সোমবার, ১২ই জুন, ২০১৭ ইং ২৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আমরা করুণ অবস্থায় আছি : প্রধান বিচারপতি

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ৩০, ২০১৭
news-image

---

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিচারাঙ্গণে অবকাঠামোগত করুণ অবস্থার কথা জানালেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমরা করুণ অবস্থায় আছি। সরকার প্রাইমারি স্কুলে, ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার দেন। কিন্তু আমার বিচারকদের একটা কম্পিউটার দিতে পারেন না! আমার বিচারকদের থাকার জায়গা নেই। এই সুপ্রিম কোর্টের একটি এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং নেই। সুপ্রিম কোর্টের অনেক অফিসারের বসার রুম নেই।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।

আজ অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আজমালুল হোসেন কিউসি তার বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করেছেন।

শুনানির এক পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টান্তমূলক কাজের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি হাজারটা উদাহরণ দিতে পারি যে, দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে আমাদের সুপ্রিম কোর্ট। ওই যে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা। সারা পৃথিবীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলো। সারা দেশের মানুষ একটা ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা করলো। এই সুপ্রিম কোর্টের ইন্টারফেয়ারেই ওই মামলার জট খুলে গেল। আমি যদি হাজারিবাগের ট্যানারির কথা বলি, তাহলে বলব, এই সুপ্রিম কোর্টের ইন্টারফেয়ারেই ট্যানারি স্থানান্তরিত হল। এই শহর দুষণের হাত থেকে রক্ষা পেল। আমি যদি বলি- গুলশান, বাড়িধারা লেক। আর শীতলক্ষ্মা, বুড়িগঙ্গা সুপ্রিম কোর্টের ইন্টারফেয়ারেই রক্ষা পেল। এই সুপ্রিম কোর্ট দেশের জনগণের স্বার্থে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সব সময় পদক্ষেপ নিয়েছে।’

শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন,‘এখানে যারা আছেন, বিচারকরা সবাই স্বাধীন, আমি ছাড়া। প্রধান বিচারপতি কতটা পরাধীন?’

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপনি পরাধীন নন, প্রতিদিন কাগজ খুললে আপনার অনেক বক্তব্য পাওয়া যায়।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমিতো প্রেস কনফারেন্স করে কথা বলি না, আমি আমার প্রসিডিংসের মধ্যে থেকে কথা বলি।’

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে ১০ দিনের মতো শুনানি চলছে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। মামলাটির সঙ্গে সাংবিধানিক বিষয় জড়িত থাকায় হাইকোর্ট সরাসরি আপিলের অনুমতি দেন।

ওই বছরের ১১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করে দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন,বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।

১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারনের ক্ষমতা দেয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর গত ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। দেশের শীর্ষ আইনজীবীরা এবং সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো এ সংশোধনী প্রত্যাখান করে। পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন।

আবেদনে বলা হয়, এই সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। কারন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্যতম অংশ। কিন্তু এই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি। আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের ডিভিশন বেঞ্চ ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করে। পরে এই রুল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন। হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হককে এই বিশেষ বেঞ্চে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এ মামলার রুল শুনানিতে দেশের শীর্ষ ৫ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসিকে অ্যামিকাসকিউরি হিসেবে অভিমত নেন আদালত।

এ জাতীয় আরও খবর