গরমের শুরুতেই লোডশেডিংয়ের যন্ত্রনায় অতিষ্ট রাজশাহীবাসী
পাপন সরকার শুভ্র, রাজশাহী : গরম পড়তে না পড়তেই রাজশাহী মহানগরসহ আশেপাশের উপজেলায় বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। গরমের শুরুতেই এমন লোডশেডিং হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলছেন, বিদ্যুতের নাকি ঘাটতি নেই তাহলে কেন এত লোডশেডিং? গরম না পড়তেই বিদ্যুতের এই লোডশেডিং কেন হচ্ছে তা তারা খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহের শুরুর দিক থেকে রাজশাহী মহানগরসহ আশেপাশের উপজেলার বেশির ভাগ এলাকাতেই বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। সময়ে অসময়ে ঘন ঘন বিদ্যুতের ভেলকিবাজি। গরম পড়তে না পড়তেই এমন লোডশেডিং হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর প্রায় বেশির ভাগ এলাকাতেই ৭ থেকে ৮ বারেরও বেশি বিদ্যুৎ টেনে নেওয়া হয়। একবার টেনে নেওয়া হলে দীর্ঘ সময় পরে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।
শিরোইল এলাকার নাজমা নামের এক নারী গ্রাহক অভিযোগ করে জানান, গত সোমবার সকালে বিদ্যুৎ টেনে নেওয়া হয়। এরপর দুপুরের দিকে একবার দেওয়া হলেও আবার টেনে নেওয়া হয়। সন্ধ্যার পরে আবার কয়েকবার বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়। এভাবে গভীর রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ যাতায়াত করে। এখনই এমন হলে পরে কি হবে তা বোঝা যাচ্ছে না।
আরেক গ্রাহক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, গরম তো ভালোভাবে পড়েই নি। তাহলে বিদ্যুতের এত লোডশেডিং কেন হচ্ছে? শুরুতেই এত লোডশেডিং হলে পরে এর অবস্থা কি হতে পারে তা কল্পনা করা যায় না।
নগরীর সিটি বাইপাস এলাকার নাজমুল নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, গত এক সপ্তাহ থেকে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এ সময় কেন লোডশেডিং হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। তাই তিনি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, আমি কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে কাজ করি। কিন্ত বিদ্যুতের কারণে কাজ ঠিকমত করা যাচ্ছে না।
এদিকে, সময়ে অসময়ে বিদ্যুৎ টেনে নেওয়ার কারণে ব্যাপক হয়রানির মধ্যে পড়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় জিনিস ফটোকপি করতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ফটোকপি করাতে পারছেনা। আবার কম্পিউটারে দোকানেও অনলাইনে কোন কাজ করাতে এসেও একই সমস্যার মধ্যে পড়ছেন তারা। এভাবে তাদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
নগরীর সাহেব বাজারে জুলেখা খাতুন নামের রাজশাহী কলেজের এক ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমি অনলাইনে একটি চাকুরীর আবেদন করবো এজন্য কম্পিউটারের দোকানে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকার কারণে তা করতেপারছি না। তিনিও এ সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং হওয়ার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সাহেব বাজার মনিচত্বরে ফটোকপি করতে আসা এক রনক নামের রাজশাহী কলেজে পড়ুয়া আরেক ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমি এক ঘণ্টা ধরে ফটোকপি করার জন্য দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। বিদ্যুৎ না থাকার কারনে ফটোকপি করতে পারছি না। এভাবে কত সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে তা জানি না।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে ফটোকপি ও কম্পিউটারে কাজ করা এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ার কারণে ব্যবসা ভাল হচ্ছে না। তাই আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কারণ কাজ বেশি না হলে আয় কম হয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিদ্যুতের নাকি ঘাটতি নেই তাহলে কেন এত লোডশেডিং?
নগরীর সাগড়পাড়া এলাকার এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন বেশ কয়েক বার করে বিদ্যুৎ টেনে নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের যাতায়াত যেন লেগেই থাকছে। এ কারণে সাধারণ কাজকর্মতেও বিরুপ প্রভাব পড়ছে।
রাজশাহী পিডিবির তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসিনা দিলরুবা বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং নেই। প্রজেক্টের কাজ চলছে। বিভিন্ন এলাকায় ট্রান্সফরমার বসানোর কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ নিরবিচ্ছিন্ন দেওয়া সম্ভব হবে। শাটডাউন করে কাজ করতে হয় এ কারনে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় তার ছিড়ে নিরবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে সেগুলোও মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।