ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সোয়া দুই কোটি টাকা পানিতে
নিজস্ব প্রতিবেদক :অনেক আশা নিয়ে রাজধানীজুড়ে সৌরবাতি স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হলেও শুরুতেই ব্যর্থ হয়েছে সিটি করপোরেশন। পরীক্ষামূলকভাবে কাকরাইল থেকে আরামবাগ সড়কে এ বাতি স্থাপন করলেও পর্যাপ্ত আলো পায়নি নগরবাসী। সরকারের সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল অ্যানার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসআরইডিএ বা শ্রিডা) বিষয়টি পর্যবেক্ষণের পর এ সৌরবাতি ঢাকা শহরের জন্য উপযুক্ত নয় বলে জানিয়েছে। ফলে এ ব্যর্থ প্রকল্পে ব্যয় হওয়া প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা অপচয় হয়েছে বলে মনে করছেন নগর ভবনের কর্মকর্তারা।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অধীনে ২ কোটি ২৪ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয়ে রাজধানীতে নটর ডেম কলেজ থেকে কাকরাইল মসজিদ পর্যন্ত সড়কে সৌরবাতি স্থাপনের জন্য দরপত্র ডাকে ঢাকা সিটি করপোরেশন। পরবর্তীতে ঢাকা সিটি দুই ভাগ হলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০১২ সালের জুন-জুলাই মাসে সড়ক বিভাজকের ৬১টি খুঁটিতে দু’টি করে মোট ১২২টি সৌরবাতি সংযোজন করে; কিন্তু বাতিগুলো থেকে কাক্সিক্ষত আলো কখনোই পাওয়া যায়নি।
সৌরবাতি স্থাপনের সময় আশার বাণী শুনিয়ে বলা হয়েছিল, রাজপথে সৌরবাতি ব্যবহার করলে নয় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, যা দিয়ে একটি গোটা জেলার বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হবে। খুঁটির ওপর বসানো সোলার প্যানেল সারা দিন সূর্য থেকে শক্তি সঞ্চয় করবে। সন্ধ্যা হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিগুলো জ্বলে উঠবে। আবার ভোর হলেই তা নিভে যাবে। উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেও সরবরাহ করা যাবে।
সৌরবাতি প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় আরো বলা হয়েছিল রাতে ১২ ঘণ্টা আলো পেতে দুই ঘণ্টার রোদই হবে যথেষ্ট। সারা দিন রোদ থাকলে বাতিগুলো টানা তিন দিন পর্যন্ত আলো দেবে। আর পুরো রাজপথে সৌরবাতি লাগানো গেলে সিটি করপোরেশনের ২৩ হাজার সড়ক বাতির বিপরীতে মাসিক বিদ্যুৎ বিলের অন্তত ২০ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। একটি সোলার প্যানেলের গড় আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিল পাঁচ বছর। কথা ছিল এতে সফলতা এলে পরবর্তীতে বাংলামোটর, গুলশান, হাতিরঝিল, তেজগাঁও এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু প্রথম ধাপের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর আশা পূরণ তো দূরের কথা, কোনো হিসাবই মেলাতে পারেনি ডিএসসিসি। সৌরবাতিগুলো আলো দিয়েছে কুপির মতো! প্রথম থেকেই সেগুলো টিমটিম করে জ্বলছে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, রাজপথে ১৫০ ওয়াটের বাতির প্রয়োজন হলেও সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল ৭৫ ওয়াটের। কারণ, প্রকল্পে যে সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে ৯০ ওয়াটের বাতিও জ্বলবে না।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও সোলার বেজড এলইডি টাইপ স্ট্রিট লাইটিং প্রকল্পের পরিচালক জাফর আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, সৌরবাতিগুলো স্থাপনের উদ্যোগ সফল হয়নি। আশপাশের উঁচু ভবনের কারণে সোলার প্যানেলের ওপর পর্যাপ্ত আলো পড়ে না। তা ছাড়া ধুলার স্তর জমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল অ্যানার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসআরইডিএ বা শ্রিডা) প্রকল্পের বাস্তবতা দেখতে একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি পর্যবেক্ষণ শেষে সৌরবাতির বিষয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ঢাকা শহরে সৌরবাতি উপযুক্ত নয়। তারা এটি ঢাকার বাইরে খোলামেলা পরিবেশে স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে।
জাফর আহমেদ আরো বলেন, সৌরবাতি কাজ না করায় মেয়র সাঈদ খোকন সেখানে লাইট ইমিটিং ডায়োড (এলইডি) বাতি স্থাপনার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু এতে সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল আপত্তি জানিয়েছেন। এ কারণে বর্তমানে সৌরবাতিগুলোই রক্ষণাবেক্ষণ করে চালিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।