হামাস লুকিয়ে আছে সন্দেহে শনিবার ইসরায়েলি বিমান গাজায় একটি মসজীদে হামলা চালিয়েছে। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা ১শ ২০ ছাড়াল।
ইসরায়েল ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামে এই তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে পাঁচদিন আগে। সেসময় তারা বলেছিল, ইসরায়েলি জনসাধারণের ওপর রকেট হামলা রুখতেই এই অভিযান। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মূখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা বলেন, দিনরাত অনবরত এই হামলায় নিহতের সংখ্যা ১২০ ছাড়াল। এছাড়া গুরুতর আহত ও নিখোঁজ হয়েছে ৯শ’ ২০ এর ওপরে।
০২নিহত সন্তানকে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মিছিল
এদিকে ইসরায়েল সেনাবাহিনী আক্রান্ত মসজীদটিসহ এর আশেপাশের এলাকার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে বলেছে, এখান থেকে অন্য ধর্মাবলম্বী এবং সাধারণ মানুষের ওপর রকেট ছোঁড়ার পরিকল্পনা চলছিল। তারা জানায়- হামাস, ইসলামিক জেহাদ ও অন্যান্য গাজা’র জঙ্গীরা অন্যধর্মের লোকজন এবং নিজেদের সাধারণ মানুষদের ওপর এধরণের হামরা চালিয়ে এরা মূলত আবারো সবার হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়াসহ ‘আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল’ নেটওয়ার্ক পূণরজ্জীবিত করার পরিকল্পনা করছে।
ইসরায়েল সেনাবাহিনীর মূখপাত্র ল্যাফটেনেন্ট কর্ণেল পিটার লার্নার বলেন, হামাস সন্ত্রাসীরা আসলে এখন নিজেদের মানুষের ওপর হামলা করার পরিকল্পনা করছে, গাজায় ফিলিস্তিনি জনসাধারণকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে নিজেদের লুকিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি এঁটেছে।
০৩ইসরায়েলি হামলায় নিহত শিশু
জেরুজালেম পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েল বাহিনী অন্তত ৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। সেনাবহিনী জানিয়েছে, অভিযান শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬শ’ স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে।
ইসরায়েল প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ইসরায়েল এখনই এই অভিযান বন্ধ করতে পারবে না। যত বড় আন্তর্জাতিক চাপই আসুক না কেন, এই অভিযান বন্ধ হবে না।
০৪নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় আমরা হামাস ও ইসলামিক জেহাদের ১ হাজারের বেশি আস্তানায় আঘাত হেনেছি। ইসরায়েলি জনসাধারণ নিজেকে নিরাপদ মনে না করা পর্যন্ত আমরা এই হামলা অব্যাহত রাখবো।
গাজা থেকে রকেট হামলা
এদিকে শুক্রবার ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে লেবানন থেকে এক রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলার কারণে এখন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এই সংঘাতে লেবাননের জঙ্গীরাও হামাসের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
লেবানিজ সেনাবাহিনী এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী পরবর্তীতে লেবাননে এই হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা সংগঠনকে খোঁজা শুরু করেছে।
০৫দক্ষিণ লেবাননকে ‘হযিবুল্লাহ’র শক্ত ঘাঁটি বলে গণ্য করা হয়। হিযবুল্লাহ এর আগে বেশ কয়েকবার ইসরায়েলের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তবে এবারের হামলায় হিযবুল্লাহকে দায়ী করা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে- এ হামলা চালিয়েছে হামাসেরই সমমনা কোনো ছোট সংগঠন।
গাজায় এক ভবনে ইসরায়েলি হামলার পর
জেরুজালেম পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরায়েলের সেনাবহিনীও মনে করছে এ হামলার ঘটনা হিযবুল্লাহ ঘটায়নি। ঘটিয়েছে লেবাননের কোনো ছোট সংগঠন, যা হামাস কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।
০৬এদিকে গাজা থেকে এখন পর্যন্ত ৭শ’র মতো রকেট এবং মর্টার হামলা চালানো হয়েছে ইসরায়েলে। মার্কিন অর্থায়নে ইসরায়েলের তৈরিকৃত ‘আয়রন ডোম’ রকেট প্রতিরক্ষা সিস্টেম ১শ ৩০ এর বেশি রকেট আকাশপথে ধ্বংস করেছে।
নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তিনি এই ক’দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ইউরোপিয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সাথে কথা বলেছেন। কোনো বহিরাগত চাপই ইসরায়েলকে রুখতে পারবে না বলেও এসময় তিনি হুমকি দেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং শহরে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে জেগে উঠছে মানুষ
এসব ঘটনার সাথে সাথে ফিলিস্তিনিদের মাঝে বিদ্রোহ ফুঁসে ওঠে। হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায়। এরই জবাবে ‘অপারেশন প্রোটেক্টিভ এজ’ নামে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের এ হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানালেও তুরস্ক, মিশর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তুরস্ক সরকার ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছেদেরও হুমকি দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও শুক্রবার এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য পশ্চিম জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়।
এদিকে এই হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এ হামলা বন্ধে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। এডেনবার্গ, মেলবোর্নসহ বেশ কিছু শহরে ইসরায়েলের এ হামলার নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলকে বয়কট করারও আহ্বান জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।
http://www.youtube.com/watch?v=5p3eRLoYmLk