কোরবানির পশুতে স্বাস্থ্যঝুঁকি, কীভাবে বুঝবেন?
---
ঈদ মানে খুশি আর হাসি। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। ইসলাম ধর্মে সুস্থ ও সুন্দর পশুর কোরবানির নির্দেশ রয়েছে। তাই পশুকে মোটাতাজা করে সুন্দর করতে গিয়ে অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী গরুকে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অতি তাড়াতাড়ি ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোন দিয়ে মোটাতাজা করে কোরবানির হাটে বিক্রি করে। এ ধরনের মোটাতাজা গরুর মাংস রান্না করার সময়ও নষ্ট হয় না। এটি মানবদেহে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
অস্বাভাবিক মোটাতাজা অসুস্থ গরু চেনার উপায় :
১. গরুর তেজি আচরণ থাকবে না, ঝিমুনি ভাব থাকবে।
২. লেজ ও কান কম নাড়াবে।
৩. আশপাশে তেমন খেয়াল করবে না।
৪. গরুর প্রস্রাব ও পায়খানার রং অস্বাভাবিক থাকবে।
৫. গরুর পেছনের ঊরুর মাংসে চাপ দিলে তা ভেতরের দিকে দেবে যাবে এবং তা ভরাট হতে সময় লাগবে।
৬. গরুর শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি থাকবে।
৭. গরুর মুখ দিয়ে লালা ঝরবে ও গরুকে ক্লান্ত দেখাবে।
মানবদেহে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা গরুর মাংসে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যঝুঁকি
১. মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
২. মানসিক অস্থিরতা, অনিদ্রা ঘটাতে পারে।
৩. ক্ষুধা কমে যাওয়া।
৪. মুখে ব্রণ ওঠা।
৫. হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়া।
৭. মেয়েদের শরীরে অতিরিক্ত লোম হওয়া।
৮. প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেওয়া।
৯. অ্যালার্জি দেখা দেওয়া।
মানবদেহে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা গরুর মাংসে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি
১. স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়া।
২. অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হওয়া।
৩. মস্তিষ্কে ক্যানসার।
৪. প্রোস্টেট ক্যানসার।
৫. মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল সময়ের আগে চলে আসা।
৬. বন্ধ্যত্ব ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।
৭. শিশুরা তাড়াতাড়ি বেশি মোটা হয়ে যাওয়া।
৮. উচ্চ রক্তচাপ।
৯. শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনে বাধা দেওয়া।
১০. শরীরে পানি আসা।
১১. হাড়ের ক্ষয় দেখা দেওয়া।
১২. শরীরের বৃদ্ধির বাধা।
১৩. শরীরে রোগজীবাণুর আক্রমণ বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হওয়া।
স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধে করণীয়
১. গরুর পালনকারী ও কৃষকদের মোটাতাজাকরণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি জানাতে হবে।
২. কোরবানি উপলক্ষে হাটগুলোতে ভ্রাম্যমাণ পশুর চিকিৎসক দিয়ে অস্বাভাবিক মোটাতাজা ও অসুস্থ গরুকে শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. টিভি, রেডিও ও পত্রিকার মাধ্যমে জনগণকে অস্বাভাবিক মোটাতাজা গরুর মাংসের স্বাস্থ্যঝুঁকি বোঝাতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।