আচার বেশি খেলে বিপদ
লাইফস্টাইল ডেস্ক : আচার দেখলেই অনেকের জিভে জল চলে আসে। কিন্তু নিয়মিত বেশি পরিমানে আচার খাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, আচার বানাতে যে পরিমাণ তেল এবং লবণ ব্যবহার করা হয়, তা শরীরে প্রবেশ করার পর শুধু যে হার্টের ক্ষতি করে, তা নয়। সেই সঙ্গে দেহের বাকিসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের উপরও খারাপ প্রভাব পরে। যেমন-
* খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় : আচার বানাতে অনেক বেশি মাত্রায় তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর এই পরিমাণ তেল শরীরে প্রবেশ করলে কি হতে পারে জানা আছে? এমনটা হতে থাকলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই করোনারি আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও বাড়ে। বেশি মাত্রায় আচার খাওয়া চলবে না। খুব ইচ্ছা করলে দিনে ১-২ চামচ চলতেই পারে। কিন্তু তার বেশি আচার খাওয়া মানেই কিন্তু হার্টের বিপদ!
* নানাবিধ গ্যাস্ট্রিক সংক্রান্ত সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে : আচারে প্রচুর পরিমাণে মশলা থাকে। নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত হারে আচার খেলে তা পেটের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সাবধান থাকাটা জরুরি। অতিরিক্ত মশলাদার খাবার খেলে তা যেমন সহজে হজম হতে চায় না, ঠিক তেমনিই আচারও শরীরে প্রবেশ করার পর হজম ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস-অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
* রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় : আচারে তেল এবং মশলার পাশপাশি প্রচুর মাত্রায় লবণও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই পরিমাণ লবণ শরীরে প্রবেশ করতে থাকলে দেহের ভেতরে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সোডিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর এমনটা হওয়া মাত্র ব্লাড ভেসেলের দেওয়ালের ওপর এত মাত্রায় চাপ তৈরি হতে থাকে যে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরে পানির মাত্রা বেড়ে গিয়ে আরো নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই যারা ইতিমধ্যেই হাই ব্লাড প্রেসারের মতো রোগে ভুগছেন, তারা আচার থেকে দূরে থাকাই ভালো।
* কিডনি ফাংশন কমে যায় : একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে আচারে উপস্থিত নানাবিধ ক্ষতিকর উপাদান কিডনির ওপর মারাত্মক চাপ ফেলতে থাকে। সেই সঙ্গে আচারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করা অতিরিক্ত লবণ বের করে দেওয়ার জন্যও কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে এই অঙ্গটির কর্মক্ষমতা কমে যেতে থাকে। সেই সঙ্গে নানাবিধ কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। তাই সাবধান!
* মেটাবলিজম রেট কমে যায় : আচারে থাকা তেল এবং লবণ বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করতে শুরু করেল স্টমাক ফাংশন বিগড়ে যায়। সেই সঙ্গে পাচক রসের ক্ষরণও ঠিকমতো হয় না। ফলে একদিকে যেমন নানাবিধ পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়, তেমনি মেটাবলিজম কমে যাওয়ার কারণে ক্ষিদেও কমে যেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে বেশি মাত্রায় আচার খেলে ডায়ারিয়ার মতো রোগে বারংবার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
* গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার : একাধিক গবেষণায় এমনটা দেখা গেছে বেশি মাত্রায় ঝাল আচার খেলে পেটের ভেতরের অবস্থা এতটা খারাপ হয়ে যায় যে এই বিশেষ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। অল্প বিস্তর আচার খাওয়া চলতেই পারে। কিন্তু ভুলেও বেশি মাত্রায় খাওয়া চলবে না।
* পুষ্টিগত কোনো উপকার মেলে না : অনেকেই মনে করেন ফল এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান দিয়ে আচার বানানো হয় বলে এই মুখরোচক খাবারটি খেলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। বাস্তবে কিন্তু এমনটা একেবারেই হয় না। কারণ আচার বানানোর সময় যে পদ্ধতিতে ফল এবং সবজিকে শুকিয়ে নেওয়া হয় তাতে এইসব প্রাকৃতিক উপাদানগুলোতে উপস্থিত বেশিরভাগ পুষ্টিকর উপাদানই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আচার খেলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তো দূর হয়ই না, উল্টে অতিরিক্তি মাত্রায় তেল এবং লবণ প্রবেশ ঘাটার কারণে নানাবিধ শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।