মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ শুরু বুধবার
নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামীকাল বুধবার ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৭’ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমি চত্বরে এ গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন। একই সময় তিনি চার দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন-২০১৭’ উদ্বোধন করবেন। এছাড়া ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মীর মশাররফ হোসেনের অমর সৃষ্টি ‘বিষাদ সিন্ধু’র অনুবাদ ‘ওসেন অব সরো’ এবং জার্মানি থেকে প্রকাশিত ‘হানড্রেড পোয়েমস ফ্রম বাংলাদেশ’ তুলে দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চীনের প্রখ্যাত গবেষক ও রবীন্দ্র অনুবাদক ডং ইউ চেন, অস্ট্রিয়ার মেনফ্রেড কোবো, পুয়ের্তোরিকোর লুস মারিয়া লোপেজ ও ভারতের চিন্ময় গুহ। ডং ইউ চেন বাংলায় তার বক্তৃতা প্রদান করবেন।
সোমবার বিকেলে একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। এতে একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বক্তব্য দেন। আর লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন একাডেমির পরিচালক ও গ্রন্থমেলা আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। এছাড়া একাডেমির সচিব আলতাফ হোসেন এবং গ্রন্থমেলা চত্বরের সাজসজ্জায় নিয়োজিত নিরাপদ মিডিয়া কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যান নায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চন এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির নির্বাহী সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
একাডেমির মহাপরিচালক জানান, বাংলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির মূলচত্বর ও একাডেমি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় চার লাখ স্কয়ার ফুট জায়গা নিয়ে এখন গ্রন্থমেলার শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। গ্রন্থমেলার জন্য উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে সজ্জিত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
শামসুজ্জামান খান বলেন, এবার একাডেমি চত্বরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪৯টি ইউনিটসহ মোট ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে মোট ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে একাডেমির প্যাভিলিয়ন রয়েছে ২টি। এছাড়া ১’শ লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু কর্ণারকে এবারও বেশ আকর্ষণীয় করে সাজানো হচ্ছে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, শিশুদের এ চত্বরটিতে প্রবেশের জন্য আলাদা গেইট থাকবে। ৬০ ইউনিট নিয়ে গড়া পুরো চত্বরটি নানা রঙ বেরঙের লাইটিংয়ে সাজানো হবে। থাকবে শিশুদের জন্য খেলার সামগ্রি।
মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শুক্র ও শনিবার থাকবে ‘শিশু প্রহর’। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থমেলা চত্বরের পরিবেশ নান্দনিক ও মনমুগ্ধকর করতে ফোয়ারা, চত্বর জুড়ে বিভিন্ন স্থানে ফুলের চারা রোপণ, স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল ও আড্ডার জন্য উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছে।
গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ১ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে দেশের ৬ জন বিশিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবীকে ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন লেখক সম্মাননা ২০১৭’ প্রদান করা হবে। এ সম্মাননা পাচ্ছেন- জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূর উল ইসলাম, রবীন্দ্র-গবেষক আহমদ রফিক, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামন।
মহাপরিচালক বলেন, সম্মেলনে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, চীন, রাশিয়া, পুয়ের্তোরিকো, সুইডেন ও ভারতসহ ৭টি দেশের মোট ২৭ জন কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী-প্রাবন্ধিক অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনে ১৬টি অধিবেশন রয়েছে।
গ্রন্থমেলার বই বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০% এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন, তাদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে।
মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করবে উল্লেখ করে শামসুজ্জামান খান জানান, মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলও মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করবে। এছাড়া গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে বলেও তিনি জানান।
গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশ পথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের আটটি পথ থাকবে উল্লেখ করে তিনি জানান, এবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে একটি নতুন সুপ্রশস্ত গেট নির্মাণ করা হয়েছে।
গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যা ব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সমূহের নিরাপত্তাকর্মীরা।
নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে আড়াইশত ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেলা প্রাঙ্গণ ও পাশ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার সার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মেলায় এবার বেশ কিছু নতুন সংযোজনের কথা উল্লেখ করে শামসুজ্জামান খান বলেন, এবার অধিকাংশ স্টল পূর্ব থেকে পশ্চিমে নিয়ে আসা হয়েছে। টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের মূল প্রবেশ পথে এলইডি মনিটর স্থাপন করা হয়েছে। এ থেকে মেলা সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক মানুষের চলাচলের জন্য ২০টি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবারই প্রথম পাঠক-দর্শনার্থীদের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি উভয় চত্বরে পর্যটনের দু’টি খাবারের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে এবারই প্রথমবারের মতো স্টলের ওপরে টিনের ছাউনি দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু কর্নারে মাতৃদুগ্ধ সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চের সেমিনারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে বলে মহাপরিচালক জানান।