জিততেই হবে আর্জেন্টিনাকে
আর্জেন্টাইনদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা তিনি পাননি কখনো। ডিয়েগো ম্যারাডোনার কথা বাদ দিন; কার্লোস তেভেসের মতোও পাননি তা। কিংবা হুয়ান রোমান রিকুয়েলমের মতোও।রোসারিওতে তাঁর দিকে তেড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার অথচ আর্জেন্টিনায় কেমন যেন নিজ ঘরে পরবাসীর মতো। আর আজ যদি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেও অঘটনের শিকার হয় আর্জেন্টিনা, তা হলে? লিওনেল মেসির সামনের চ্যালেঞ্জটা বুঝতে পারছেন!
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেছে আর্জেন্টিনা। মেসির সামনে সুযোগ ছিল জয়সূচক গোল করার। কিন্তু পেনাল্টি থেকেও ব্যর্থ তিনি। তাতেই আবার উঠে যায় সমালোচনার স্লোগান। আবার সেই ‘গেল গেল’ রব। আবার দেশ আর ক্লাব দলের পারফরম্যান্সের তুলনা। আজ তাই জিততেই হবে মেসিকে। আর্জেন্টিনার পরম প্রার্থিত জয়ের জন্যও তাঁর জ্বলে ওঠার বিকল্প নেই।
বিশ্বকাপ জেতে না তাঁরা কত দিন! ডিয়েগো ম্যারাডোনার জাদুতে ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ ওই সোনালি ট্রফির স্পর্শ পায় আর্জেন্টিনা। এর পর কেটে গেছে ৩২ বছর। কোপা আমেরিকার সর্বশেষ শিরোপাও ১৯৯৩ সালে। এর পর পেরিয়ে গেছে ২৫ বছর। সময়ের নিয়মে ফি বছর শরৎ হাসে, বসন্ত আসে। কিন্তু আর্জেন্টিনার শীতকাল কাটে না। দীর্ঘ সেই শীতঘুম থেকে ওঠার জন্য এবারের ভরসা যথারীতি ওই মেসিই। বয়স ৩১ বছর হয়ে গেছে বলে বিশ্বকাপ জয়ের এটিই হয়তো তাঁর শেষ সুযোগ। কিন্তু প্রথম ম্যাচের ব্যর্থতা যে তাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছে একেবারে খাদের কিনারে।
আইসল্যান্ড না হয় সর্বশেষ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে, কিন্তু গ্রুপে আর্জেন্টিনার তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে ধরা হচ্ছিল তাঁদের। তুলনায় ক্রোয়েশিয়া অনেক কঠিন। ১৯৯৮ সালে অভিষেকেই সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল দেশটি। এর পুনরাবৃত্তি আর করতে পারেনি সত্য। তবে বর্তমান দলেরও সামর্থ্য রয়েছে বহুদূর যাওয়ার। দলে লুকা মডরিচ, ইভান রাকিটিচ, মারিও মান্দজুকিচের মতো ফুটবলার রয়েছেন। আর বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের শক্তির জানানও এরই মধ্যে দিয়ে রেখেছে দলটি।
আরও : এবার সমকামী বিয়ে হচ্ছে ব্রিটিশ রাজপরিবারে
নিঝনি নোভগোরাদের এই আগুনে লড়াইয়ে ক্রোয়াট কোচকে সাহায্য করার জন্য আছেন রাকিটিচ। ক্লাব দল বার্সেলোনায় মেসির সতীর্থ। এই জাদুকরকে ঠেকানোর কৌশল বের করার জন্য তাঁর তথ্য জরুরিও খুব। তবে রাকিটিচ নিজেদের সম্ভাবনা দেখছেন ভিন্ন জায়গায়, ‘আমার কাছে ওর সম্পর্কে যত তথ্য আছে, সব দেব। তবে মেসিকে ঠেকানোর নিখুঁত কোনো উপায় তো নেই। ও বিশ্বের সেরা ফুটবলার। কিন্তু একজন গ্রেট খেলোয়াড় যেমন দলের জন্য দুর্দান্ত এক রেজাল্ট এনে দিতে পারেন, তেমনি এক গ্রেট দল তা পারে আরো ভালোভাবে। আমরা তাই আর্জেন্টিনার চেয়ে একটু নির্ভার থেকেই এই ম্যাচে খেলতে নামব।’
এ জায়গাতেই আর্জেন্টিনার যত দুশ্চিন্তা। মেসির মতো একজন ফুটবলার থাকার পরও দলটি যে একসুরে গেয়ে উঠতে পারছে না। কোচ হোর্হে সাম্পাওলি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১২ ম্যাচের কোনোটিতে পর পর দুই খেলায় একই একাদশ মাঠে নামাননি। আজও বড়সড় পরিবর্তনের আভাস। শুধু খেলোয়াড় না, কৌশলের দিক দিয়েও। হয়তো তিন ডিফেন্ডার ও দুই উইংব্যাক নিয়ে খেলতে নামবে আজ আর্জেন্টিনা। তাতে যদি জয়ের প্রজাপতি ডানা মেলে!
সর্বশেষ তিনটি বড় টুর্নামেন্টেই আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছেন মেসি। ২০১৪ বিশ্বকাপ, ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকা। কিন্তু কোনোবারই তো দলকে শিরোপা জেতাতে পারেননি। এই তিন ম্যাচের কোনোটিতে গোল করতে পারেননি। এর মধ্যে শেষটিতে আবার টাইব্রেকারে মিস করেছেন পেনাল্টি। ঠিক আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের মতোই। তিন টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুললেও শেষের ব্যর্থতাই মনে রেখেছেন সবাই। এই যে বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে দলকে বিশ্বকাপে তুলেছেন, তা এখন আর কার মনে আছে! সবার মুখে মুখে কেবল আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ওই পেনাল্টি মিস।
আজ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তাই মেসির ব্যর্থতার সুযোগ নেই। আর্জেন্টিনার হোঁচট খাওয়ার সুযোগও নেই কোনো। বিশ্বকাপের রংধনুতে আকাশি-নীলের উপস্থিতির জন্যই আজ তাদের রং ছড়ানোর প্রার্থনায় সবাই। পারবেন না মেসি? পারবে না আর্জেন্টিনা?