নিজস্ব প্রতিবেদক : হজযাত্রী সঙ্কটের কারণে একের পর এক বিমানের হজ ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। আর প্রতিদিনই কয়েকটি আসন করে খালি যাচ্ছে প্রতিটি ফ্লাইট। এ পর্যন্ত ১১টি ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান। এতে করে প্রায় ৫ হাজারের বেশী যাত্রী বহনের ক্যাপাসিটি হারিয়েছে বিমান। শ্লট কমে যাওয়ার কারণে এসব হজযাত্রীদের পরিবহন নিয়ে অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে বিমান। বিমানের পক্ষ থেকে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে হজযাত্রীদের টিকিট সংগ্রহ করার জন্য আহবান জানানো হয়েছে এজেন্সিগুলোর প্রতি।
এদিকে রিপ্লেসমেন্ট জটিলতার কারণে হজযাত্রীদের ফ্লাইট নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। হাবের অভিযোগ, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশে হজ পরিচালক রিপ্লেসমেন্ট দিতে গড়িমসি করছেন। রিপ্লেসমেন্ট দিয়ে ডিও লেটার দিতে দেরী হওয়ায় বিমানের ফ্লাইট দেয়া যাচ্ছে না। যার ফলে ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা যায়, যাত্রী সংকটের কারনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এখন পর্যন্ত ১১টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। ৪ আগস্ট থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১১টি ফ্লাইট বাতিল করায় আর্থিক সংকটের মুখোমুখি পড়তে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ। এভাবে যাত্রী সংকট চলতে থাকলে আরও বেশি লোকসানের মুখে পড়তে হবে বিমানকে। এদিকে বুধবার বিমান লোকসান কথা বিবেচনা করে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হজ এজেন্টদের আসন সংরক্ষণপূর্বক টিকেট সংগ্রহ করতে অনুরোধ জানিয়েছে হজ এজেন্টেদের।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) খান মোশাররফ হোসেন জানান, বাতিলকৃত ফ্লাইটের কারণে বিমানের হজযাত্রী পরিবহনে ৫ হাজার আসনের ক্যাপাসিটি খোয়া গেছে। এতে আর্থিক ও মারাত্মক যাত্রী সংকটের মুখোমুখি হয়েছে বিমান। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সব হজ এজেন্টদের আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিমানে তাদের আসন নিশ্চিত পূর্বক প্রয়োজনীয় টিকেট সংগ্রহ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
হজ এজেন্সীজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) গতকাল বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেছে, হজ পরিচালক ধীরগতিতে কাজ করছেন। তার অফিসের মূল কাজ শুরু হয় রাতে। রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে মেডিক্যাল অফিসারের সার্টিফিকেট নিচ্ছে না, অধ্যাপকের সার্টিফিকেট ছাড়া রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হচ্ছে না। যার ফলে এজেন্সীগুলো ফ্লাইট নিশ্চিত করছে না। এতে ফ্লাইট খালি যাচ্ছে, ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। এসব হজযাত্রীকে পরে পাঠানো নিয়েও অনিশ্চতয়তা তৈরি হয়েছে।
হাব সভাপতি ইব্রাহীম বাহার বলেন, রাজকীয় সৌদি সরকার কর্তৃক বিশেষ বিবেচনায় অনুমোদিত ১১ হাজার কোটায় অপেক্ষমান হজযাত্রী দ্রুত প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিটি চেক-ইন এর নামে হজ এজেন্সীর একাউন্ট হতে এজেন্সীর অনুমতি ব্যতিত টাকা স্থানান্তরের পত্রের কার্যকারিতা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে স্থগিত করতে হবে। কেননা এবার সৌদিয়া এয়ারলাইন্স সিটি চেক ইন করবে না। আর বিমান গত বছর ১০ ডলারে সিটি চেক ইন করেছে। এবার অন্যায়ভাবে ৫০ ডলার নেয়ার বিষয়টি বাতিল করার জন্য তিনি দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দ্রুত মোনাজ্জেম সমস্যার সমাধান করতে হবে, এজেন্সীর হাজী স্থানান্তর করা এবং মাহরাম সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে দ্রুত রিপ্লেসমেন্টের ব্যবস্থা করলে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় ঠেকানো যাবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়, হজ অফিস ও মক্কা- মদীনার সমন্বয়হীনতা দূর করার জন্যও সরকারের প্রতি দাবি জানান।স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন হাবের সহ সভাপতি ফরিদ আহমেদ মজুমদার, যুগ্ম মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন কামাল, ফজলুল ওয়াহাব মামুন, হাফেজ নুর মোহাম্মদ প্রমুখ।
এদিকে গতকাল বুধবার ধর্মমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কাছে হাবের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাবের অভিযোগ সত্য নয়। রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে সত্যতা অবশ্যই যাচাই করতে হবে। হজ নীতিমালা অনুযায়ী ৫ শতাংশের বেশী কেউ রিপ্লেসমেন্ট করতে পারবে না। কিন্তু একেক এজেন্সী ৪০ থেকে ৫০ জনের রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে আসছে। আবার রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমে নতুন হজযাত্রী প্রেরণ করতে চায়। সেটা তো সম্ভব নয়। এজেন্সীগুলোর অনেকের ভিসা হওয়া সত্ত্বেও তারা হজযাত্রীদের ফ্লাইট দিচ্ছে না। যার কারনে ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে এবং সিট খালি যাচ্ছে। গত ৪ আগস্ট থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়।