নিজস্ব প্রতিনিধি : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র কাবা শরীফের উপর শিবমূর্তি বসিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র সেই পোস্টটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাস দাসের (৩০) আইডি থেকে দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পাশাপাশি সন্দেহভাজনভাবে একটি সাইবার ক্যাফে থেকে জব্দকৃত কম্পিউটার হার্ডডিস্ক পরীক্ষা করেও সেই ধর্মীয় অবমাননাকর ছবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর ফলে সেই পোস্ট নিয়ে কিছুতেই কাটছে না ধোঁয়াশা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা পুলিশ রসরাজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হরিপুর গ্রামের আল আমিন সাইবার ক্যাফে থেকে জব্দকৃত দুটি হার্ডডিস্ক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে মতামতের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফরেনসিক বিভাগে পাঠায়। পরীক্ষা থেকে শেষে সোমবার পিবিআই জেলা পুলিশের কাছে মতামত পাঠায়। মতামতে উল্লেখ করা হয়, রসরাজের মোবাইল ফোন ও জব্দকৃত হার্ডডিস্ক দুটিতে ধর্মীয় অবমাননাকর সেই ছবির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে পুলিশ সূএে জানা যায় যে, রসরাজের মোবাইল ফোন ও জব্দকৃত হার্ডডিস্ক থেকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টটি দেয়া হয়নি বলে পিবিআই তাদের মতামত জানিয়েছে। তবে আল আমিন সাইফার ক্যাফেতে তিনটি কম্পিউটার ছিল। সেখান থেকে পুলিশ দুটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক জব্দ করলেও আরেকটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক খুঁজে পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে সেই কম্পিউটার থেকেই হয়তো ধর্মীয় অবমাননাকর ছবির পোস্টটি দেয়া হয়েছে।
এদিকে, ৩০ অক্টোবর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার আগেরদিন রাতের আঁধারে রসরাজের পরিবারের সদস্যরা হরিণবেড় গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে রসরাজের বড় ভাই দয়াময় দাস এলাকায় ফিরে এসে তাদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ২৭ নভেম্বর নাসিরনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত দেড় শতাধিক মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু জাফর জানান, গত ২৭ নভেম্বর রসরাজের বড় ভাই দয়াময় দাস বাড়ি ফিরে আসলে পুলিশ তাকে খবর দিয়ে থানায় নিয়ে আসে। এরপর দয়াময় দাস থানায় হামলা ও ভাঙচুরের একটি মামলা দায়ের করেন। তবে রসরাজের পরিবারের অন্য সদস্যদের এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানান ওসি।
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর ফেসবুকে পবিত্র কাবা শরীফ নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র করে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার হওয়া নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ (৩০) দাসের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে নাসিরনগর উপজেলা। পরদিন (৩০ অক্টোবর) মাইকিং করে নাসিরনগর উপজেলা সদরে সমাবেশ ডাকে দুটি ইসলামী সংগঠন। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই দুস্কৃতিকারীরা নাসিরনগর উপজেলা সদরে তান্ডব চালায়।
এসময় দুস্কৃতিকারীরা উপজেলার অন্তত ১০টি মন্দির ও শতাধিক ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এরপর ৪ নভেম্বর ভোরে ও ১৩ নভেম্বর ভোরে দুস্কৃতিকারীরা আবারও উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়েরর অন্তত ৬টি ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনায় নাসিরনগর থানায় পৃথক ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত ১০২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।