মায়ের প্রতি এ কেমন আচরণ ছেলেদের!
‘ছেলে আমার মস্ত বড়, মস্ত অফিসার, মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার। নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি। হ্যাঁ নচিকেতার সেই বিখ্যাত গানটি সবার মনে রয়েছে। গানের সাথে বাস্তব জীবনেও অনেকের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর ভিক্ষা করেই ৫ছেলে এবং ১ মেয়েকে বড় করেছেন। ছেলে পেয়েছেন কমিউনিটি ক্লিনিকের চাকরি। বাকি ছেলেরা করেন ব্যবসা ও কৃষি কাজ। কিন্তু ভাগ্য আর বদলায়নি বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের এক ভিক্ষুক মায়ের। তার নাম লতিফা বেগম ওরফে নতিজান (৭০)। ছেলে চাকরি করেন কমিউনিটি ক্লিনিকে, ছেলের বউ ইউপি সদস্য তবুও এক মুঠো ভাত জুটে না তার। বয়োস বাড়ায় রোগে বাঁসা বেঁধেছে শরিরে। তবুও অসুস্থ্য শরিরে ভিক্ষা করেই লতিফা বেগম জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যান্য এলাকার মতো মালঞ্চি বাজারে মাঝে মধ্যে লাঠিতে ভর করে ভিক্ষা করতে দেখা যায় লতিফা বেগমকে। হাত পাতছে মানুষের কাছে। অনেকে আবার বিরক্ত হয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। তীব্র গরম যেন তার কাছে কিছুই নয়, যেখানে তীব্র রোদ আর গরমে বের হওয়া কঠিন সেখানে জীবনের তাগিদে ভিক্ষা করে চলছে সে। এভাবে সারা দিন ভিক্ষা করে যা আয় হয় তা দিয়ে জীবন চালিয়ে নেন তিনি।
মালঞ্চি বাজারে কথা হয় ভিক্ষুক মা লতিফার সাথে। তিনি বলেন, কোন মতে জীবন চলছে। বয়স্ক ভাতায় যে কয়টা টাকা পাই তা দিয়ে চিকিৎসা আর পেটে খাওয়া হয় না। মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে চেয়ে নিতে হয় টাকা, আর ওই টাকা দিয়েই কোন মতে চলে সংসার।
তবে এসময় লতিফা বেগমের চোখে তীব্র আবেগ আর চোখে ছল ছল পানি যেন গড়িয়ে পড়বে। দুঃখ করে বলেন, তার ছেলে ও ছেলের বৌ তাকে কোন ভাত কাপড় দেয় না, তিনি ছেলেদের ভিক্ষা বৃত্তি করে পড়া লেখা করিয়েছেন। এর মধ্যে রফিকুল ইসলাম নামের এক ছেলে কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি করেন। আর সেই ছেলের বউ ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের ইউপি সদস্য। বড় আশা ছিল ছেলে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে মাকে দেখাশুনা করবে, কিন্তু সে আশা ধুলিসাৎ হয়ে এখন ভিক্ষা করে সংসার চালাতে হচ্ছে।
সারা জীবন শ্রম আর কষ্ট করে সংসার আগলে রেখেছিলেন লতিফা বেগম। কিন্তু জীবনে একটু সুখের বদলে পেয়েছেন লাঞ্চনা আর বঞ্চনা। জীবনের শেষ সময়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন বৃদ্ধা মা। ছেলে চাকরি করেও খোঁজ খবর রাখেন না মায়ের। বৃদ্ধ মায়ের বাস্তব জীবনের এমন গল্প যেন সইবার না, এমন মন্তব্য করছিলেন লতিফা বেগমের জীবন কাহিনী শুনার পর উপস্থিত দর্শকরা।
তবে বৃদ্ধ লতিফা বেগমের জীবন কাহিনীর গল্প হয়তো একদিন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু যে ঘৃণা নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, সেটা কি কখনও শুধরাতে পারবে লতিফা বেগম এর ছেলেরা। সারা জীবন অপরাধ বোধ নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে ক্ষণিকের এই পৃথিবীতে। আর যেন লতিফা বেগমের মতো জীবনযুদ্ধে কাউকে নামতে না হয় এমন প্রত্যাশাই যেন সবার।