রাউধার মৃত্যুতে সহপাঠীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফের মৃত্যুর ঘটনায় তার সহপাঠীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ বাদী হয়ে রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার একমাত্র আসামি রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদ (২১)। তার বাড়ি কাশ্মীরে। সিরাত মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করেন।
রাউধাও একই কলেজের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাউধাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
রাউধার বাবা মোহাম্মদ আতিফের আইনজীবী কামরুল মনির জানান, আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করার জন্য নগরীর শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার দুপুরে বিচারক এই আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছিল, রাউধা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ওই দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে শাহমখদুম থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।
একজন উঠতি মডেল হিসেবে রাউধা আতিফের ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি। ভারতের বিখ্যাত ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ সাময়িকীর প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছিলেন ২১ বছর বয়সি মালদ্বীপের ‘নীলনয়না’ এই মডেল। তার মৃত্যুর পর লাশ দেখতে রাজশাহী আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং মা-বাবাসহ ৮-৯ জন নিকটাত্মীয়।
এরপর গত ৩১ মার্চ মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছেন উল্লেখ করে ওই দিনই বোর্ড ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহীতে রাউধার দাফন সম্পন্ন হয়। এরপর গত বুধবার রাউধার মা আমিনাথ মুহাররিমাথ ও ছোট ভাইসহ চারজন দেশে ফিরে যান। তবে বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফসহ বাকিরা এখনও আছেন রাজশাহীতে।
রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলা হলেও বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ বলছেন, তিনি একজন চিকিৎসক এবং চিকিৎসকের চোখেই তার মেয়ের লাশ দেখেছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি রাউধার গলায় শ্বাসরোধ করার দাগও দেখেছেন।
এদিকে রাউধার মৃত্যুর তদন্ত করতে গত ৩ এপ্রিল মালদ্বীপের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রিয়াজ ও জ্যেষ্ঠ পরিদর্শক আলী আহমেদ রাজশাহী আসেন। তারা রাউধার লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক, রাজশাহী পুলিশ, রাউধার সহপাঠী, শিক্ষক ও হোস্টেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। পরে গত শুক্রবার তারা দেশে ফেরেন। এরপরই আজ রাউধার বাবা আদালতে এই মামলা দায়ের করলেন।
রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, আদালতে হত্যা মামলা হয়েছে। তবে কোনো কাগজপত্র এখনো আমার কাছে আসেনি।’
নগরীর শাহমখদুম থানার ওসি জিল্লুর রহমানও জানিয়েছেন, তিনিও শুনেছেন-আদালতে হত্যা মামলা হয়েছে। আদালত থেকে কাগজপত্র থানায় যাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।