মালয়েশিয়ায় আতঙ্কে বাংলাদেশি কর্মীরা
কূটনৈতিক প্রতিবেদক: মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে আতঙ্কে বাংলাদেশের কর্মীরা। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অভিযান শুরু হওয়ার পর যথাযথ কাগজপত্র নেই-এমন কর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনসহ নানা পথ বেছে নিচ্ছেন।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলীকে উদ্ধৃত করে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার অভিযান শুরুর পর প্রথম দিনে অন্তত ৫০০ অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল, কম্বোডিয়া ও চীনের নাগরিক রয়েছেন আটক ৫০০ অভিবাসীর মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকের সংখ্যা কত, তা গতকাল রোববার পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মালয়েশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা নর্থ সাউথ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড্রিয়ান পেরেইরা গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘আটক অভিবাসীদের মধ্যে বেশ কিছু বাংলাদেশি আছেন বলে শুনেছি। তবে বহির্গমন বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে না বলা পর্যন্ত সংখ্যাটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে বৈধতা পাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর গ্রেপ্তারের আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে আয়োজিত সচেতনতামূলক কর্মশালায় ১৫ বাংলাদেশি অংশ নেন।’
বাংলাদেশ হাইকমিশনের দেওয়া সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক লাখের যথাযথ কাগজপত্র সঙ্গে নেই।
অভিযান-পরবর্তী পরিস্থিতি জানতে পুত্রজায়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশের কর্মী মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে গতকাল বিকেলে যোগাযোগ করা হয়। চার বছর ধরে সেখানে শীততাপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মেরামতের এই কর্মী জানান, তাঁর বাসার আশপাশে শ তিনেক বাংলাদেশি রয়েছেন। তাঁদের অন্তত ৬০ ভাগের বৈধ কাগজপত্র নেই। তিনি নিজেও নতুন পাসপোর্টের জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনে আবেদনপত্র জমা দিয়ে সময়মতো ফেরত পাননি। সময়মতো পাসপোর্ট হাতে পেলে তিনি এ অবস্থায় পড়তেন না। কারণ, পাসপোর্ট ছাড়া কাজের অনুমতিপত্র হালনাগাদ করার জন্য আবেদন করা যায় না।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশের নাগরিকদের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে গতকাল হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে কয়েক দফা ফোন করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হয়। এরপর শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয় অভিযান। অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিতে ২০১৪ সালে ‘থ্রি প্লাস ওয়ান’ কর্মসূচিটি চালু হয়। এই কর্মসূচির আওতায় নির্ধারিত একটি মাশুল দিয়ে কোনো রকম বিচারের মুখোমুখি না হয়েই অভিবাসীরা নিজের দেশে ফিরতে পারবেন।
অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সারা দেশে এ অভিযান পরিচালনা করছেন অভিবাসনবিষয়ক কর্মকর্তারা। আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। ওই অভিযানে ৫ হাজার অভিবাসীর মধ্যে ৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে।
মুস্তাফার আলী জানান, ২০১৪ সাল থেকে গত ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ৮ লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে গেছেন।
মুস্তাফার আলী জানান, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে অভিবাসন বিভাগ ৯ হাজার ৭১৫টি অভিযান চালিয়েছে। ওই সময়ে আটক করা হয়েছে ২৯ হাজারের বেশি অবৈধ শ্রমিক ও ৮৮০ জন নিয়োগদানকারীকে।
মুস্তাফার আলী আরও বলেন, যদি চাকরিদাতারা তাঁদের শ্রমিকদের দ্রুততার সঙ্গে নিতে চান, তাহলে তাঁদের সব কাগজপত্র যথাযথভাবে পূরণ করে তা জমা দেওয়া হয়েছে, এটা তাঁদেরই নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম আলো