রবিবার, ৭ই মে, ২০১৭ ইং ২৪শে বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ছবি আঁকতে ভালোবাসেন যে ঘোড়া

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ২, ২০১৭

তার নাম মেট্রো। বয়স ১৪ বছর। একসময় রেসের ঘোড়া ছিলো। সেরা দৌড়বাজও হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়ার পর মেট্রো একেবারে অকেজো হতে বসেছিল। মেট্রোর মালিক রন ক্রাজিউসকি একজন শিল্পী। একসময় তাঁর মাথায় এক অদ্ভুত ভাবনা এলো। মেট্রোকে তিনি ছবি আঁকার ইজেলের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন।

কথায় বলে, আপনি ঘোড়াকে পানিতে নিতে পারবেন, কিন্তু পানি খাওয়াতে পারবেন না। তাই রন যখন মেট্রোকে ইজেলের সামনে দাঁড় করালেন, তখন যে সে ছবি আঁকবে, এর কোনো নিশ্চয়তা ছিল না।

মেট্রো কিন্তু ছবি আঁকতে শুরু করল। শুধু তা-ই নয়, তার ছবি বিক্রিও হলো। এ পর্যন্ত মেট্রোর আঁকা ছবি বিক্রির আয় থেকে ৮০ হাজার মার্কিন ডলার ঘোড়াদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়েছে।

মেট্রোর এই ব্যতিক্রমী গুণের কথা স্থানীয় টিভি চ্যানেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার গেটিসবার্গ থেকে মেট্টোর কথা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

২০০৯ সালে রন ও তাঁর স্ত্রী যখন মেট্রোকে নিয়ে আসেন, তখন ঘোড়াটি অসুস্থ ছিল। একসময় মেট্রো রেসের সফল ঘোড়া ছিল। বেলমন্ট স্টেকসসহ আটটি ঘোড়দৌড়ে জিতেছে। পুরস্কার পেয়েছে তিন লাখ মার্কিন ডলার। তবে হাঁটুতে বড় ধরনের আঘাতের কারণে মেট্রোকে ঘোড়দৌড় থেকে অবসর নিতে হয়।

মেট্রোকে কয়েক মাস ধরে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘোড়াদের জন্য তৈরি বিশেষ জুতা কিছু সময়ের জন্য তার কাজে লাগে। তবে ২০১২ সালের এক এক্স-রে তে দেখা যায়, মেট্রোর হাঁটুর সংযোগগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে। পশু চিকিৎসকেরা জানালেন, দুই বছরের মধ্যে মেট্রোকে তালাবদ্ধ করে রাখতে হতে পারে। রন বলেন, ‘আমি মেট্রোকে চারণভূমির বাইরে রাখতে চাইনি। তাকে ভুলতে চাইনি। আমি ভাবছিলাম, কীভাবে আমরা একসঙ্গে সময় কাটাতে পারি।’

একসময় রন খেয়াল করলেন, মেট্রো মনোযোগ আকর্ষণের জন্য মাথা দ্রুত ওঠানামা করতে পছন্দ করে এবং মুখ দিয়ে জিনিসপত্র তোলে।

রন বলেন, ‘ঘোড়ার চিকিৎসার অংশ হিসেবে আমি তাকে প্রথমে ক্যানভাসে নাক স্পর্শ করতে শেখালাম এবং রং-তুলি ধরতে শেখালাম। প্রথমে সে তুলি ক্যানভাসে স্পর্শ করল এবং ফেলে দিল। বিষয়টি সেখানেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে সে আবার তা করা শুরু করল, রেখা টানতে লাগল এবং মনে হচ্ছিল যে সে বিষয়টা উপভোগ করছে।’

খুব শিগগির মেট্রো তার কাজ শুরু করল। রনের মতে, সেগুলো স্থানীয় গ্যালারিতে বিক্রির জন্য রাখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভালো। মেট্রোর আঁকা প্রথম চারটি ছবি প্রদর্শনের এক সপ্তাহেই বিক্রি হয়ে যায়।

রন বলেন, তুলি দিয়ে মেট্রোর রেখা টানা কিছুই না, যা মানুষ পারে। কারণ, কাজটি করার আগে সে চিন্তা করে না যে সে কী করবে। তার রেখা টানা ঘন, এলোমেলো এবং কখনো কখনো ভগ্ন।

মেট্রোর ছবি আঁকার সময় রন তার সহকারী ও শিল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি রং তুলে নেন এবং তুলি সেই রঙে ডুবিয়ে মেট্রোকে দেন। এরপর মেট্রো দাগ টানতে থাকে।

রন বলেন, ‘মেট্রো ছবি আঁকতে ভালোবাসে। মাঠে এনে ইজেল বসিয়ে দিলে সে খাওয়া বন্ধ করে ওটার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। আমি জানি না সে কতটা দেখতে পায়। আমি মনে করি, ক্যানভাসে তুলির আঁচড়ে যে অনুভূতি হয়, তা সে পছন্দ করে।’

রন জানালেন, মেট্রোর আঁকা ছবিগুলো ভালো বিক্রি হয়। দাম ৫০ থেকে ৫০০ ডলারের মধ্যে। সপ্তাহে দু-একটি যায়। মেট্রোর ছবি বিক্রির টাকার অর্ধেক দান করা হয়েছে অবসরে আসা রেসের ঘোড়াদের সহায়তাকারী দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। এখন পর্যন্ত রন ৮০ হাজার ডলার দান করেছেন। সেই অর্থ দিয়ে ৫০ থেকে ৬০টি ঘোড়াকে সহায়তা করা হয়েছে।

রন বলেন, ‘ছবি আঁকার ক্ষেত্রে কোনো একটি বিষয় মেট্রোকে আকর্ষণ করেছে। আমি মনে করি না সে এতে কখনো ক্লান্ত হবে।’ বিবিসি অবলম্বনে