ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহান মুক্তিযুদ্ধের গণকবর অযত্ন আর অবহেলায়
নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ৬নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ পৈরতলায় মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনী এবং এদেশের রাজাকার দোসররা তৎকালীন এ দেশকে তথা মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের জীবনকে মাতৃভূমির রক্ষার্থে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন এ রকম ১০২ জনের ও বেশি মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন মানুষের গণকবর সেখানে রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পেড়িয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের গণকবরের স্মৃতিস্বরূপ স্থানটির নেই কোন সঠিন রক্ষণাবেক্ষণ। সারাদিন ভবঘুরে ও নেশাগ্রস্থ এক শ্রেণীর লোক তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডের বেশ সুবিধাজনক স্থান হিসাবে জায়গাটিকে বেছে নিয়েছে। স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা শুনেছি, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০২জন মুক্তিযোদ্ধাকে চোখ বেধে মেরে তাদেরকে এ স্থানটিতে গণকবর দেওয়া হয়। কিন্তু যারা দেশের জন্য তথা নিবেদিত প্রাণ বলি দিয়ে গেছেন এ স্থানটি এখন অযত্ন আর অবহেলার নিরাপদ স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছে এক শ্রেণীর মাদক সেবীরা। তারা সন্ধ্যার পর থেকে মাদক সেবার পাশাপাশি বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে এ স্থানটিতে। পাশে রেললাইন থাকাতে এবং বসতি কম হওয়াতে এই স্থানটি প্রায় সারাদিনই বেশ নিরিবিলি থাকে। এ ব্যাপারে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াহিদ খান লাভলুর সাথে তিনি জানান, ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি অনেক সাধারন মানুষকে পাকিস্তানি হায়নারা গণহারে মেরে মাটির নীচে কবর দিয়েছেন। আমরা যখন দেশ স্বাধীন করে বাড়িতে ফিরে আসি তখন এ গণকবর নিজ চোখে দেখতে পাই। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন মানুষের এ গণকবরকে রক্ষণাবেক্ষন করার তাদের নাম দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক স্থাপন করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি এবং এখানে যারা দিন ও রাত্রে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যাবস্থা নিবে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে শতভাগ আশাবাদী।
জেলা মুক্তিযোদ্ধ কমান্ডার হারুন অর রশীদ দুলাল জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব মুক্তিযোদ্ধ ও সাধারন মানুষদের এখানে পাকিস্তানি হানাদাররা মেরে গনকবর দিয়েছিল স্থানটিকে রক্ষণা বেক্ষনের জন্য বেশ কয়েক বার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। কয়েকবছর আগে জেলা পরিষদ থেকে গনকবরটি রক্ষা করার জন্য মাটি ফেলা হয় এবং গনকবরটির চারপাশে সীমানা প্রাচীরের কাজটি করে দেয়া হয়। কিন্তু এই গনকবরটির পাশ দিয়ে শহর খাল চলে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানির অতিরিক্ত চাপে সীমানা প্রাচীর ও গনকবরে ফেলা মাটি বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবী জানাচ্ছি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্বরুপ এই গনকবরটি যেন অচিরেই রক্ষণা-বেক্ষণের এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।