‘ওখানে বাতাস নেই, শুধু রক্তের গন্ধ’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চারদিক ভরে গিয়েছে ধোঁয়ায়। বাতাসে তখন শুধু রক্তের গন্ধ। বয়স মাত্র সাত বছর। শৈশবের গণ্ডিকে এখনও পার করেনি। এই বয়সেই মুখোমুখি হতে হলো চরম বাস্তবতার।
ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথাই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে শোয়ার করল মাসা। কীভাবে ভয়ে কাঁটা হয়ে সে আশ্রয় নিয়েছিল বেসমেন্টের একটি কোণায়। সেখান থেকে বেঁচে ফিরে আসার গল্প। সবটাই খোলাখুলিভাবে সংবাদমাধ্যমকে জানাল সে। সম্প্রতি সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার যে ভয়ঙ্কর ছবি সামনে এসেছে তারই প্রত্যক্ষ সাক্ষী মাসা।
একটি ফুটেজে মাসাকে কাঁদতে দেখা যায়। সে সময় তার চিকিৎসা চলছিল অন্যান্য সমবয়সী বাচ্চাদের সঙ্গে। দৌমাতে হওয়া এই অত্যাচারের দৃশ্য বিশ্বের সব মানুষকে স্তম্ভিত করে দেয়। ৭ এপ্রিল ব্রডকাস্ট করা হয় সেই ছবি।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সে জানায়, আমরা দৌমাতে বোমাবর্ষণের সময় একটি বেসমেন্টের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলাম। হঠাৎ তারা একটি ব্যারেল ফেলে দেয়।
যদিও ওই ব্যারেলটি বিস্ফোরণ হয়নি। কিন্তু এর থেকে খুব জোরে শব্দ হয়। ঠিক তখনই কেউ তাকে ওপরে উঠে যাওয়ার কথা বলে। কিছু না ভেবেই সে ওপরে উঠতে শুরু করে।
শেষ ফ্লোরে গিয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার সারা শরীর অবশ হয়ে আসে। মাসা বলে, আমার মা আমার জন্য চিৎকার করতে থাকলে আমার কাকা আমাকে এসে আমাকে উদ্ধার করে। তিনজন ডাক্তার এসেছিল। তারা দৌড়ে এসে আমাকে এবং আমার বোনকে নিয়ে যায়। প্রথমে তারা আমাদের মেডিকেল পয়েন্টটে নিয়ে যায় এবং সেখানে নিয়ে গিয়ে আমাদের পানি ঢেলে পরিষ্কার হয়।
মাসা জানিয়েছে, তারা যখনই ঘুমতে যেত তখনই বোমাবর্ষণ হতো এবং সবাই ধুলোয় ঢেকে যেত। আবার বেসমেন্টে ফিরে যেত তারা। মাসার কথায়, বাতাসে শ্বাস নেয়ার বদলে রক্তের গন্ধ আসত নাকে।
ওই আক্রমণে ৭৫ জনের বেশি লোক মারা গেছে এবং হাজারের বেশি মানুষ উত্তর কোরিয়ায় রিফিউজি ক্যাম্পে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
মাসার মায়ের নাম আমানি। বয়স ৩৪ বছ। সংবাদমাধ্যমকে জানান, পুরুষরা চিৎকার করছিল। এরপরই একটি সাদা মেঘের মতো অংশ যেটা দ্রুতবেগে বেসমেন্টের দিকে ধেয়ে আসছিল। যেটা মাসাসহ তার আরেক মেয়েকে গ্রাস করতে চলেছিল।
মাসা আরও জানায়, গ্যাসটি ছিল ভীষণই ঝাঁঝালো। আমার মায়ের গলা জ্বলতে শুরু করে। আমি বমি করতে এবং কাশতে শুরু করি। কেউ শ্বাস নিতে পারছিল না। অনেকেই মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল।
আমানি বলেন, আমার শরীর কোনোভাবেই কাজ করছিল না। আমি ওপরের দিকে উঠতে শুরু করলে আমার মনে হতে থাকে যে আমি ক্রমশ আমার শক্তি হারাচ্ছি। আমি আমার শরীরকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলাম না। সেখানে কোনোরকম অক্সিজেন ছিল না।
ইব্রাহিম নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, একজন চিকিৎসক তিনি ভেঙে পড়তে দেখেন। কারণ, তার কাছে ওষুধের পরিমাণ ছিল খুবই কম, যেখনে রোগীদের সংখ্যা ছিল ৪০। খবর কলকাতা২৪।