চাঁদা না পেয়ে অটোচালকের পা ভাঙল পুলিশ!
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে দাবি করা চাঁদা না পেয়ে এক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালককে পিটিয়ে ডান-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ অটোরিকশা চালকরা শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা বিচারের দাবিতে পুলিশের বিরুদ্ধে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল করেন। মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য অর্ক মজুমদারকে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সহকর্মীরা আহত অটোরিকশাচালক পলাশকে (২২) উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। এ নিয়ে অটোরিকশাচালকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পলাশ সদর উপজেলার পালের হাট এলাকার নবী হোসেনের ছেলে।
আহত পলাশ জানান, শহরের ঝুমুর সিনেমা হলের সামনে থেকে অটোরিকশা নিয়ে তিনি লক্ষ্মীপুর জিরো পয়েন্ট এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ অর্ক তাঁর কাছে মাসিক বকেয়া ৫০০ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তাঁকে ৩০০ টাকা দিলে পুরো টাকার জন্য ক্ষিপ্ত হন। এ সময় তিনি হাতের লাঠি দিয়ে বেদম পেটাতে থাকেন তাঁকে।
একপর্যায়ে এলোপাতাড়ি লাথিতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও রক্ষা পায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অটোরিকশাচালকরা শহরের মাদাম এলাকায় জড়ো হন। ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখেন। এ সময় তাঁরা খণ্ড খণ্ড মিছিল করে পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফুল ইসলাম ঘটনাস্থল এসে বিচারের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
ফারুক হোসেন ও কামালসহ সাতজন অটোরিকশাচালক জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে নিয়মিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। এজন্য ট্রাফিক পুলিশকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে হয়। টাকা উত্তোলনের জন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি কাঞ্চন, শাহ আলম ও ইউসুফ নামের দালালরা দায়িত্ব পালন করেন। টাকা দিতে বিলম্ব হলে ট্রাফিক পুলিশ তাঁদের যান আটকে রাখে।
আহত পলাশের মা লায়লা আক্তার বলেন, ‘চাঁদা না পেয়ে পুলিশ আমার নিরপরাধ ছেলেকে পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছে। নির্দয়ভাবে বেদম পিটিয়ে তাঁকে আহত করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আহত পলাশ ভর্তি হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক্স-রে রিপোর্টে তাঁর ডান-পা ভাঙার আলামত দেখা গেছে।
লক্ষ্মীপুর ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক মো. সেলিম বলেন, ‘উচ্চ আদালত সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করেছেন। পলাশের অটোরিকশাটি আটক করলে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের ধস্তাধস্তি হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্য অর্ককে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা আহত চালকের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি।’