সোমবার, ১০ই এপ্রিল, ২০১৭ ইং ২৭শে চৈত্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

তিস্তার পানি বণ্টন: সংসদ নির্বাচনের আগে ভালো কিছুর প্রত্যাশা

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ১০, ২০১৭

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি একটি আলোচিত বিষয়। চার দিনের এ সফরে তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে না—এটা এখন নিশ্চিত হওয়া গেছে। বহুপ্রত্যাশিত এ চুক্তির নানা বিষয় নিয়ে ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় রোববার প্রকাশিত শুভজিৎ বাগচীর প্রতিবেদনের অনুবাদ।

হিমালয় থেকে উৎপত্তি হয়ে তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে পড়েছে। এ নদীর পানির ভাগাভাগির বিষয়টি সম্ভবত প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম দুই দেশ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এখন সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়। সিকিমের প্লাবন ভূমির প্রায় পুরোটা এবং বাংলাদেশের ২ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রবাহিত হয়েছে এ নদী। এ নদীর ওপর নির্ভর করে লাখ লাখ মানুষের জীবনজীবিকা।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জন্যও তিস্তার গুরুত্ব যথেষ্ট। এ রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের আধা ডজন এলাকার প্রাণ এ নদী।
১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি চুক্তির মতো বাংলাদেশ তিস্তার পানির ‘ন্যায্য’ হিস্যা চায় ভারতের কাছে। তবে এ নদীর ন্যায্য ভাগাভাগি এখনো হয়নি। তিস্তার পানি চুক্তি না করতে পারার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশটির ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।

১৯৮৩ সালে তিস্তার পানির প্রায় সমবণ্টন নিয়ে প্রথম প্রস্তাব ওঠে। তবে এরপর আর ওই প্রস্তাবের কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আবার এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দুই দেশের যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে’ একটি ‘[খসড়া] চুক্তি’ তৈরির জন্য দুই দেশের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় দুই দেশের ঘোষণা ছিল আরও উৎসাহব্যঞ্জক। দুই দেশের যৌথ ঘোষণায় সে সময় ‘যত দ্রুত সম্ভব সব পক্ষকে একত্র করে একটি চুক্তিতে উপনীত’ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত হয়।
এখন ভারত ও বাংলাদেশ দুটি দেশই সাধারণ নির্বাচনের দিন গুনছে। তিস্তা চুক্তিটি এখনো সম্পাদিত হলো না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ চুক্তিতে সম্মত নন এখনো। তাঁর আপত্তি ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়নের’ সঙ্গে সম্পর্কিত!

ভারতের মুম্বাইভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ফোরসাইট গ্রুপ বলছে, তিস্তা অববাহিকায় অনেক হিমবাহ গলে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তার গড় প্রবাহ ছয় হাজার কোটি কিউবিক মিটার। বর্ষা মৌসুমে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এ পানির বেশির ভাগটা প্রবাহিত হয়। তবে এ নদীর প্রবাহ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে শুকনো মৌসুমে, অক্টোবর থেকে এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত। এ সময় তিস্তায় গড় প্রবাহ থাকে ৫০ কোটি মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি। আর এর অনিবার্য পরিণতি হলো বর্ষা মৌসুমে বন্যা আর শুকনো মৌসুমে খরা।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ যে চুক্তির বিরোধিতা করে, সেখানে থাকা শর্ত অনুযায়ী, শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশ পেত ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভারত পেত ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে সেই চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি।

২০০১ থেকে ২০০৫ সালে বিএনপি বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকার সময় উত্তর-পূর্ব ভারতে সশস্ত্র আন্দোলন প্রকট হয়ে ওঠে। সে সময় বাংলাদেশ ভারতবিরোধী তৎপরতায় সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের সব বৈঠক কোনোরূপ সমঝোতা ছাড়াই শেষ হতো। আর উত্তর-পূর্ব অংশের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের সামরিক বাজেট বাড়তেই থাকে। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হওয়ার পর সে দেশে থাকা উত্তর-পূর্ব ভারতের সশস্ত্র দলগুলোর বিরুদ্ধে তৎপর হয় বাংলাদেশ। এসব বিদ্রোহী দলের কিছু নেতাকে ভারতের হাতেও তুলে দেয় তারা। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এটা অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক বিষয় ছিল। দুই দেশের সম্পর্ক নানা পর্যায়েই উন্নত হতে থাকে। তবে, আজকের এই ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এক জটিল সময়ের মুখে। দুই বছর পরে এক কঠিন নির্বাচনের মুখে পড়তে হবে হাসিনার সরকারকে। সেই নির্বাচনে পানির ভাগাভাগির এ বিষয়টি হবে অন্যতম নির্বাচনী ইস্যু। দিল্লিতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারিক করিম বলছিলেন, দুই দেশের মধ্যে সব চুক্তিও যদি বাস্তবায়ন হয়, বাংলাদেশের অনেক মানুষ একটি প্রশ্নই করবে, তিস্তা চুক্তি হলো না কেন? আওয়ামী লীগকে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত মনে করেন, বিশালকায় কিছু জলাধার নির্মাণ করে শুকনো মৌসুমে ব্যবহারের জন্য সেখানে বর্ষার পানি ধরে রাখা যায়। এসব জলাধার নির্মাণ করতে হবে ভারতকে। কারণ, সে দেশে পর্বত থেকে নেমে আসা পানির উৎস আছে; যেটি বাংলাদেশের নেই।

তিস্তার পানি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এ নিয়ে চুক্তি করতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এখন দিল্লিতে সব পক্ষের প্রধানেরা একত্র হয়েছেন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের আগে একটি ভালো ফল আসবে, এ প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।