বর্ষবরণে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে চারুকলায়
নিজস্ব প্রতিবেদক : দরজায় কড়া নাড়ছে ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। সমগ্র বাঙালি উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা, আবেগ, উল্লাস নিয়ে উৎসবে মেতে উঠবে বৈশাখ বরণে। বাঙালি জনগোষ্ঠী চৈত্রসংক্রান্তি, হালখাতা ও বর্ষবরণ উপলক্ষে নানা আয়োজন নিয়ে বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য উৎসবে মেতে উঠবে সারাদেশের মানুষ। নতুন এ বছরকে বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ব্যস্ত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকেরা। কাল নতুন বছর, তাই আজই শেষ হবে এর সব প্রস্তুতি।
১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য হওয়ায় এবার আরও বড় পরিসরে উদযাপন করা হচ্ছে। আর এ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও ঐক্যবদ্ধ চেতনায় সারা বিশ্বে পরিচিত হবে বাংলাদেশ এমনটাই প্রত্যাশা আয়োজকদের। এছাড়া শোভায্ত্রায় জঙ্গিবাদকে ‘না’ বলার বিষয়টিও ফুটে ওঠবে গুরুত্বের সঙ্গে।
সরেজমিনে ঢাবির চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা যায়, বাঁশ, বেত আর কাঠে তৈরি করা হয়েছে ঘোড়া, হাতি। নিখুঁত গিঁটে পাকা হচ্ছে প্রতিটি বুনট। কেউ তৈরি করছেন কাগজের মুখোশ, কেউবা আবার দিচ্ছেন রং তুলির আঁচড়। অন্যরাও ব্যস্ত কাঠামোগুলোর ওপর আবরণ লাগাতে। হাত আর সাঁড়াশি দিয়ে তৈরি হয়েছে সময়ের লোকজ আবহ, জমে উঠছে শৈল্পিক প্রতিবাদ। লক্ষ্য শোভাযাত্রাকে অন্যবারের চেয়ে আরও আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে তোলা।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ১৩টি প্রতিকৃতি তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাঘ, ঘোড়া, হাঁস, মুরগি, টেপা পুতুল, সমুদ্র বিজয়ের ময়ূরপঙ্খী, যুদ্ধাপরাধীদের কালো হাতের থাবাসহ ১২টি মোটিফের কাঠামো বানানো হচ্ছে বাঁশ ও কাঠের সাহায্যে। অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে গানটির সত্য ও সুন্দরকে নববর্ষের মূল ভাব হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে রঙ তুলির আঁচড়ে। রঙবেরঙের প্রতীক, অবয়ব আর নকশায় কল্যাণের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় চারুকলার শিল্পীদের।
সর্বজনীন এ উৎসবের অভিজ্ঞতায় বিস্ময় বিশ্ববাসীর, আর দ্বন্দ্ব সংঘাত ভুলে উৎসব পার্বনে প্রতিহত হোক অশুভ শক্তি এমনটাই মনে করেন আয়োজকরা। সব মানুষের অংশগ্রহণে সত্যিকারের আনন্দযজ্ঞে পরিণত হবে অসাম্প্রদায়িক উৎসবের এ ক্ষণ এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
চারুকলার এক শিক্ষার্থী বলেন, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা অন্যবারের তুলনায় একটু আলাদা। কারণ, এবার এ আয়োজন ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে এবার আমরা নতুন উদ্যমে কাজ করেছি। ইতোমধ্যে কাজও শেষের দিকে। আজই সব প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন বলেন, অন্যসব বারের চেয়ে এবারের শোভাযাত্রা উদযাপন ব্যতিক্রম হবে। অন্যবারের চেয়ে অনেক সুন্দর হবে বলে আশা করি। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এবারের শোভাযাত্রায় জঙ্গিবাদকে ‘না’ বলার বিষয়টি ফুটে উঠবে। নববর্ষের প্রথম দিন সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে বলেও জানান তিনি।