আদালতে ২০১৮ সালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫০ হাজার
থানায় মামলা করতে যাওয়া বেশিরভাগ সেবাগ্রাহকের মামলা গ্রহণ না করার কারণ অদৃশ্যমান। এছাড়া রয়েছে আইনের ধারা সংক্রান্ত ভোগান্তি। ভোগান্তির কারণে থানায় মামলার সংখ্যা কমেছে। তবে অপর দিকে আদালতে মামলার প্রবণতা বাড়ছে বিচারপ্রার্থীদের। পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আদালতের আমলে নেয়া বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থানায় প্রতিকার চাইতে যাওয়া, ভুক্তভোগীদের অধিকার। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, বলছে ডিএমপি।
গত কয়েক বছরে ঢাকা মেট্রোপলিটনে ঘটনা ও মানুষ বৃদ্ধির হারে মামলার সংখ্যা কমেছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও থানায় অভিযোগ দাখিল করতে যাওয়া আরেকটি ভোগান্তির কারণ। আর, নারী সেবা গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়ে, আরো কয়েকগুণ।
গত ২১ এপ্রিল শিক্ষিকার বাসায় পড়তে যায় ১০ বছরের সানজিদা। ঘন্টাখানেক পর শিক্ষকের বাসায় ফাঁসি দিয়েছে বলে জানতে পারে তার পরিবার। কিন্তু সবাই যখন বলতে চাইছেন- সানজিদা আত্মহত্যাই করেছে তখন তার বাবার প্রশ্ন- শিক্ষিকার বাসায় গিয়েই কেন আত্মহত্যা করবে সানজিদা? এরপর সানজিদার বাবা হত্যা মামলা দায়ের করতে থানায় ধর্ণা দিলেও, মামলা হয় অপমৃত্যুর।
মৃত সানজিদার বাবা বলেছে, তার মেয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে যে অপমৃত্যুর মামলাটি করা হয়। কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই পুলিশ মামলাটি দায়ের করেছে।
অভিযোগকারীরা বলছেন, ‘ওসি নিজে এসে বলছেন, এটা অমানবিক ঘটনা। কিন্তু তিনি অদৃশ্য কারণে এর প্রতিকার করেন নাই। মামলা নিয়েছিলো অথচ মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।
আরও : বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের ৫ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, জরিমানা
ভুক্তভোগীদের আরো একজন অভিযোগ করে বলেছেন, ডিজি করতে থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে ঘুরাচ্ছে। এক রুম থেকে আরেক রুমে যেতে বলছে। একপর্যায়ে আমার কাছে থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করে পুলিশ সদস্যরা বলেন, টাকা দিলে জিডি নিবো নতুবা নিবো না। ভোক্তভুগী বলছেন আমি সাধারণ মানুষ ২০ হাজার টাকা কোথা থেকে দেব।
একজন নারী অভিযোগকারী বলেছেন, থানায় গেলে তাদের তাকানো, দৃষ্টিভঙ্গি সব নেতিবাচক। তারা ইচ্ছে করে বলেন, আর একটু বসেন। সবশেষ আমার মনে হয়েছে যে, তাদের জায়গা থেকে ক্ষমতা দেখাতে চেয়েছে। পরের দিন আমার কাছে থেকে ফোন নম্বর চেয়েছে। অথচ তারা তখনই আমাকে একটা কপি দিতে পারতো।
এসব কারণে থানা থেকে আদালতে যাবার প্রবণতা বেড়েছে বিচার প্রার্থীদের। এর সত্যতা পাওয়া যায় আদালতে মামলার পরিসংখ্যান দেখলে। ২০১৭ সালের প্রতি মাসেই আদালতে মামলা হয় গড়ে তিন হাজার। বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনামূলক চিত্র একই। ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আদালতের আমলে নেয়া বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। আদালত মনে করেন, এসব ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন।
আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব মামলা প্রাথমিক ভাবে থানার গ্রহণ করার কথা ছিলো।
হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আনোয়ার ইসলাম বলেছেন, নারী আর পুরুষ বলে কথা নেই বাংলাদেশি হিসেবে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে মামলা করার। সেক্ষেত্রে নারী ভোক্তভুগীদের প্রতি পুলিশকে আরো সচেতন হতে হবে।
ডিএমপি’র উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, এখানের ভারপ্রাপ্ত যিনি থাকেন তারও একটি অধিকার আছে। তার যদি সন্ধেহ হয় সেক্ষেত্রে তিনি যাচাই বাচাই করে দেখতে পারেন। তার সাথে মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে থানায় কোন ভোগান্তির সৃষ্টি হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। সূত্র : সময় টিভি