নিউজ ডেস্ক: ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম হাজারীর পদে থাকার বৈধতা বিষয়ে রায় পিছিয়েছেন আদালত। রায়ের পরবর্তী তারিখ ২৩ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে আওয়ামী লীগের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী আড়াই বছর সাজা কম খেটে বেরিয়ে গেছেন মর্মে কারা কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। এ বিষয়ে ২ আগস্ট শুনানি হয়।
শুনানিতে নিজাম হাজারীর আইনজীবীরা বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন সঠিকভাবে দেয়া হয়নি। এই প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক আছে। নিজাম হাজারী পুরো সাজা খেটেই বের হয়েছেন। এছাড়া জনস্বার্থে এই রিট মামলা চলতে পারে না।
পরে রিটকারীপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, নিজাম হাজারীর সাজা খাটা নিয়ে বিতর্ক আছে- এটা নিশ্চিত। এখন কোর্টের দায়িত্ব হল আসলেই তিনি কতদিন সাজা খেটেছেন, সাজা কম খেটেছেন কী না সেটা বের করা, আর এ অবস্থায় তার সংসদ সদস্য পদ থাকে কী না- এটার বিচার করা। যেহেতু এই আদালতে এই বিষয়ে প্রশ্নটা উত্থাপন করা হয়েছে। তাই রিট আবেদন চলতে পারে বলেও রিটকারী পক্ষ দাবি করেন। পরে আদালত আজ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
এর আগে হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী কারা মহাপরিদর্শকের পাঠানো প্রতিবেদন ১৯ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ১০ বছরের সাজার মধ্যে নিজাম হাজারী সাজা খেটেছেন ৫ বছর ৮ মাস ১৯ দিন। কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাজা রেয়াত পেয়েছেন ১ বছর ৮ মাস ২৫ (৬২৫ দিন)। রেয়াতসহ মোট সাজা ভোগ করেছেন ৭ বছর ৫ মাস ১৪ দিন। এখনো সাজা খাটা বাকি আছে ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন। তিনি মুক্তিপান ২০০৬ সালের ১ জুন।
প্রতিবেদন উপস্থাপনের দিনই (১৯ জুলাই) এর ওপর লিখিত জবাব দেয়ার জন্য নিজাম হাজারীর আইনজীবী আদালতের কাছে সময় চান। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হয়। এতে নিজাম হাজারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও নুরুল ইসলাম সুজন। আর রিটের পক্ষে শুনানি করেন কামরুল হক সিদ্দিকী ও সত্য রঞ্জন মণ্ডল।
উল্লেখ্য, ‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।
রিটে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে। সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য হতে পারেন না। অথচ তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন হাইকোর্ট রুল দেন। কোন কর্তৃত্ববলে তিনি এমপি পদে দায়িত্ব পালন করছেন রুলে তা জানতে চাওয়া হয়।
এরপর হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ এই রুল শুনানিতে বিব্রত বোধ করেন। তারপর বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি। এই বেঞ্চে গত ১৯ জানুয়ারি রুল শুনানি শুরু হয়।
শুনানিকালে ২৬ মে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ এক আদেশে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষকে কয়েকটি বিষয় আদালতকে জানাতে হবে।
প্রথমত,অস্ত্র মামলায় নিজাম হাজারীর কারাদণ্ডের যে সাজা হয়েছিল, তাতে তিনি কোনো রেয়াত পেয়েছিলেন কি না। দ্বিতীয়ত, সাজা রেয়াত করা হয়ে থাকলে ঠিক কতদিনের জন্য তা করা হয়েছিল। তৃতীয়ত, সাজা ভোগ ও রেয়াত করা সাজার একটি পূর্ণাঙ্গ হিসাব দিতে হবে। সে সঙ্গে সাজা রেয়াতের সিদ্ধান্ত-সংশ্লিষ্ট নথিপত্র এই হিসাবের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কারা কর্তৃপক্ষ সে আদেশ অনুযায়ী ১৯ জুলাই প্রতিবেদন পাঠায়।