দ. কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্কের ২৪ বছর কারাদণ্ড
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হেকে ২৪ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির দায়ে শুক্রবার এই দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনা ১৮ অভিযোগের মধ্যে ১৬টিতেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলা হয়, পার্ককে এই সাজার পাশাপাশি ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার জরিমানাও করা হয়েছে। রায়ের পুরো কার্যক্রম সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। রায় ঘোষণার সময় পার্ক আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি কারাগারেই ছিলেন।
দণ্ডাদেশ ঘোষণা করে বিচারক কিম সে উন রায়ে বলেন, ‘পার্ক দেশটিতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেও কোনো ধরনের অনুতাপ করেননি।…তাঁকে জবাবদিহির কাতারে রাখতে পারি।’
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ব্লু হাউসের পক্ষ থেকে পার্কের দুর্নীতিকে জাতির জন্য হতাশাজনক বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক প্রথম থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তিনি আদালতকে পক্ষপাতমূলক বলেও অভিযোগ তোলেন। পার্ক এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
রায়ের সময় আদালতের বাইরে পার্কের হাজারো সমর্থক পতাকা হাতে জড়ো হতে দেখা যায়।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম নারী হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন পার্ক। এরপর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। বন্ধু চোই সুন-সিল পার্কের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের নামে সাড়ে ৬৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে স্যামসাং এবং হুন্দাইয়ের মতো কোম্পানিও রয়েছে। ওই অর্থ সন্দেহভাজন একটি ফাউন্ডেশনের নামে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগে বলা হয়, পার্ক এসব ফান্ড থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
এসব অভিযোগ ওঠার পর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার আইন প্রণেতারা পার্ককে অভিশংসিত করার পক্ষে রায় দেন। তখন থেকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা হয়। পরে ২০১৭ সালের ১০ মার্চ পার্ককে সাংবিধানিক আদালত চূড়ান্তভাবে অভিশংসিত করে। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন পার্ক। তবে বেশির ভাগ শুনানিতেই তিনি আদালতে উপস্থিত হতে অস্বীকৃতি জানান। সর্বশেষ এ রায় ঘোষণার সময়ও তিনি আদালতে হাজির হননি।
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কোনো ঘটনা নয়। গত মাসেই আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট লি মিয়ং-বাকের (২০০৮-১৩) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর আগে ২০০৯ সালে দুর্নীতির তদন্তের সময় আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট রোহ মু-হিউন (২০০৩-০৮) আত্মহত্যা করেন। তারও আগে আরও দুই সাবেক প্রেসিডেন্ট চুন ডু-হওয়ান ও রোহ তাই-ওউ ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রদ্রোহ ও দুর্নীতির জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।