শনিবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ইং ৯ই পৌষ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বন্যায় ভাসছে ১৮ জেলা, ত্রাণের জন্য হাহাকার

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ৩০, ২০১৬

---

1469813265_p-19বন্যায় ভাসছে দেশের ১৮ জেলা। বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ১৯ নদীর পানি। ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি কমলেও পদ্মা ও যমুনার পানি আরও বেড়েছে। ফলে নতুন নতুন অনেক এলাকা ডুবে গেছে। সেই সঙ্গে লাখ লাখ পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। নদনদীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। বানবাসী অনেকেই অপোকৃত উচু বাধঁ সড়ক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব মানুষদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
এর মধ্যেই যদি ভারতের আসাম রাজ্য থেকে নতুন করে বন্যার নামতে শুরু করে তাহলে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আবারো অবনতি হবে, যার প্রভাব পড়বে দেশের একটি বড় অঞ্চল জুড়ে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বন্যা দুর্গত এলাকায় ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। সেখানকার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে। এসব এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন দুর্গতরা। বন্যার্তদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে পানি বাহিত রোগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘন্টা ব্রক্ষপুত্র, যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদী সমূহের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীসংলগ্ন গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলাসমূহের নিম্মাঞ্চল এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীসংলগ্ন রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলা সমূহের নিম্মাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকতে পারে। ঢাকার আশেপাশের বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা প্রভৃতি নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে আগামী ২৪ ঘন্টায় সুরমা-কুশিয়ারা নদী এলাকার সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা সমূহের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ১৯ নদীর পানি।
কুড়িগ্রাম গ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সাতদিন ধরে পানিবন্দী মানুষের হাতে কাজ নেই। বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ পাশের উঁচু জায়গায়। ঘরে খাবার নেই। খাবার থাকলেও নেই জ্বালানি, তরিতরকারি, লবণ, তেল, মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ফলে এখন ঘরে ঘরে খাদ্যের জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া দুই লক্ষাধিক মানুষের দিন কাটে অর্ধাহার-অনাহারে।
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে নদী ভাঙনের শিকার আর বানভাসি পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। ফলে ত্রাণের জন্য ঘরে ঘরে এখন হাহাকার চলছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। ফলে প্রতিদিন জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে বাড়ছে ভুখা মানুষের ভিড়।
অতীতে দেখা গেছে দেশের কোনো অঞ্চলে বন্যাকবলিত হলে প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বন্যার্তদের জন্য বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করত। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ত্রাণ সংগ্রহ করে বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এ ধরনের ত্রাণ তৎপরতা দেখা যায় না। বন্যার্তদের জন্য সরকার ও প্রশাসনের ত্রাণ তৎপরতা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই বন্যার্তদের সহযোগিতায় সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন ।
সর্বত্রই চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার পোড়ার চরের বাসিন্দা সেকেন্দার আলী জানান, কাজ নাই, খাবার নাই, রিলিফও পাই নাই। খুব কষ্টে আছি। কি হবে জানি না?