g রাজশাহীর রাস্তায় নর্দমার ময়লা, ছড়াচ্ছে জীবাণু | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

সোমবার, ৩১শে জুলাই, ২০১৭ ইং ১৬ই শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীর রাস্তায় নর্দমার ময়লা, ছড়াচ্ছে জীবাণু

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ১৮, ২০১৭

---

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মহানগরীর ঝাউতলা মোড় থেকে রাজপাড়া থানার সামনে দিয়ে সরু যে সড়কটি চলে গেছে, সে সড়কে তীব্র যানজট। এ যানজটের কারণ রাস্তার পাশের নর্দমা থেকে তুলে রাখা ময়লার স্তূপ। শুধু এ সড়কেই নয়, শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে নর্দমা থেকে তোলা ময়লা, আবর্জনা ও কাদা। এতে সড়কগুলোতে লেগেই থাকছে যানজট। তবে কাদা-ময়লার কারণে শুধু রাস্তা বন্ধ হচ্ছে তা নয়, সেখান থেকে ছড়াচ্ছে রোগ-জীবাণু। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন নগরবাসী।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্জ্যের ভেতর কোলিফরম, সালমোনেলা ও সিগেলা জাতীয় ভয়ঙ্কর ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এসব জীবাণু থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষের।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাত বছর আগে ‘মাঝারি শহর সমন্বিত বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্প ফেজ-২’ এর আওতায় নগরীর নর্দমাগুলো পরিষ্কার করা হয়। এবার ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এই কাজ করা হচ্ছে। ৫৬ গ্রুপে কাজগুলো বণ্টন করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ মার্চ ৩০ গ্রুপের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে চলমান কাজ শেষ হওয়ার কথা।

সিটি করপোরেশনের থোক বরাদ্দের টাকা দিয়ে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডেই এই নর্দমা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম গ্রুপের কাজ শেষ হলে বাকি গ্রুপের কার্যাদেশ দেওয়া হবে। রাসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, বড় রাস্তার পাশের নর্দমা থেকে সরাসরি ময়লা তুলে গাড়িতে করে ভাগাড়ে নিয়ে গিয়ে ফেলা হচ্ছে। তবে ছোট রাস্তায় গাড়ি না ঢোকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রাস্তার পাশে সেগুলো শুকানোর জন্য কয়েকদিন ফেলে রাখা হচ্ছে।

কিন্তু শহর ঘুরে দেখা গেছে, কোনো স্থান থেকেই গাড়িতে করে কাদা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। ছোট-কিংবা বড় সব রাস্তার পাশেই শুকানোর জন্য ফেলে রাখা হচ্ছে দূষিত কাদা। কোনো কোনো জায়গায় কাদা শুকিয়ে ধুলা হয়ে গেলেও তা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। ফলে নগরীজুড়ে দেখা দিয়েছে যানজট। পাশাপাশি কাঁচা কাদার উৎকট দুর্গন্ধ নগরবাসীর জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নগরীর নিউমার্কেট থেকে গণকপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়কের একপাশে প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে নর্দমার ময়লা বর্জ্য তুলে রাখা হয়েছে। কাঁচা কাদা যেন রাস্তায় ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য বালুর বস্তা দিয়ে বেড়াও দেয়া হয়েছে। কাদাগুলো কয়েকদিন আগেই শুকিয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয়নি। এতে মানুষের চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দূষিত কাদা শুকিয়ে ধুলা হয়ে বাতাসে উড়ছে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে তা শরীরে প্রবেশ করছে। উড়ে বাড়ি-ঘর, দোকান-পাটেও যাচ্ছে। দোকানের খাবার-দাবারে পড়ছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন তারা। আবার দিনের পর দিন বর্জ্যর স্তূপ পড়ে থাকায় যানবাহন চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মঞ্জুর হোসেন বলেন, নর্দমার পানিতে অনেক ক্লিনিকের বর্জ্য ফেলা হয়। বাসা-বাড়ি থেকে মানুষের বর্জ্য গিয়েও মেশে নর্দমার পানিতে। এতে কোলিফরম, সালমোনেলা ও সিগেলা জাতীয় ভয়ঙ্কর সব ব্যাকটেরিয়া থাকে। কাদার সঙ্গে এসব ব্যাকটেরিয়া রাস্তায় উঠছে। এগুলো মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফয়সাল আলম বলেন, নর্দমার কাদার জীবাণুগুলো এতো ভয়ঙ্কর, কাদা শুকিয়ে ধুলো হলেও সেগুলো মরে না। তাই বলায় যায়, রাস্তার পাশে তুলে রাখা যেসব কাদা ধুলা হয়ে বাতাসে মিশছে, তার সঙ্গে ছড়াচ্ছে রোগ-জীবাণু। এর ফলে বাচ্চাদের নিউমোনিয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় স্যানাল বলেন, নির্মল বাতাসের জন্য রাজশাহী বিশ্বের সেরা শহর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু এই শহরেই দূষিত বর্জ্য অপসারণে এমন বেহাল চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য শহরে নর্দমার বর্জ্য সরাসরি গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ভাগাড়ে ফেলা হয়। এখানেও কাভার্ড ট্রাকের মাধ্যমে নর্দমার বর্জ্য অপসারণ করা উচিত।

জানতে চাইলে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক দাবি করেন, বড় রাস্তার পাশের নর্দমা থেকে বর্জ্য তুলে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এস্কেভেটরের মাধ্যমে কাদা ট্রাকে তোলা হচ্ছে। কিন্তু যেসব ছোট রাস্তায় এস্কেভেটর যাচ্ছে না, সেখানে নর্দমা থেকে বর্জ্য তুলে শুকানোর জন্য রাখা হচ্ছে। তবে তারা পর্যায়ক্রমে উন্নত প্রক্রিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

এ জাতীয় আরও খবর