৪ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং, রবিবার ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ


অপরাধরাজ্য শাহজালাল বিমানবন্দর


Amaderbrahmanbaria.com : - ৩০.১১.২০১৬

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের যৌথ চাঁদাবাজি চলছে। এসব চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম থামছেই না। চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় হকার ও ফুটপাটের ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পথচারীসহ স্কুল শিক্ষার্থীরা রেহাই পায়নি। আর এই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিমানবন্দরের সামনের গোলচত্বর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ। তার নেতৃত্বে থাকা প্রায় ২৫ জন ব্যক্তি পুরো এলাকায় চাঁদা আদায় করছে। এসব সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় অনেক হকার ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর এই নির্যাতনের বিচার চাইতে গিয়ে ফাঁড়ির পুলিশের ইনচার্জের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকেই।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিমানবন্দর হাজী ক্যাম্পের দুই পাশের ফুটপাত, রেল লাইনের পাশের মাঠ, প্রধান সড়কের ফুটপাত, বিমানবন্দর রেল স্টেশনের পাশের দোকান, হাজী ক্যাম্পের পাশের ফুটপাত, চা-দোকান ও হোটেল, ফলের দোকানসহ হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হকারের কাছ থেকে এই চাঁদা আদায় করে সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। আবার হাজী ক্যাম্পের পাশের সরকারি জায়গা দখল করে দোকান বসিয়ে ভাড়া আদায় করছে এই চক্র। আর এই চক্রের অন্যতম সদস্য হলেন, রুকন, ফারুক, নুর ইসলাম ও নান্নু। এদের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন সন্ত্রাসী রয়েছে। তারা প্রতিদিন পুরো বিমানবন্দর এলাকায় গাড়ি পার্কিং, সিএনজি পার্কিং থেকেও টাকা আদায় করছে। আর এই চাঁদা আদায়ের ভাগ হিসেবে বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সহকারী পরিদর্শক (এসআই) নাসিরকে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে নাসির আমার সংবাদকে বলেন, তিনি চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নন। আর কোনো চাঁদাবাজকে চেনেনও না। এলাকায় ফুঁটপাত দখল মুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এজন্য চাঁদাবাজরা তার নামে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগিরা জানান, বিমাবন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ প্রায় ৫ বছর ধরে একই জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে এর আগে একাধিকবার বদলি করা হলেও তিনি পুনরায় একই জায়গায় ফিরে আসেন। এর আগে তিনি বিমানবন্দর থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন ফল ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, আমরা যে সামান্য টাকা আয় করি, তার থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় সন্ত্রাসীদের। তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে সন্ত্রাসীরা পুলিশ নিয়ে এসে আমাদের নির্যাতন করে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। ফলে বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে আসছি। অপর একজন সবজি বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন তার কাছ থেকে দেড়শ টাকা চাঁদা আদায় করে সন্ত্রাসীরা। অনেক সময় তাদের চাঁদা না দিলে ফাঁড়ির পুলিশ এসে দোকান তুলে দেয়। ফলে দোকান করার আগেই ওই সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছু একজন মাছ ব্যবসায়ী জানান, তিনি প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চাঁদা দেন। আর চা-বিক্রেতা বললেন তার কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।

Loading...

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানবন্দরে দায়িত্বর সরকারী একজন কর্মকর্তা জানান, পুরো শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় শতাধিক সশস্ত্র ক্যাডারের দৌরাত্ম চলছে। তারা বিভিন্ন নামে চাঁদাবাজিসহ লুটপাট চালিয়ে আসছে। এই ক্যাডাররা পুরো এলাকায় অপরাধরাজ্য গড়ে তুলেছে। বিমানের মালামাল নামিয়ে কার্গো ভিলেজে রাখার পর থেকেই শুরু হয় এই সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ড। এলাকায় চুরি, লুটপাট, মালামালের ওপর ভিত্তি করে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ, চাঁদা দাবি, ব্যবসায়ীদের জিম্মিসহ মাস্তান-সন্ত্রাসীদের সীমাহীন উৎপাত চালানো হয়। আর বিদেশ থেকে আনা যাত্রীদের মালামাল বের করতে নানা পর্যবেক্ষণসহ যাবতীয় বিমানবন্দরের কাস্টমস বিভাগের দায়িত্ব। সেখানে বিভিন্ন প্রশাসন ও গোয়েন্দা বাহিনীসহ ১৮টি সংস্থার সার্বক্ষণিক নজরদারিও করে থাকে। আর তাদের উপস্থিতিতেই কথিত সাংবাদিক টিম ও স্থানীয় মাস্তান চক্র তৎপর রয়েছে। ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির দাবি পূরণ করা ছাড়া নিজের বৈধ মালামাল বের করা সাধ্য কারও নেই। আর মালামালের প্রকৃত মালিক পণ্য বের করার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও সেগুলো লুটে নেওয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয় দুর্বৃত্ত চক্র। কখনো সমঝোতার ভিত্তিতে, কখনো আমদানিকৃত মালামালের প্রকৃত মালিককে অপহরণ করে মালামাল ছাড় করিয়ে তা নিজেদের কব্জায় নিয়ে যায় এই চক্র। তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে হুমকি-ধমকি দিয়ে কার্গো ভিলেজ এলাকায় ঢুকে পড়ে। কোন প্রকার বাধার সম্মুখীন হলে নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। এ সময় কার্গো ভিলেজে রক্ষিত কোটি কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী লুট করা হয় বলে ভুক্তভোগিরা উল্লেখ করেছেন।

সুত্র জানায়, সেখানে গণ্ডগোল বাজিয়ে কার্গো ভিলেজ থেকে বিভিন্ন পণ্য চুরি করে পাশের ময়লার ঠিকাদার ও ডাম্পিংয়ে নিয়ে রাখা হয়। আর কঠোর নজরদারি ও নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও সংরক্ষিত এলাকায় লুটপাট-ডাকাতির ঘটনায় হতবাক করে বিদেশ ফেরত বিামন যাত্রীদের। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, সংঘবদ্ধ লুটেরা চক্রটি প্রভাবশালী নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচয় বহন করে। সেখানে তাদেরকে বাধা দেওয়া হলে বিমানবন্দর থেকে রাতারাতি কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। আর বিমানবন্দর ও কাস্টমস বিভাগের সর্বত্র শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সিন্ডিকেট। তারাও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের ‘প্রভাবশালী চক্রে’ পরিণত করেছে। সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্ট হিসেবে বিশেষ চক্র গড়ে তোলা হয়েছে। এসএমআই কুরিয়ার সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কার্গো ভিলেজ থেকে অহরহ সরকারি শুল্ক ছাড়া মালামাল লুট করে একজন সন্ত্রাসী। আর ডিপিএক্স কুরিয়ার সার্ভিস নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ও অপর এক সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণ করছেন। একইভাবে এওয়াইজেড এক্সপ্রেস নামের একটি কুরিয়ার সার্ভিস একাধিক ভাড়াটে সন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়ে বিমানবন্দরের কাস্টমস ভবন ও কার্গো ভিলেজ এলাকা দাপিয়ে বেড়ায়। গত ১১ আগস্ট এই সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় ৪জন কাস্টমস কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে চাঁদা আদায়কারীদের নেতা হিসেবে পরিচিত নান্নু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোন চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নই। আর কোন চাঁদাবাজকে আমি চিনিও না।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদক : বিশ্বজিত পাল বাবু
চেয়ারম্যান : আলহাজ্ব নুরুজ্জামান
ঠিকানা : ৬০৩ ফুলবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563


close