g পূর্বাঞ্চলে শনির দশা ট্রেনে | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

সোমবার, ১৪ই আগস্ট, ২০১৭ ইং ৩০শে শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

পূর্বাঞ্চলে শনির দশা ট্রেনে

AmaderBrahmanbaria.COM
মার্চ ৭, ২০১৫

---

Bbaria Train Derail pic-3আমিরজাদা চৌধুরী : ‘জায়গা জায়গা ট্রেন এমনে পড়তাছে কেরে বুঝতে পারলামনা। বোমাওতো  মারতাছেনা কেউ’। ট্রেনের হাল-দুর্দশা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলষ্টেশনে তুহুরা বেগম নামের এক মহিলা যাত্রী এমনই বলছিলেন। আরেক যাত্রী রামু দাসের মন্তব্য- ‘মাইনষে কইতাছে অহন বলে ডরেই ট্রেন পইরা যাইতাছেগা’। তবে কারন যাই হোক বাস্তবতা হচ্ছে অঘটন যেন পিছু ছাড়ছেনা পূর্বাঞ্চল রেলপথে। রেলকে এখন আর নিরাপদ বাহন মনে করছেননা পূর্বাঞ্চলের যাত্রীরা। অবরোধে রেল সচল রাখতে আনসার মোতায়েন,ট্রেনের ইঞ্জিনে গার্ড,স্পর্শকাতর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ প্রহরা। তারপরও সচল নেই ট্রেন। বারো কারনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বারবার এর যাত্রা। বগি লাইনচুৎত,লাইন বাকা হয়ে যাওয়া,ইঞ্জিন বিকল- হররোজ কোন না কোন ঘটনায় অচল রেল যোগাযোগ। মোট কথা সোজা হয়ে দাড়াতেই পারছেনা ট্রেন। লন্ডভন্ড সিডিউল। পূর্বাঞ্চল রেলপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানাতেই অবরোধের এই দু-মাসে ৯ বার বিপর্যয় ঘটেছে ট্রেনের। ২০১৪ সালে পূর্বাঞ্চলে গড়ে প্রতিমাসে একটি ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে। ঐবছর মোট ১৮ টি দূর্ঘটনা ঘটে। আর নতুন বছরের ২ মাসেই অঘটনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে । খোজ নিয়ে জানা গেছে,অবরোধ শুরু হওয়ার পর ২ দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর এলাকায় চলন্ত ট্রেনকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে মারে অবরোধকারীরা। এ ঘটনাগুলো ছাড়া অবরোধকারীদের রেলপথে আর কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। কিন্তু প্রতিটি ঘটনার পর রেলের লোকজন নিজেদের দায় এড়াতে ‘নাশকতা’ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। আখাউড়া জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেছেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় কোন নাশকতা হয়নি। রেল,রেলপথ ও রেল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলার কারনেই বারবার ট্রেনের বিপর্যয় ঘটছে। ৫ ই জানুয়ারী ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী ডেমু ট্রেনে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়।এতে আহত হন ২ যাত্রী। এরপর ১ লা ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামগামী সূবর্ণ এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকায় ককটেল নিক্ষেপ করা হয়।এছাড়া নাশকতার কোন খবর পাওয়া যায়নি। ২৫ শে জানুয়ারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঘাচংয়ে সিলেট থেকে ঢাকাগামী জয়ন্তীকা এক্সপ্রেসের ৬ টি বগি লাইনচুৎত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ৩’শ ফুট রেললাইন। প্রায় সাড়ে ৯ ঘন্টা ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালির ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকে। দুর্ঘটনার কারণে পাঘাচং রেলস্টেশনের সিগন্যাল ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার  পরই রেলওয়ের চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তারা প্রাথমিকভাবে নাশকতার কারণে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে বলে কারণ চিহ্নিত করে। তবে রেলপথের আশপাশ এলাকার মানুষ দুর্ঘটনার জন্য ঐস্থানের দুর্বল রেলপথকেই দায়ি করেন। তারা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার রেলপথের অনেক স্থানেই ঠিকমতো স্লিপার নেই। আবার স্লিপার থাকলেও তা পচা। বেশিরভাগ স্লিপার ক্লিপ দিয়ে আটকানো নেই। কোথাও কোথাও স্লীপার মাটিতে বসে গেছে। গত ৭ ই ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় চট্টগ্রামগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেসের ১টি বগি লাইনচুৎত হয় আখাউড়ার গঙ্গাসাগরে। এতে ৪ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। চাকা খুলে যাওয়ায় এই দূর্ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। ১৩ ফেব্রুয়ারী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পুনিয়াউটে ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ও ২ টি বগি লাইনচুৎত হয়। এটি সিগন্যাল ব্যবস্থায় ত্রুটির কারনে ঘটে বলে জানা যায়। ৫ ই মার্চ একইস্থানে নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেসের ৬ টি বগি লাইনচুৎত হয়। এতে সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটে। লাইনে ত্রুটির কারনে এই দূর্ঘটনা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ১৯ শে ফেব্রুয়ারী আশুগঞ্জের অদূরে ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন বিকল হয়ে ২ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পরদিন ২০ শে ফেব্রুয়ারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বড়হরণ আউটারে ঢাকাগামী কর্নফুলী এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন বিকল হয়ে এক ঘন্টারও বেশী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। ২রা মার্চ দুপুরে পাঘাচংয়ে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের একটি বগির চাকায় ত্রুটি দেখা দিলে সিলেট ও চট্টগ্রামের মধ্যে আপ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ১৬ ই ফেব্রয়ারী আশুগঞ্জ রেলষ্টেশন এলাকায় লাইন বাকা হয়ে যাওয়ায় প্রায় ২ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। ২৮ শে ফেব্রুয়ারী চিনাইর এলাকায় ৩০/৪০ ফটু রেললাইন বাকা হয়ে যায়। এ ঘটনায় বিকেল ৩ টা থেকে সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত দেড় ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। আখাউড়া রেলজংশনের পথ ও পূর্ত বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,অনেক কারনেই দূর্ঘটনা ঘটছে। দূর্ঘটনায় পড়া ট্রেন উদ্ধারের দায়িত্বে থাকা আখাউড়া লোকোসেড ইনচার্জ মহসীন উদ্দিন ভূইয়া বলেন-দূর্ঘটনা যখন হয় পরপর কয়েকটা হয়। চাকুরী জীবনে এমনটাই দেখছি। সম্প্রতি যে দূর্ঘটনা ঘটেছে তার কোনটি হয়েছে সাবোটাজে,কোনটি রেল লাইনে ত্রুটির কারনে,কোনটি প্রাকৃতিক কারনে। আখাউড়া জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, আমাদের এলাকায় কোন নাশকতার কারনে ট্রেন লাইনচুৎত হয়নি। রেল লাইনে ত্রুটি,রেলে সমস্যা ও রেল বিভাগের লোকজনের দায়িত্বহীনতার কারনে দূর্ঘটনা ঘটছে। রেলপথে সংশ্লিষ্টদের কোন তদারকি নেই। তারা ঠিকভাবে কোন কাজ করেনা।

 

 

 

এ জাতীয় আরও খবর