বুধবার, ৩রা মে, ২০১৭ ইং ২০শে বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

মহান মে দিবস আজ

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ১, ২০১৭
news-image

নিউজ ডেস্ক : শ্রমিকের অধিকার আদায়ে ইতিহাস সৃষ্টির দিন, মহান মে দিবস আজ। অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে এই দিবস। আর তাই এই দিবস ঘিরে আবারও সামনে এসেছে দেশের শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বলছে, শ্রমবান্ধব পরিবেশের অভাবে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে মজুরি না পাওয়া মানুষের সংখ্যা। রানা প্লাজা, তাজরীন, স্পেকট্রাম ও টাম্পাকো ট্র্যাজেডি দেখিয়ে দিচ্ছে দেশের শ্রমজীবী মানুষ কতটা অনিরাপদ।

কর্মক্ষেত্রে হতাহত শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৭৩৮ জন শ্রমিক মারা গেছে। আর আহত হয়েছে ১৭ হাজার ৩৬১ জন। কর্মক্ষেত্র হিসেবে গার্মেন্ট, পরিবহন আর নির্মাণ খাত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে শ্রমিকরা রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল আজকের মে দিবস। ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে দিনে ৮ ঘণ্টার কর্মদিবসের দাবিতে সেদিন প্রাণ দিয়েছিল মার্কিন শ্রমিকরা।

দেশে বর্তমানে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আইনে ৮ ঘণ্টার যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শ্রমিক কর্মঘণ্টার এই সুরক্ষা পায়। বাকিরা আইনের কোনো আওতায় নেই। সুতরাং সারা দেশে শ্রমিকদের জন্য একটি স্বাস্থ্যবান্ধব, দুর্ঘটনামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং জাতীয় নূ্যনতম মানদণ্ড তৈরি করা আজকের মে দিবসের বড় দাবি।

সুলতান উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, অধিকাংশ কারখানায় এখনো আট ঘণ্টার বেশি কাজ করানো হয়, এমনকি ছুটির দিনেও কাজ করানো হয়। কিন্তু ওভারটাইমের টাকাও দেয় না। বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের সবচেয়ে কম মজুরি দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি মোশরেফা মিশু কালের কণ্ঠকে বলেন, শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে দেশের সংবিধানে অধিকার দেওয়া হলেও এ দেশের মালিকরা সাংবিধানিক অধিকার কার্যকর করছেন না। সরকারেরও এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নেই।

মিশু বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক কারখানাগুলোর ভবনের কাঠামো কিছুটা ঠিক হলেও শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ এখনো ঠিক হয়নি, এমনকি এখনো দমন-পীড়ন চলছে কারখানার ভেতরে।

শ্রমিকদের ওপর গার্মেন্ট মালিকদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গেলে পোশাক খাতের মালিকরা ১৬০০ শ্রমিককে ছঁাটাই করে। ১৫০০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে মামলা দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এবারের মে দিবসের দাবি প্রসঙ্গে মিশু বলেন, সব খাতের শ্রমিকদের জন্য নূ্যনতম মজুরি বোর্ড গঠন করতে হবে। ন্যূনতম মজুরি হতে হবে ১৬ হাজার টাকা, মূল বেতন হবে ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক শ্রম আইন ও শ্রমবিধি চান তাঁরা।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, এ বছরের মে দিবসে তাঁদের মূল দাবি হলো-ন্যূনতম মজুরি কাঠামো, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা; যেন জীবিকার জন্য জীবন হারাতে না হয়, কর্মক্ষেত্রে মারা গেলে ক্ষতিপূরণের জন্য একটি জাতীয় মানদণ্ড এবং এর সব কিছু বাস্তবায়নের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করার গণতান্ত্রিক অধিকার।

দেশের কত শতাংশ শ্রমিক এখনো আইনের আওতায় আসেনি-জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ লেবার স্টাডিজ ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে মোট শ্রমজীবী মানুষ ৬ কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে ৭৩ লাখ শ্রমিক আইনের আওতায় এলেও বাকি ৫ কোটি ৯৭ লাখ এর বাইরে।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্বমানের পণ্য উত্পাদনের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য উত্পাদনশীলতা ও শ্রমিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি, শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করাসহ সুস্থ শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, তাঁর সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সুফল শ্রমজীবী সমাজ পেতে শুরু করেছে। মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক ও মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কল-কারখানায় উত্পাদন বৃদ্ধিতে আরো নিবেদিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বলেন, শ্রমিকের ঐতিহাসিক অবদানের ফলেই বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। অথচ আজও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নিপীড়িত শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।

এ জাতীয় আরও খবর

  • রিট খারিজ : চলবে জলসা, জি বাংলা, স্টার প্লাসরিট খারিজ : চলবে জলসা, জি বাংলা, স্টার প্লাস
  • গণপরিবহনে নৈরাজ্য: গতকালের ৮ টাকার ভাড়া আজ ২৫ টাকাগণপরিবহনে নৈরাজ্য: গতকালের ৮ টাকার ভাড়া আজ ২৫ টাকা
  • দেশ বেচে দিলাম নাকি নিয়ে ফিরলাম?
  • শেখ হাসিনার সম্মানে নৈশভোজে যেতে প্রণবের ফোন, দোটানায় মমতাশেখ হাসিনার সম্মানে নৈশভোজে যেতে প্রণবের ফোন, দোটানায় মমতা
  • আতিয়া মহলের ‘মরজিনা’ নাম নয়, জঙ্গি নেটওয়ার্কের কোড!
  • হকারদের সমস্যা : ২৯ মার্চ ফাইনাল খেলা!