিবিরে বন্দী মানুষেরা দেশে যেতে পারছে না কেন তার খবর কে রাখে? দেশের রেমিটেন্সকে পুষ্ট করার এসব অপুষ্ট শ্রমিকদের দেখার কথা যাদের, শীতল রুমে থাকতে থাকতে তাদের নিউমোনিয়া না হলেও দেশে চোখের জলে স্বজনদের গা ভিজে ঠিকই৷তবে গত রোববার কুয়ালালামপুরে একটি অনুষ্ঠানে এ সকল প্রবাসীদের ‘দেশের গোল্ডেন বয়’ বলেছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী৷আপতত: এ শান্তনা পুরষ্কারই থাকুক প্রবাসীদের ঝুড়িতে৷