এবার ফুটপাত ছাড়ল অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষ থেকে দুই দফায় চিঠি দেয়ার পর অবশেষে অবৈধভাবে দখল করা ফুটপাত ছেড়ে দিলো বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাস। নিজস্ব নিরাপত্তার অজুহাতে দূতাবাসসংলগ্ন ফুটপাত ও রাস্তার প্রায় তিন ফুট কংক্রিটের পিলার ও ব্লক বসিয়ে দখল করে রেখেছিল দূতাবাসটি।
বুধবার সকালে দূতাবাসের সামনে গুলশান নর্থ এভিনিউয়ের পার্শ্ববর্তী ফুটপাত থেকে ৩৩টি কংক্রিট প্লান্টার ব্লক অপসারণ করে ডিএনসিসি। দূতাবাসের পেছনের ফুটপাত এবং দক্ষিণ দিকের ফুটপাত থেকে লোহার পোলসহ বাকি প্রতিবন্ধকতাগুলো আগামী ৭ মে’র মধ্যে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে অপসারণ করবে বলে জানিয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় দূতাবাস নিজস্ব নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে দূতাবাসসংলগ্ন ফুটপাত ও রাস্তায় প্রায় স্থায়ী কংক্রিটের পিলার ও ব্লক, লোহার বেড়া ও শিকল দিয়ে আটকে রেখেছিল। এই পথ ধরে জনগণের চলাচল নিষেধ করে দিয়েছিল দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। ফলে দূতাবাসসংলগ্ন ফুটপাত ধরে পথচারীদের চলতে দিতেন না দূতাবাসের বাইরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা। তাই বাধ্য হয়ে মূল সড়ক ধরেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো সাধারণ মানুষের।
অবশেষে এই দূতাবাসগুলোর অবৈধ দখল থেকে ফুটপাত উদ্ধার করে জনগনের হাঁটার রাস্তা জনগণকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক বেশ কয়েকবার দূতাবাসগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন। সেই আলোচনায় তিনি দূতাবাস কর্তৃপক্ষকে স্বেচ্ছায় ফুটপাতের দখল ছাড়তে বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু মেয়রের সঙ্গে তাদের সেই আলোচনার কোনো ফলাফল না আসায় বাধ্য হয়ে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে আদালতের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে গত ২৮ ফেব্রয়ারি চিঠি দেয়া হয় জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইতালি) দূতাবাসকে। একই সাথে রাশিয়া, সৌদি ও পাকিস্তান দূতাবাসকেও সতর্ক করা হয়।
চিঠি পাওয়ার পর ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা তাদের দখল ছেড়ে দেয়। বাকি দূতাবাসগুলো দখল না ছাড়ায় ডিএনসির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হয়। তাদের সাথে একাধিকবার কথা বলার পর অবশেষে সমঝোতার মাধ্যমে গত ১১ এপ্রিল ইতালি ও পাকিস্তান দূতাবাস তাদের দখল ছেড়ে দেয়। সময়সীমা শেষ হওয়ার পরো দূতাবাসসংলগ্ন ফুটপাতের দখল না ছাড়াতে সেদিনই জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক ও সৌদি আরবকে দ্বিতীয় দফায় চিঠি দেয়া হয়।
গত ২১ এপ্রিল রাশিয়া ও সৌদি দূতাবাসও স্বেচ্ছায় তাদের অবৈধ দখল ছেড়ে দেয়। তবে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং তুরস্ক দূতাবাস তাদের কম্পাউন্ডের বাইরের ফুটপাতের দখল এখনো না ছাড়লেও আজকে অস্ট্রেলিয়া দূতাবাস তাদের গুলশান নর্থ এভিনিউ সংলগ্ন ফুটপাতে ছেড়ে দেয়। তবে বাকি অংশগুলোর দখল আগামী ৭ মে’র মধ্যে নিজ উদ্যোগে অপসারণ করবে বলে ডিএনসিসিকে জানায় দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। এর আগে সর্বশেষ গত ২৩ তারিখে ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাঈদ আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার, দিল্লি থেকে আগত দূতাবাসের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং দূতাবাস প্রকৌশলীসহ অন্যান্যের সাথে আলোচনা করেন।
অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করতে পরিচালিত আজকের এই অভিযানে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাঈদ আনোয়ারুল ইসলামসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকাটাইমস