দশ বছরে ত্রিমাত্রিক র্যাব
---
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটলিয়নের (র্যাব) দশ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে বুধবার। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ জাতীয় স্বাধীনতা দিবস প্যারেডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে র্যাবের আত্মপ্রকাশ হয়। এরপর থেকেই নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে দিয়ে চলছে র্যাব। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে র্যাব আস্থাভাজন বাহিনী পরিচিতি লাভ করেছে। তেমননি বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে নানাভাবে সমালোচিতও হয়েছে র্যাব। এবার র্যাবের জল ও স্থল পথের সাথে যোগ হচ্ছে আকাশ পথের সরঞ্জাম। এখন থেকে হেলিকপ্টার দিয়েও অভিযান পরিচালনা করবে র্যাব। আর এর মধ্য দিয়ে র্যাব পরিণত হলো ত্রি-মাত্রিক বাহিনীতে। র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, “র্যাব জল ও স্থল পথে আভিযান পরিচালনা করলেও বর্তমানে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার সংযোজনের ফলে র্যাব ত্রি-মাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে বর্তমানে বিভিন্ন আভিযানিক কার্যক্রম অনেক সহজ হয়েছে এবং দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলেও আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে।” তিনি বলেন, “সন্ত্রাস ও অস্ত্রধারী দমনে নতুন করে র্যাবকে আরো গতিশীল করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় ও পাহাড়ী ব্যাটলিয়ন গঠন করার পদক্ষেপ নেয়া হবে। এই লক্ষ্যে কাজ চলছে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের জন্য র্যাবের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।” তিনি আরো বলেন, “প্রয়োজনের তাগিদেই র্যাবের ব্যাটালিয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি করে বর্তমানে ১৪টি করা হয়েছে। এ বাহিনী দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জন্য অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সার্বক্ষণিকভাবে পেশাদারিত্বের সাথে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে।” র্যাব কর্মকর্তারা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী হিসেবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯ সংশোধন করে ‘দি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নস্ (সংশোধন) অ্যাক্ট ২০০৩’ প্রণয়ন করা হয়। এই আইন অনুসারে ২০০৪ সালে গঠন করা হয় এলিট ফোর্স র্যাব যাত্রা শুরু করে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বডার গার্ড অব বাংলাদেশ (তৎকালীন বিডিআর), কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাইকৃত কর্মকর্তা ও সদস্যদের নিয়ে শুরু হয় র্যাবের পথচলা। র্যাবের ওপর যে সকল দায়িত্ব ভার অর্পণ করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক উদ্ধার। এক দশকে র্যাব : র্যাবের অব্যাহত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গিবাদের অপতৎপরতা ও বিস্তার রোধ করে তাদের কার্যক্রমকে প্রায় স্তিমিত করা সম্ভব হয়েছে। র্যাবের অভিযানে ১১০০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে গ্রেনেড ,গুলি ও বোমাসহ নাশকতার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের তথ্য মতে, গত এক দশকে র্যাব দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে আট হাজার ২০৩ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। ১১ হাজার ১৬টি অস্ত্র উদ্ধার ও ৯২ হাজার ৩৪২ রাউন্ড গোলাবারুদ, সাত হাজার ৫৪২টি ককটেল, বোমা, গ্রেনেড, ৫ হাজার ২৮০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে র্যাব। এর মধ্যে গত এক বছরে ৫৭৬ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার, ৬১৮টি অস্ত্র, চার হাজার ১৩০ রাউন্ড গোলাবারুদ ও এক হাজার ১৪৩ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে র্যাব। গত এক দশকে র্যাব ৪৮ হাজার ২৩০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে। ৩৯৫ কেজি হেরোইন, ২৪,৮২,৮৪০ বোতল ফেন্সিডিল, ১৮,৫৯,৯৫২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৯২,৭০০ বোতল বিদেশী মদ, ২,১২,১৫৪ বোতল দেশী মদ, ৫৩,৪৩৫ কেজি গাঁজা, ২,৬১,৭৭৯ ক্যান বিয়ার, ২৬.৩৩১ কেজি কোকেন, ২৩.২২৯ কেজি আফিম, ১৫,২৪৮টি ভায়াগ্রা ট্যাবলেট, ৫,০৯২টি আইসপিল ট্যাবলেট, ৩,৪১,১০৬টি নেশা জাতীয় ইনজেকশন এবং ২,৮০,৬০৯টি সেনেগ্রা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। এছাড়া র্যাব গত এক দশকে ৭৯৪ টি সাফল্যজনক অভিজনে ১৫৫১ জন অপহরণকারী গ্রেপ্তার, ৮৩১ জন অপহৃত ভিকটিমসহ ৩৮টি লাশ উদ্ধার করেছে। গত এক বছরে ১১৯টি সাফল্যজনক অভিযানে ১৭৬ জন অপহরণকারী গ্রেপ্তার, ১৩১ জন অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার করেছে। গত এক দশকে ১২,২৩৩টি মোবাইল কোর্ট অভিযানে ৫৬,৬৩,৫৪,০৩৬ টাকা জরিমানা আদায় একং ৬,১৫৪ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে র্যাব। এছাড়াও গত এক বছরে ৮৪৯টি মোবাইল কোর্ট অভিযানে ৭,১৫,৯২,০৫০ টাকা জরিমানা আদায় একং ১,০৭০জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে র্যাব। এছাড়াও অবৈধ ভিওআইপি বিরোধী অভিযান, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ উদঘাটনে র্যাব তৎপর ছিল। সুন্দরবনে বনদস্যু ও জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।