জঙ্গি বিরোধী অভিযান: ১৬ দিনে নিহত ২৯
নিউজ ডেস্ক : গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক সাঁড়াশি অভিযানে অনেকটাই চুপসে যায় জঙ্গিদের তৎপরতা। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির পর এ বছরের মার্চ জুড়েই এটি ফের বেড়ে যায়।
মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত নানা ঘটনার মাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার চেষ্টা করে। বেশ কয়েকটি জেলায় নতুন নতুন জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে প্রাণ হারান ৩ পুলিশ সদস্য, ৪ জন সাধারণ মানুষ এবং ২২ জঙ্গি।
১৬ মার্চ চট্টগ্রামের প্রেমতলার ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’ এ আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হন। এছাড়া ভেতরে বোমায় ক্ষত বিক্ষত এক শিশুর লাশ পাওয়া যায়।
পরদিন ১৭ মার্চ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের সময় রাজধানীর উত্তরার আশকোনায় র্যাবের অস্থায়ী ব্যারাকে ঢুকে শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণে নিহত হয় সন্দেহভাজন এক জঙ্গি।
১৮ মার্চ মোটরসাইকেল আরোহী এক ব্যক্তি ভোর সাড়ে ৪টার দিকে খিলগাঁওয়ের ‘শেখের জায়গা’ মোড়ের কাছে চেক পোস্টে ঢুকে পড়ার পর র্যাব সদস্যদের গুলিতে নিহত হন এক ব্যক্তি।
২৪ মার্চ দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমা শিববাড়ির ‘আতিয়া মহলে’। আতিয়া মহলে চুড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল ঠিক তখনই ঢাকায় বিমানবন্দরের গোল চত্বরের কাছে পুলিশ চেকপোস্টের সামনে আরেকটি আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। যেখানে হামলাকারী নিহত হয়।
পরে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার সকালে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মুমেনের নেতৃত্বে অপারেশন ‘টোয়ালাইট’ শুরু হয়। ৭৮ জিম্মিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওই রাতেই আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর অভিযান চলার সময় সেখান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে গোটাটিকর মাদ্রাসার সামনে দুই দফা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন নিহত হন।
নিহতরা হলেন- জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম, পুলিশ সদস্য চোধুরী মুহাম্মদ আবু কায়সার দীপু, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের উপ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফাহিম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াহিদুল ইসলাম অপু, শহীদুল ইসলাম ও আব্দুল কাদের।
ওই হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর টানা ছয়দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ।
সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে আতিয়া মহলের ভেতরে ৪ জঙ্গি নিহত হয়, যাদের দুইজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মারা যায়।
‘টোয়ালাইট’ এর সমাপ্তি ঘোষণার পরই বুধবার (২৯ মার্চ) মৌলভীবাজারের নাসিরপুর ও বড়হাটে আরো দুইটি জঙ্গি আস্তানা এবং কুমিল্লার কোটবাড়িতে আরো একটি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় সোয়াট সদস্যদের অভিযান ‘অপারেশন হিটব্যাক’ এ ৭ জঙ্গির লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ জানায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা সবাই আত্মহত্যা করেছে।
সর্বশেষ ১ এপ্রিল মৌলভীবাজার শহরের বড়হাটে চারদিন ধরে ঘিরে রাখা জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে এক নারীসহ তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে।