শুক্রবার, ১৪ই এপ্রিল, ২০১৭ ইং ১লা বৈশাখ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

মির্জাপুরের ব্যতিক্রমী এক পৌর কাউন্সিলর

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ১২, ২০১৭

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : মেম্বার কাউন্সিলর হওয়া মানেই হুমড়া-চুমড়া বনে যাওয়া। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক। কাউন্সিলর হয়েও তিনি চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার বাড়ি মির্জাপুর পৌর এলাকার বাইমহাটী গ্রামে। পিতার নাম নজিম উদ্দিন শিকদার। ৫ সন্তানের মধ্যে তিনি সকলের বড়। চা বিক্রির পাশাপাশি অনেক কষ্টে তিনি এসএসসি পাস করেন। তিনি গত ২০১৫ সালে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মির্জাপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন।

কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আগে বাবার সঙ্গে উপজেলা চত্বরে টংঘরে চা বিক্রি করে পরিবারের ভরন-পোষন করতেন। এতে মাসিক প্রায় ১৫/২০ হাজার টাকা রোজগার হতো। এলাকার ভালো ছেলে হিসেবে এলাকাবাসীর অনেকেই তাকে পৌর নির্বাচনে ওই ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য উৎসাহিত করেন। অবশেষে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি অন্যান্যদের মতো নিজকে হুমড়া-চুমড়া মনে করেন না। এজন্যই তিনি কাউন্সিলর হয়েও কখনো বাবার সঙ্গে আবার কখনো একা নিয়মিত টংঘরে বসে চা বিক্রি করেন। পাশাপাশি তার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির সমস্যা শুনেন ও সমাধানেরও চেষ্টা করেন। ভাল চা বানাতেও যেমন তার সুনাম আছে, তেমনি একজন কাউন্সিলর হিসাবেও অত্যন্ত সৎ, দক্ষ, বিনয়ী ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সুনার অক্ষুণ্ন রয়েছে।

প্রতিদিন দোকান সংলগ্ন উপজেলা প্রশাসন জামে মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে চায়ের দোকান খুলে বসেন। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকার সর্বস্তরের জনগণ তার নিয়মিত কাস্টমার। সদা হাস্যোজ্জল ও বিনয়ী এ তরুণ এ জনপ্রতিনিধি কেটলি হাতে চা বানিয়ে কাস্টমারকে যেমন খুশি করেন তেমনি সুন্দর ব্যবহার ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন সমস্যার সামাধান, সমাজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ সামাজিক ও মানবিক কাজে নিয়োজিত থাকেন।

উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লি. এর মাঠ সংগঠক আমিরুল ইসলাম আব্দুর রাজ্জাকের চায়ের দোকানের একজন নিয়মিত কাস্টমার। তাকে কাউন্সিলর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আব্দুর রাজ্জাক সত্যিকারের একজন ভালো মানুষ। নির্বাচিত হয়ে তিনি তার সম্পূর্ণ নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে সমাজসেবা করে যাচ্ছেন। ক্ষমতার কোনো দাপট নেই তার।

ইন্সিওরেন্স কোম্পানি মেটলাইফের ইউনিট ম্যানেজার আহাদ খান বলেন, আমি মির্জাপুর বাজার থেকে এতদূরে আসি কাউন্সিলরের হাতে চা খাওয়ার জন্য। তার হাতের চা সত্যিই অতুলনীয়। তিনি যেমন সদালাপী ঠিক তেমনি একজন সৎ ও বুদ্ধিমান কাউন্সিলর।

বাইমহাটী গ্রামের বাসিন্দা দলিল লেখক রকিব মিয়া, ব্যবসায়ী রঞ্জন বলেন, রাজ্জাক ভাই নির্বাচিত হয়ে মাত্র এক বৎসরের মধ্যেই অনেক জমে থাকা সমস্যার সমাধান করেছেন। আমাদের বাইমহাটী মুসলিম সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের চাওয়া ‘কবরস্থান’ তার উদ্যোগে এবার তা নির্মিত হয়েছে। তিনি যদি এভাবে কাজ করে যান একদিন বাইমহাটী গ্রামটি আদর্শ গ্রামে পরিণত হবে।

কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমি মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছি। আমি সর্বদা চেষ্টা করি সৎভাবে উপার্জনের। পৌর কাউন্সিলর হিসেবে আমি মাসে ৪ হাজার টাকা ভাতা পাই। আর চা বিক্রি করে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হই। এদিয়েই আমার স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতা ও ভাইদের নিয়ে কোনো রকমে দিনাতিপাত করি। এতেই আমি সন্তুষ্ট। সৎভাবে উপার্জন করি আর মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হিসেবে আমার এটা নৈতিক দায়িত্ব। কাজেই আমি একজন পৌর কাউন্সিলর হিসেবে এলাকাবাসীর সেবায় সচেষ্ট থাকি। যতদিন বাঁচি এ আদর্শকে বুকে লালন করেই বাঁচব। এটাই আমার ব্রত।

এ জাতীয় আরও খবর