বুধবার, ১২ই এপ্রিল, ২০১৭ ইং ২৯শে চৈত্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

আইপিইউ সম্মেলনে সফল বাংলাদেশ, নিরাপত্তা নিয়ে খুশি বিদেশিরা

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ৯, ২০১৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলন আয়োজনে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসলেও এই সম্মেলনে আগত বিদেশিরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয়, এদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দারুণ প্রশংসাও করেন তারা।

অসমতা নিরসন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে পারস্পরিক সহযোগিতার আশ্বাসের মধ্য দিয়ে গত ৫ এপ্রিল বুধবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) শেষ হয় এ সম্মেলন। এর আগে গত ১ এপ্রিল শনিবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সম্মেলনের উদ্ভোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্মেলনে বিশ্বের ১৩২টি দেশের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় প্রতিনিধিরা অংশ নেয়। দুর্বল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সবল দেশের হস্তক্ষেপ বন্ধে প্রথমবারের মতো একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় এই সম্মেলনে। এছাড়া তীব্র খরায় ইয়েমেন, সাউথ সুদান, সোমালিয়া ও কেনিয়ায় দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে গুলশান, শোলাকিয়ায় হামলাসহ একাধিক বিদেশিকে হত্যার কারণে অনেক দেশই বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ তোলে। এছাড়া কিছুদিন আগেও বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে রাজধানী ঢাকাতে। এ কারণে বড় এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনে নিরাপত্তার বিষয়টিই বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এ চ্যলেঞ্জ মোকাবেলায় বেশ ভালভাবেই সফল হয়েছে বাংলাদেশ।

সম্মেলন চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। কয়েকস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়েই মূল সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয় আগতদেরকে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের রাস্তায় যান চলাচল সীমিত রাখা হয়। মোতায়েন ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য। মূল সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবেশ পথে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে আগতদেরকে তল্লাশি করা হয়। বিআইসিসি ভবনের প্রবেশ মুখেই বসানো হয় আর্চওয়ে। এছাড়া ব্যাগ তল্লাশির জন্যও ছিল মেটাল ডিটেক্টর। কয়েকস্তরের তল্লাশি বাধা পেরিয়েই ঢুকতে হয় মূল সম্মেলন কেন্দ্রস্থলে।

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় খুশি আগত বিদেশিরাও। সম্মেলন চলাকালীন বিভিন্ন দেশের একাধিক সংসদ সদস্য কথা বলেন বিডি২৪লাইভের সঙ্গে। তারা বাংলাদেশ সফর নিরাপদেই উপভোগ করেছেন বলে বিডি২৪লাইভকে জানান।

সুইডেনের সংসদ সদস্য তেরেস লিন্ডবার্গ বিডি২৪লাইভকে বলেন, বাংলাদেশ অনেক সুন্দর দেশ। এখানে এসে অনেক ঘুরব, কেনাকাটা করব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু আমাদের চলাফেরায় অনেক রেস্ট্রিকশন (সীমাবদ্ধতা) আছে। তাই ঘুরাঘুরি আর কেনাকাটা করা হচ্ছে না। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভাল।

এসময় বাংলাদেশের মানুষেরও প্রশংসা করেন তেরেস লিন্ডবার্গ। তিনি বলেন, এদেশের মানুষ অনেক ফ্রেন্ডলি (বন্ধুত্বপুর্ণ)। উরুগুয়ের সংসদ সদস্য লুই এলবার্টো হেবার বলেন, এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালই দেখছি। বাংলাদেশের জনগণ অনেক বন্ধুত্বপুর্ণ। এখানকার খাবারেরও অনেক সুনাম রয়েছে।

শুধু সংসদ সদস্য নয়, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিদেশি সাংবাদিকরাও বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন। দুবাইয়ের একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সাংবাদিক আল মাহা বিডি২৪লাইভকে বলেন, আমি প্রথমবারের মত বাংলাদেশে এসেছি। এখানে আমি অনেক উপভোগ করছি। এ দেশ অনেক সুন্দর। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অনেক ভাল।

নিরাপত্তা ইস্যু ছাড়াও অনেক বিদেশি সন্ত্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। আর সন্ত্রাস মোকাবেলায় এটা সবার প্রয়োজন।

ফ্রান্সের এমপি পোযো ডি বোরগো বিডি২৪লাইভকে বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সবার জন্য শিক্ষা। সন্ত্রাস জাতিগত সমস্যা নয়, এটা বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এটা মোকাবেলায় ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্র সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।

সুইজারল্যান্ডের শারীরিক প্রতিবন্ধী এমপি ক্রিসশান লাহ’র বলেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রাণশক্তিতে ভরপুর। আমি দেশে থাকতে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের কথা শুনেছি। শুনে ভয়ও পেয়েছিলাম। কিন্তু এসে সেই ভুল ভেঙে গেছে। নিজেকে কখনও অনিরাপদ মনে হয়নি। আমি বার বার এ দেশে আসতে চাই।

সম্মেলনের বিষয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বিডি২৪লাইভকে বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া এত বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রমান হয়, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে।

সম্মেলনের সভাপতি ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ) সভাপতি শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাহসী ও গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পেরেছেন বলেই এতো বড় একটি অনুষ্ঠানের সফল আয়োজন সম্ভব হয়েছে। গণতন্ত্রে সবাইকে এক সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। এবারের সম্মেলনে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলে আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, সম্মেলন কেন্দ্রের পাশেই আইপিইউ মেলার আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে পেরেছি। এটাও আইপিইউ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের একটি প্রাপ্তি।

আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহত এ আয়োজন সুষ্ঠুভাবে ও সফলভাবে করতে পারায় প্রশংসিত হয়েছি আমরা। বাংলাদেশও পারে- এটাই বড় অর্জন আমাদের।

তিনি আরও বলেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। দেশ যে উন্নয়নের পথে এগিয়েছে, তা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। বাস্তবে এসে বিশ্ব প্রতিনিধিরা দেখে গেলেন, মৌলিখ পরিবর্তন হয়েছে।