মঙ্গলবার, ৯ই মে, ২০১৭ ইং ২৬শে বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান উন্নয়ন বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা-সৈয়দা নাহিদা হাবিবা

AmaderBrahmanbaria.COM
অক্টোবর ৮, ২০১৬

সরাইল প্রতিনিধি : ‘পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’- হাদিসের এই কথাটি সেই শিশুবেলায় শুনে মুখস্ত করেছি। আমদের সন্তানদেরও একই নীতিবাক্য শেখাই। কিন্ত শিশুর সামনেই আমরা যখন মুখ মুছে টিস্যু কাগজটি যত্রতত্র ফেলি | বাদাম খেয়ে খোসা রাস্তায় ফেলতে ফেলতে যাই| ছোট শিশুর চিপস খাওয়ার পর প্যাকেটটি ছুঁড়ে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যাই| শিশুটি আমাদের শেখানো নীতিবাক্য কতক্ষণ চর্চা করবে তা বলা মুশকিল।

প্রাথমিক বিদ্যালয় হল কোমলমতি শিশুদের জ্ঞান অর্জনের সূতিকাগার। দিনের এক উল্লেখযোগ্য সময় তারা বিদ্যালয়ে অবস্থান করে। বাবা-মায়ের ন্যায় শিক্ষক-শিক্ষিকা আর ভাইবোনের মত অন্য সকল শিক্ষার্থীর মাঝে একটি শিশু নিজেকে পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ভাবতে থাকে। তাই, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পরিচ্ছন্নতার বিষয়সমূহ চর্চা করতে শিখলে পরবর্তীতে ব্যক্তিগত জীবনে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবে।
পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমেই আসে ব্যক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা। প্রতিদিন শ্রেণিতে পাঠদানের শুরুতেই (অথবা সমাবেশেও করা যেতে পারে) প্রতিটি শিশুর দাঁত, নখ, চুল ও পোশাক পরিচ্ছন্ন আছে কি না এ বিষয়টি শ্রেণি শিক্ষক পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রায় সকল প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী জুতা কক্ষের বাইরে খুলে রেখে ভিতরে প্রবেশ করে। এলোমেলোভাবে এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জুতাগুলো দেখতে ভালো দেখায় না, আর ছুটির ঘণ্টা বাজলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। আমরা যদি ‘স্লিপ’(SLIP-School Level Improvement Plan)বা বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনার অথবা বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহায়তায় দরজার বাইরে জুতা রাখার ব্যবস্থা করি, ছোট্ট সোনামণিরা জীবনের প্রথম দিন হতেই সুশৃঙ্খলভাবে নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখতে শিখবে।
আমরা বিদ্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে একটি ঝুড়ি রাখব। শিশুরা যেন সেই ঝুড়িতে ময়লা ফেলে, সে বিষয়ে তাদের উতসাহিত করব। নিজেরাও নিজ হাতে ময়লা তুলে তাদের শিখতে উদ্বুদ্ধ করব। কিছুদিন পর অনুকরণপ্রিয় শিশুরা নিজের এবং চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্নতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়বে।
বিদ্যালয়ের প্রতি শ্রেণি হতে ৪/৫ জন শিক্ষার্থীর একটি দল তৈরি করতে হবে যারা ক্লাসের শুরুতে, শেষে এবং ক্লাসের বিরতিতে পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়ের আঙিনা, বারান্দা পরিচ্ছন্ন রাখায় শিক্ষকদের সহযোগিতা করবে। এভাবে দলগতভাবে কাজ করায় তাদের মাঝে একত্রে কাজ করার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হবে। আরেকজন করবে এই আশায় বসে না থেকে ‘আমিই আগে কাজটি করব’ এই চেতনাবোধ শিশুদের মাঝে সৃষ্টি করতে হবে।
খাওয়ার আগে ও পরে এবং পায়খানা হতে বের হয়ে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হয় এ বিষয়টি এখন কারও অজানা নয়। তবে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম শিশুরা জানেনা। সপ্তাহে একদিন সমাবেশে এই বিষয়টি চর্চা করা যেতে পারে।
বিদ্যালয়ে বেঞ্চ অথবা দেয়ালে লেখার প্রবণতা হর হামেশাই লক্ষ্য করা যায়।কিন্ত বকা-ঝকা কিংবা শাসন করে সমাধান মিলবে না। অনেক ছেল-মেয়েরাই নিজ গৃহে এমনটি করে না, কারণ তারা ভাবে এটা তাদের বাড়ি, তাদের সম্পদ, তাদেরকেই এর দেখভাল করা উচিত। অথচ বিদ্যালয়কে তারা নিজ সম্পদ মনে করছে না। আমরা অভিভাবক আর শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীর মানস পটে ‘নিজ গৃহ’ আর ‘বিদ্যালয়’ দুটিকেই ‘নিজ সম্পদ’ ভাবনায় অনুপ্রাণিত করতে পারি।
‘আমার বিদ্যালয় আমার ঘর’। ‘আমি নিজে পরিষ্কার থাকব, আমি যেখানেই থাকি চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখবো’। ‘সুন্দর-পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে আমরাই হব অগ্রনায়ক’। এই বার্তা ছড়িয়ে দেই আমাদের আগামির ভবিষ্যত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফুলের মত শিশুদের মাঝে।