বুধবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০১৭ ইং ১৩ই বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় দুই ব্যাংক চেয়ারম্যান খালাস

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ২৩, ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রিমিয়ার সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেংকারি মামলায় বহুল আলোচিত দুই ব্যাংক চেয়ারম্যানকে খালাস দিয়েছে শেয়ার বাজার সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। রোববার বিকাল ৩টায় রাজধানীর হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুন্যালের বিচারক মো. আকবর আলী শেখ।

খালাসপ্রাপ্ত দুই চেয়ারম্যান হলেন ব্যাংক এশিয়া ও র‌্যাংগস গ্রুপের চেয়ারম্যান এ রউফ চৌধুরী এবং ওয়ান ব্যাংক ও এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ এইচ চৌধুরী। তারা দু’জনই ১৯৯৬ সালে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার আসামি ছিলেন। আর এর মাধ্যমে ২১ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হয়।

তবে এ মামলায় দুই চেয়ারম্যান ছাড়া আরও তিন আসামি রয়েছেন। এরমধ্যে ১ নম্বর অভিযুক্ত কোম্পানি অর্থাৎ প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ। আর অন্য দুই আসামি হলেন- কোম্পানির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান এবং পরিচালক অনুপ জায়গীরদার। এ দু’জন রিট করলে মামলার ওপর স্থগিতাদেশ দেন উচ্চ আদালত। মামলার বাদী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা খান এবং আসামিপক্ষে মো. বোরহান উদ্দিন।

জানতে চাইলে সাঈদ এইচ চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় লুটপাট হয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু আমি কোনোভাবেই এর সঙ্গে জড়িত নই। কারণ ঘটনার সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম। আমার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কয়েকজন মিলে লুটপাট করেছে। আর কোম্পানির মালিক হিসেবে আমার ওপর দায় এসেছে।’

মামলার এজহার থেকে জানা গেছে, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময় মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করা হয়। এ সময় ১ নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময় ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে- যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড অনুসারে আসামিরা এসিআইর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করে। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি। এরমধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০টি। এসব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করত।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ওই বছর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে আসামিদের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়। আর প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মামলা করে বিএসইসি। মামলার সাক্ষীরা হলেন- তদন্ত কমিটির প্রধান প্রফেসর আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর জহুরুল হক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রুহুল খালেদ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন, বিএসইসির সহকারী পরিচালক মুন্সী এনামুল হক এবং বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন আহমেদ।

জানা গেছে, এ মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই অনুপস্থিত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। ২০১৫ সালে রায়ের দিনও ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তবে, ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সাঈদ এইচ চৌধুরী ও ৮ সেপ্টেম্বর অপর ৩ আসামি আত্মসমর্পণ করলে আদালতে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর সাক্ষীদের পুনরায় জেরা শুরু হয়। পরে মামলার ভিত্তি চ্যালেঞ্জ করে দুই আসামি অনুপ জায়গীরদার এবং মশিউর রহমান হাইকোর্টের গেলে গত বছরের ১৭ এপ্রিল মামলা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। ওই মেয়াদ শেষে আসামিরা সময়ের আবেদন করলে স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। এ কারণে আগামী ৩ মে মামলার স্বাভাবিক শুনানি শুরু হবে। তবে, অন্যতম আসামি এ রউফ চৌধুরী মামলা চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ৫ আসামির মধ্যে মাত্র দুই আসামি হাইকোর্টে গেছেন। ফলে অন্যদের মামলা চালিয়ে যেতে আপত্তি নেই। এরপর বাকিদের মামলার শুনানি শুরু হয়। যুগান্তর