উপাচার্য অবরুদ্ধ, তিন ছাত্রলীগের নেতা বহিষ্কার
---
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের চাকরির দাবিতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবীকে আজ বুধবার সকাল থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মী। রাত পৌনে ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও উপাচার্য অবরুদ্ধ ছিলেন।
এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার বেলা ১১টা থেকে উপাচার্যকে তাঁর কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ কর্মসূচির সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান নোবেল শেখ।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে ছাত্রলীগের কেউ কেউ আবেদন করেছেন। তবে কারা করেছেন তা জানা যায়নি। এদিকে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর একটি পক্ষ নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে হাইকোর্ট ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিতের আদেশ দেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী ও অবরুদ্ধ করা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী সূত্র জানায়, আজ সকাল থেকে উপাচার্যের কক্ষে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সভা চলছিল। সভা চলা অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে ছাত্রলীগের নামে স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কক্ষের সামনে বারান্দায় বসে পড়েন। এর নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতারা।
এদিকে অবরোধের কারণে উপাচার্য তাঁর কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তবে উপাচার্যের কক্ষে সভায় থাকা শিক্ষকেরা বেরিয়ে গেলেও উপাচার্য তাঁর কক্ষ থেকে এখনো বের হতে পারেননি।
আন্দোলনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাদীউজ্জামান হাদী দুপুরে মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। অন্য কারও সঙ্গে কথা বলেন।’ তবে তিনি উপাচার্যের ফটকের সামনে আন্দোলনে রয়েছেন বলে জানিয়ে আর কিছু বলতে চাননি।
উপাচার্যের কক্ষের সামনে অবস্থান নেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মৃতিশ চন্দ্র বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যোগ্যতার ভিত্তিতে ছাত্রলীগের নেতাদের অ্যাডহক ভিত্তিতে চাকরি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। উপাচার্য স্যার বহুবার কথা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি আর হয়নি। কেননা আগামী ৫ মে তাঁর চাকরির মেয়াদের শেষ দিন। শেষ পর্যন্ত আমরা বাধ্য হয়েছি এভাবে আন্দোলন করতে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী সন্ধ্যায় অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সঙ্গে সভা চালাকালে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা এসে চাকরি দেওয়ার দাবি জানায়। এই চাকরি আমি কীভাবে দেব? এটি দিতে পারে ইউজিসি (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন)। এ ছাড়া সম্প্রতি ৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তা হাইকোর্টে রিট করার কারণে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমি ডায়াবেটিকসের পেশেন্ট। আমাকে নিয়মিত ইনসুলিন দিতে হয়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এসব কথাও শিক্ষার্থীদের বলেছি। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। আমি এখনো অবরুদ্ধ।’
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কামাল হাসান নোবেল শেখ ছাত্রলীগের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য স্যার অবরুদ্ধ হয়েছেন এটা ঠিক। তবে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার হতে পারে। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কেউই এর সঙ্গে জড়িত নেই।’
উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবীর মেয়াদ আগামীকাল ৫ মে শেষ হবে।
তিন নেতা সাময়িক বহিষ্কার
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। এরা হলেন মোক্তার এলাহী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বসুনিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মৃতিশ চন্দ্র বর্মণ।
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহাজাদা প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইমতিয়াজ বসুনিয়া, ইসমাইল হোসেন এবং মৃতিশ চন্দ্র বর্মণকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।