নাসিরনগরে হামলা অতিরঞ্জিত করার গন্ধ পেয়েছে গোয়েন্দারা
আমিরজাদা চৌধুরী : নাসিরনগরে হিন্দুদের বসতবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনাকে কিছুটা অতিরঞ্জিত করার গন্ধ পেয়েছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দরা বলছেন, যত কমই অতিরঞ্জিত করা হোক না কেন, যেহেতু ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর এবং দেশ কাঁপানো সেহেতু কম অতিরঞ্জিতই বিশাল কিছু এবং খুবই নেতিবাচক।
হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দারা জানান, ঘটনার দিন প্রথম দর্শনে যে পরিমাণ ক্ষতি দেখা গেছে, যা দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা- তা বাড়িয়ে বলা হয়েছে দুদিন পরই। এমনকি প্রথমদিন যাদের বসতঘর ও মন্দিরে উল্লেখ করার মতো বা খুব বেশি দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি, কদিন পর দ্বিতীয় দর্শনে তাদের বসতঘর-মন্দিরে উল্লেখ করার মতো, খুব বেশি দৃশ্যমান আঘাত এবং ধ্বংসস্তূপের উপস্থিতি দেখা গেছে। দ্বিতীয় দর্শনের কিছুদিন পর তৃতীয় দর্শনে এসব আরও বেড়েছে। কেউ কী কোনো ঘুটি চেলে এসব করিয়ে ঘটনাকে বড় করছে নাকি ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্ররা ইচ্ছে করে অধিক সহায়তা পাওয়ার আশায় এসব করছে- সেটি নিয়ে গোয়েন্দারা চিন্তিত। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, কোনো ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র যদি ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে নাটকীয়তার আশ্রয় নেন, সেটা না হয় কিছুটা সহনশীলতার মধ্যে। কিন্তু যখন কোনো মন্দির কর্তৃপক্ষ নাটকীয়তা করে, সেটা কিন্তু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ঘরের চাইতেও প্রার্থনা কেন্দ্র অধিক স্পর্শকাতর।
শুধু এদিক থেকেই নয়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে- ঘটনায় কিছু ঘুটিবাজ হিসেবে যাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চিহ্নিত করেছে, তাদের ঘিরেই তদন্ত আবর্তিত করছে, সেসব ঘুটিবাজ খুবই কৌশলে কিছু বানোয়াট গল্প ছড়াচ্ছে। যেটা করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের কিছু বানোয়াট গল্প প্রচারকারীদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা চায়ের দোকানে বসে, ফেসবুকে, রাতে বিভিন্নজনের বাড়িতে গিয়ে এসব বানোয়াট গল্প গেলাচ্ছে মানুষকে। যাতে মানুষ আরও উত্তেজিত হয়, ভেঙে পড়ে, প্রশাসনের বর্তমান ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়, রাজনৈতিক কিছু নেতা যেন হেয়প্রতিপন্ন হয়। বর্তমানে এসব গল্প প্রচারকারীদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার গভীর রাতে নাসিরনগরের ফুলপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে এসব অতিরঞ্জিতের বিষয় সম্পর্কে এ প্রতিবেদককে বলেন, বানোয়াট গল্প প্রচারে দুটি বড় সমস্যা দেখা দেবে। প্রথমত; যাদের গেলানো হচ্ছে, তারা গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। এখন যে অবস্থা, তাতে এসব গল্প খুবই বিপজ্জনক। যা বর্তমানে মানুষকে প্রলুব্ধ করবে উশৃঙ্খল হতে। এটা খুবই ভয়ের। দ্বিতীয়ত; বানোয়াট গল্পের কারণে আমাদের কাছে ভুল তথ্য আসে, ওসবের পেছনে কিছুটা হলেও সময় ব্যয় করতে হয়। এতে তদন্ত কার্যক্রমও ব্যাহত হবে মারাত্মকভাবে।
ক্ষতিগ্রস্তের পরিমাণ অতিরঞ্জিতের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা অতিরঞ্জিত করে ক্ষতির পরিমাণ বাড়াচ্ছে, তাদের প্রায় সবাই চিহ্নিত। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে- তাদের মতলব কী? সম্পাদনা: আনোয়ার