যুদ্ধ করেছি, গোলামী করার জন্য নয় : খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক : খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, কারো গোলামী করার জন্য নয়, কারো শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। আমরা যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছে, এতো লোক মৃত্যুবরণ করেছি তাদের আত্মা শান্তি পাচ্ছে না এদের এই গোলামীর শৃঙ্খলের জন্য। আমরা শৃঙ্খলিত হবো না, হতে দেবো না।”
খালেদা জিয়া সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য বর্তমান সরকার ‘দেশ বিক্রি’ করে দিয়েছে ।
রোববার রাতে গুলশানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ দেশে বর্তমানে সরকার যাদেরকে বলা হয়,তারা আসলে জনগনের সরকার নয়, তারা জনগনের দ্বারা নির্বাচিত নয়। ভবিষ্যতেও তারা একই পরিকল্পনা করছে কীভাবে আবার ক্ষমতায় আসবে। আজকে দেশ বিক্রি করে দিয়েছে। সেজন্য পাঁচ বছরের জন্য এটা একটা চুক্তি করেছে। কী পাঁচ বছর তাকে থাকতে দিতে হবে। এই চুক্তি তো তিনি সেজন্য করলেন।”
‘‘ ওই পাঁচ বছর পরে উনারা বোধহয় কাগজে কলমে দেশটাকে লিখে দিয়ে মনে হয় বিদায় নেবে আর কী?”
কীভাবে আগামী পাঁচ বছর থাকবে প্রশ্ন করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ কীভাবে তারা পাঁচ বছর থাকবে? ভোট হবে না। এই চুরি-চামারি করে, নানা রকম পুলিশকে দিয়ে, ছাত্রলীগ-গুন্ডালীগ তাদের সবার হাতে হাতে তো অস্ত্র আছেই, তাদেরকে নিয়ে সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন যারা আছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে এই নির্বাচনে জিতে। তারা নির্বাচনে জিতে না ওদেরকে জিতানো হয়, ওই নিয়ে তারা সন্তুষ্টি।”
জঙ্গির প্রসঙ্গটি টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ আজকে এটা শুধু এদের(আওয়ামী লীগ) নয়, আরো অনেকের মহাপরিকল্পনা যে বাংলাদেশের মানুষকে ঠুটো বানিয়ে রাখতে হবে, মূর্খ, অকেজো, দূর্বল বানিয়ে রাখতে হবে। সেজন্য আপনাদের মতো শিক্ষিত বিবেকবানদের জাগতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। না হলে এর থেকে রেহাই পাবো না।”
নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হায়দ্রাবাদ হাউজে শনিবার দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরমধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে।
এগুলো হলো- ‘বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপরেখা’ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, ‘কৌশলগত ও ব্যবহারিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে’ ঢাকার মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের ওয়েলিংটনে (নিলগিরি) ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কৌশলগত শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে’ ঢাকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ও নয়া দিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘নিরপেক্ষ’ নন অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ তিনি নিরপেক্ষ নন, তার কাছ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। ‘‘ তিনি (সিইসি) আগের প্রধান নির্বাচন কমিশনার পথই অনুসরণ করে চলেছেন। এর বাইরে কিন্তু তিনি যাচ্ছে না।” সর্বশেষ কুমিল্লায় নির্বাচন হলো, সেখানে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। তিনি নিরপেক্ষ হলে কুমিল্লায় আমরা ৫০ হাজার ভোটে জিততাম, সেখানে কেটে কেটে ক্ষমতাসীনরা ব্যবধান কমিয়েছে।”
রাত সাড়ে ৯টায় গুলশানের কার্যালয়ে সদ্য সমাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও পূননির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনসহ বিজয়ী কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ চেয়ারপারসনের হাতে পুস্পস্তবক তুলে দেন।
গত ২২ ও ২৩ মার্চে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল সভাপতি-সম্পাদকসহ ৮টি পদে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদ প্যানেল সহ-সভাপতি, সহ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ ৬টি পদ পায়।
ক্ষমতাসীনদের সাথে জামায়াতের সাথে সখ্যতা প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ এরশাদের সাথে আতাঁত করে আওয়ামী লীগ ’৮৬ সালে নির্বাচনে গিয়েছিলো। আমরা যাইনি। তারা(আওয়ামী লীগ) তখন সঙ্গি খুঁজে পায় না। একলা গেলে খারাপ দেখায়, সেজন্য জামায়াতে ইসলামকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে গেলো।এখন জামায়াতে ইসলাম রাজাকার খারাপ। তখন কিন্তু নিজামী সাহেবের( মতিউর রহমান নিজামী) সাথে মিটিং-টিটিংয়ের ফটো-টোটোগুলো আছে, মওদুদ সাহেবেও সাক্ষী আছে।”
এ সময়ে আইনজীবীদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়। খালেদা জিয়ার ঠিক পেছনের আসনে বসা মওদুদ আহমেদ দলের চেয়ারপারসনের কাছে এসে স্বল্প কন্ঠে বললেন, ‘‘ ম্যাডাম আমি তো গিয়েছিলাম।ছবি আছে।”
খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ হয়ত আপনি(মওদুদ আহমদ) মাইন্ড সেট করে রেখেছিলেন, বিএনপিতে আসবেন। একটা রেকর্ড রেখেছিলেন। ওই সব ছবিতে তারা কিভাবে মিটিং করছেন, কেউ সালাম করছেন, কেউ ঝুঁকে সালাম করছেন, নানা রকমের অঙ্গভঙ্গি ছবি আছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সখ্যতা কাদের বেশি ছিলো? তাদের ছিলো। এখনো আছে, এখনো বন্ধুত্ব ঠিকই আছে, সে যায়নি। বিএনপিকে হারানো জন্য বা বিএনপিকে ইয়ে করার জন্য তারা সময়মত ব্যবহার করে।”
২০০৮ সালে নির্বাচনে ১/১১ সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে নির্বাচনেও অংশ নেয়ার ব্যাপারে তার আপত্তি থাকার কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার ও নেতাদের মুক্তির শর্তে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। নির্বাচনে যাওয়াটার ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যারা ছিলো তারা খুব বেশি আগ্রহী ছিলো, নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে। তারা বললো, নির্বাচনে যেতেই হবে, নির্বাচনে না গেলে ক্ষতি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন তাদের কথা শুনে আমরা নির্বাচনে গেলাম।” ‘‘ সেই নির্বাচনে যে ফলাফল বিএনপির এটা কখনোই হতে পারে না। বিএনপিকে হিসাব করে আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে এতো সিট দেবে।”
এই সরকারকে বিদায় করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আহবানও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, ‘‘ ২০০৮ সালে এরা ক্ষমতায় এসেছে। আজকে ১০ বছর হতে চলেছে। দেশের কী অবস্থা, অর্থনীতির কী অবস্থা। ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দিয়েছে। কাজেই দেশ একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছে। সেজন্য আমরা মনে করি, বাইরে যারা আছেন, দেশকে ভালোবাসেন বুদ্ধিজীবীসহ অন্যরা, হকাররা, আসুন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করি, দেশটাকে ঐক্যবদ্ধভাবে বাঁচাই। দেশটা বাঁচলে আপনারা বাঁচবেন, সন্মানের সাথে বাঁচবেন।”
ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এজে মোহাম্মদ আলী, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা বারের মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, মহসিন মিয়া, বোরহান উদ্দিন প্রমূখ আইনজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক আজ
বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, আজ সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাত সাড়ে আটটায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।