মঙ্গলবার, ১০ই এপ্রিল, ২০১৮ ইং ২৭শে চৈত্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বৈশাখী ভাতা

২০১৬ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা বৈশাখী ভাতা পেলেও তা পাচ্ছেন না অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি অষ্টম বেতন কাঠামোয় বেতন পেয়েও বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক- কর্মচারীরা এই ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে হাতেগোনা কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈশাখী ভাতা দেওয়ায় ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ববোধ এবং আন্তরিকতা বাড়ছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘বৈশাখী ভাতাকে সর্বজনীন করা উচিত। শুধু সরকারি কর্মকর্তারা পাবেন, অন্যরা পাবেন না, তা বেমানান। এক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সচেতনতার মধ্য দিয়ে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে বিজিএমইএ-সহ বিভিন্ন চেম্বারের নেতারা ভূমিকা রাখতে পারেন।’ তিনি মনে করেন, বেসরকারি খাতের জন্য এই ভাতা কেবল বাধ্যতামূলক ঘোষণা করলেই হবে না, সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

দুই বছর ধরে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। তবে তা পাচ্ছেন না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক  বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে গত দুই বছর ধরে আমাদের বৈশাখী ভাতা দেওয়ার কথা বলে কেবল আশ্বস্ত করা হয়েছে, কিন্তু আজও পাইনি। এ বছরও কোনও আলামত দেখতে পাচ্ছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘অষ্টম বেতন কাঠামোয় বেতন পেয়েও চার লাখ ২৭ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন না। এই ৪ লাখ ২৭ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বৈশাখী ভাতা দিতে গেলে সরকারের খরচ হবে ২১৬ কোটি টাকা।’ তিনি জানান, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম ১০ এপ্রিলের মধ্যে বৈশাখী ভাতার ঘোষণা না পেলে নববর্ষের দিন কালো ব্যাজ ধারণ করবে। এর আগে ১১ এপ্রিলও কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে।

বৈশাখী ভাতার বিষয়ে গত ৬ মার্চ বৈঠক করেন বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের নেতারা। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে বৈশাখী ভাতা দেওয়া না হলে ১১ ও ১৪ এপ্রিল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীরা কালো ব্যাজ ধারণ এবং ১২ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়।

এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুবিনা আমিন  বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বৈশাখী ভাতার বিষয়ে নতুন কোনও তথ্য আমার জানা নেই।’

জানা গেছে, দেশের গার্মেন্টস খাতসহ অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সরকার বৈশাখী ভাতা দিলেও বেসরকারি উদ্যোক্তারা পারবেন না। এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ। আমাদের খরচ বেড়ে গেছে। দুই ঈদের বোনাস দিতেই আমাদের যে কষ্ট; বৈশাখী বোনাস দেওয়া সম্ভব নয়।’

যমুনা গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (কর্মাশিয়াল) শামসুল হাসান  বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বেসরকারি খাতেও বৈশাখী ভাতা বাধ্যতামূলক করা উচিত। বৈশাখী উৎসব সর্বজনীন। এ কারণে এই উৎসবে ভাতা পাওয়ার অধিকার সবার আছে।’

এ প্রসঙ্গে ট্রমা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজিনা খান  বলেন, ‘সরকারি ঘোষণা না থাকলেও আমরা আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাংলা নববর্ষ ভাতা দিচ্ছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান ২০১৬ থেকেই বৈশাখী ভাতা দিচ্ছে।’

সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ব্যাংকিং খাতের কর্মীরাও বৈশাখী ভাতা পাওয়া শুরু করেছেন। সরকারি ব্যাংকগুলোর মতো একই হারে বেসরকারি খাতের বেশ কিছু ব্যাংক এই ভাতা দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাইম, আল ফালাহ, ইসলামী, ইউনিয়ন, সোস্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, এনআরবি কমার্শিয়াল, শাহজালাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। তবে ডাচ বাংলা ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকে এখনও বৈশাখী ভাতা দেওয়া শুরু করেনি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সভাপতি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার  বলেন, ‘করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই বৈশাখী ভাতা দিচ্ছে। আমার ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক ২০১৬ থেকেই বৈশাখী ভাতা দিচ্ছে।’

এদিকে, সংবাদমাধ্যমে কর্মরতদের বৈশাখী ভাতা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। সম্প্রতি ডিইউজের সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মার্চ মাসের মূল বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা হিসেবে প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও ব্যক্তিমালিকাধীন প্রতিষ্ঠানে বৈখাশী ভাতা প্রদানের জন্য ইতোপূর্বে নির্দেশনা দিয়েছেন।

গত বছর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে উৎসব ভাতা পেয়েছেন প্রায় ২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাংলা নববর্ষকে আরও আনন্দময় করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো চালু হয় পয়লা বৈশাখের উৎসব ভাতা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতনের শতকরা ২০ ভাগ বৈশাখী ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে ২১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এ বাবদ দেওয়া হয়েছিল ৫৫০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে দিতে হয়েছে ৫৮৩ কোটি টাকা।

 

বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email