ঐতিহাসিক মোক্তার ও প্রথিতযশা রাজনীতিক আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া
তারিকুল ইসলাম সেলিম : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরাট ঐতিহাসিক ব্যক্তিরাও আজ জেলার ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছে । তাঁরা ইতিহাস থেকে ধীরে ধীরে বিস্মৃতি মতোই জাঁপসা । মেঘনা-তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যুগে যুগে এমন কিছু মানুষ জন্ম হয়েছেন যাঁরা স্বপ্রতিষ্ঠ কর্মে আপন পরিচয়ে বাঙালী সমাজে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতোই দেদীপ্যমান । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংস্কৃতিতে রয়েছে শতশত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এ ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমন কিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও অঞ্চলের অবদান আছে যা অনেকেই জানে না । শতশত বছরের লালিত আমাদের অতীত ঐতিহ্যকে বর্তমানের কাছে তুলে ধরায় হলো ইতিহাস। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপর বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে । এসব গ্রন্থের কোন পৃষ্ঠায় খুঁজে পাওয়া যায় না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহাসিক মোক্তার, প্রতিথযশা রাজনীতিক ও শিক্ষা সংস্কারক মহকুমা মুসলিম লীগের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার জীবন ও কর্ম প্রসঙ্গে কথা ।
কদাচিৎ দুই একটি বইয়ে দুর্বিক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা মিললেও একটি মূল্যবান সংকলনে তাঁর নাম লেখায় ভুল হয়েছে । ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল মান্নান সম্পাদিত সাহিত্যে – সংস্কৃতি বিষয়ক “সরোদ” নামে একটি সংকলনে প্রফেসর মোঃ মুখলেছুর রহমান খানের লেখা ‘উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ’ প্রবন্ধে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা অন্যতম আব্দুল “হামিদ” ভূঁইয়ার নামটি প্রিন্টিং মিস্ট্রিকের কারনে আব্দুল “হাকিম” ভূঁইয়া হয়েছে । অর্থাৎ মাত্র দুটি অক্ষর ভুলে হামিদ-এর জায়গায় হাকিম লেখায় মহান এই ব্যক্তি সরোদ সংকলন থেকে হারিয়ে গেল, কিন্তু খুঁজে পাওয়া গেলনা হাকিম নামে কোন ব্যক্তিকে । সরোদ সংকলনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপর লেখা একটি অমূল্য সম্পদ । সরোদ সংকলন থেকে যদি কেউ কলেজ ইতিহাস সম্পর্কে জানতে ও লিখতে চান তাহলে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা অন্যদের নাম সঠিক হলেও আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া’র নামটি ভুল হবে। তাতে মানুষ ভুল লেখায় যেমন ভুল ইতিহাস জানবে। তেমন ভুল সংশোধন না হলে লেখকের লেখায়ও মারাত্মক ভুল থেকে যায় । ইতিহাসটি ভুল হলে পাঠক যেমন ভুল পড়বে আগামী প্রজন্মও ভুল থেকে ভুল শিখবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিবৃত্ত গ্রন্থে মোহাম্মদ মুসা’র লেখা “যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ” এখানে মরহুম আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া (সম্পাদক- মহকুমা মুসলিম লীগ), সঠিকভাবে উল্লেখিত হয় । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস গবেষক ও লেখকদের আগামী ও বর্তমান প্রজন্মের কাছে কলেজ প্রতিষ্ঠার একটি নির্ভুল ইতিহাস রচনার স্বার্থে “সরোদ” সংকলন থেকে ভুল সংশোধ করে আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার নাম ও তাঁর ভূমিকা সঠিকভাবে তুলে ধরবেন এটাই সবাই প্রত্যাশা করে ।
আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার জীবন ও কৃতি সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্তমান প্রজন্মের তরুন-তরুনীরা প্রায়ই সবাই অনবহিত । এজন্য যাঁরা এগিয়ে আসার কথা তারা আসেনি । প্রবীণরাও তাঁর সম্পর্কে আমাদের এই প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়া জন্য এগিয়ে আসছে বলেও আমার মনে হয়নি । যে কারনে তাঁর সম্পর্কে জানা বা বুঝার ইচ্ছা থাকলেও তা সহজেই পারা যাচ্ছে না । সময়ের বিবর্তনে এই গুণী মানুষগুলো ইতিহাসের ধূলোর আবরনে হারিয়ে যাচ্ছে । অথচ একটু চেষ্টা করলেই তাদের তুলে ধরতে পারি নতুন প্রজম্মের কাছে। যার উপর ভর করে অমরতা পাবে আমাদের পূর্বসূরি প্রিয় মূখগুলো । চলুন আমাদের সাধ্য মতো এসব মহান মানুষগুলোর জ্ঞান ও কর্মের উপর লেখালেখি করে বর্তমান প্রজন্মকে তাদের সম্পর্কে জানার একটা সুযোগ করে দেয় । আমাদের এ অঞ্চলের পঞ্চাশ দশক থেকে যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করেছে তাঁদের প্রায় বেশির ভাগই তাঁর কাছে অশেষ ঋনের দায়ে আবদ্ধ । আমার এ লেখায় ঋন স্বীকারের সামান্যতম প্রয়াস ।
আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ইসলামী চিন্তাধারা, দার্শনিক, বিচক্ষণ রাজনীতিক এক মহান ব্যক্তিত্ব । তার দক্ষতা, প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতা ছিল বিরল । ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, রাজনীতি আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে জ্ঞান ও গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন । সব সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও ইবাদত বন্দেগী করেছেন । এজন্য তাঁর নামের আগে অনেকে “মৌলভী” যুক্ত করে সম্বোধন করতেন । পোশাক আশাক বেশ বুশাও সব সময় ঐরকম ছিল । মৌলভী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ধর্মপরায়ণতায় এমন একজন মহৎ মানুষ ছিলেন যিনি সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন । অভিজাত ব্যক্তিত্বের অধিকারী মৌলভী আবদুল হামিদ ভূঁইয়া ১৯০৪ সালে ভাটি বাংলার সংস্কৃতির রাজধানী ত্রিপুরা (তদানিন্তন) জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার আশুগঞ্জ (বর্তমান উপজেলা)’র কৃতি-সন্তানদের খনি রত্নগর্ভা নাওঘাট গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছিলেন । বাবা মোঃ সেকান্দর আলী ভূঁইয়া ছিলেন একজন স্বর্নিভর কৃষক। পুঁথি পাঠে তিনি যথেষ্ট স্বযশী ছিলেন । পুঁথি-সাহিত্যের উপর ভর করেই ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে বিদ্যানুরাগী হন । নিজে একজন বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিত্ব ছিলেন বিধায় তাঁর সন্তানদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন । তাঁর এই আকাঙ্ক্ষা অসম্পূর্ণ থাকেনি । তাঁর উত্তরাধিকারদের মধ্যে তিনি জ্বালিয়ে দিতে পেরেছিলেন শিক্ষার আলো। আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন । মৌলভী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া নাওঘাট জুনিয়র স্কুলে পড়ালেখা করেন। আড়াইসিধা মাইনর স্কুলে গিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা দেন । সেকালে পুরো আশুগঞ্জের একটি মাত্র আড়াইসিধা বৃত্তি পরীক্ষার সেন্টার ছিল । বৃত্তি পেয়ে স্কুল জীবনে ব্যাপক প্রশংসিত হন । তারপর ভর্তি হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ অন্নাদা হাই ইংলিশ স্কুলে সেখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন ।
কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের অধীনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোক্তারশীপ পাস করেন । তারপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা আদালতে এসে মোক্তারি পেশা শুরু করেন । প্রহর মেধাশক্তির অধিকারী আবদুল হামিদ ভূঁইয়া ২১ বছর বয়সে তাঁর মোক্তারি পেশা শুরু করেন । আইন পেশায় তিনি ছিলেন অর্ত্যান্ত সফল একজন মানুষ । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খ্যাতিমান মোক্তার হওয়ায় তাঁর নাওঘাট পৈতৃক বাড়ি ‘মোক্তার বাড়ি’ নামে পরিচিতি ও সুখ্যাতি পান । পেশায় আইনজীবি হলেও তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুসলিম লীগের রাজনীতি প্রাণপরুষ । আইন পেশার পাশাপাশি মুসলিম লীগের রাজনীতিতে তিনি সমান্তরাল শক্তিধর হয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন । মূলত কলকাতা থেকেই তাঁর রাজনীতি জীবনের সূত্রপাত ঘটে । ১৯৩৩ সালের শুরুতে কায়েদে ই আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অবিভক্ত ভারত মুসলিম লীগের দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বে থেকেই মুসলিম লীগ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যোগাযোগ শুরু হয় । ১৯৩৬ সালে তিনি মহকুমা মুসলিম লীগের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত হন । ঐ সময় মহকুমা মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খ্যাতিমান উকিল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুর রউফ বিএল । মৌলভী আব্দুল হামিদ ভূইয়া ১৯৩৬ সালে থেকে আমৃত্যু ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন । ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অবিভক্ত বাংলাকে আলাদা রাষ্ট্র করার প্রস্তাব করেন ।
ঐসময় মহকুমা মুসলিম লীগের সভাপতি আব্দুর রউফ বিএল, সেক্রেটারি আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া, মুসলিম লীগ নেতা মৌলভী জিল্লুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর চেয়ারম্যান ও মুসলিম লীগ নেতা আজিজুর রহমান মোল্লা-সহ প্রমুখ নেতাদের নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তখন মুসলিম লীগের প্রবল জনস্রোত । ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নিবর থাকার কারণে পরবর্তীতে কংগ্রেস নেতারা প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করেন । তারপরই মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবীতে মুসলিম লীগের নেতাদের যুদ্ধাংদেহী মনোভাবই গন-মানুষের মাঝে দলটির আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এনে দেয় । ঐবছর অর্থাৎ ১৯৪৬ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগকে বাংলা প্রদেশের ক্ষমতায় এনে বসায় । ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট সুবিশাল ভারতীয় উপমহাদেশ ভেঙ্গে পাকিস্তান নামের একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয় । স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর স্বাভাবিকভাবেই ধরা হয়েছিল যে মুসলিম লীগ দেশটির জাতীয় রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে । টানা সাত বছরের মত ক্ষমতায় থাকার পর ১৯৫৪ সালের ৮ই মার্চের জেনারেল ইলেকশনে প্রথমবারের মত পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, এবং যুক্তফন্টের কাছে সূচনীয়ভাবে হেরে যায় পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ ।
গবেষকদের মতে, তাদের জনপ্রিয়তায় হ্রাসের একটি প্রধান কারণ পূর্ব বঙ্গের অনেক ক্যারিশমেটিক নেতা, যারা একসময় মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন, তাদের দলটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া । সে তালিকাটি বেশ দীর্ঘ – এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানি, হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমাদ, এবং শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম । মুসলিম লীগের প্রতি জনসাধারণের অনাস্থা তৈরিতে এই নেতাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল । উল্লেখ্য যে উপরোল্লেখিত নেতারা মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে ২৩শে জুন ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন । মাত্র একদিন পরেই ২৪শে জুন ১৯৪৯ সালে পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সর্বপ্রথম যে শাখা কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেটা ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা শাখা । মৌলভী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার কর্মক্ষেত্র এবং রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘদিনের সহযাত্রী ও বন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল বারী উকিল সভাপতি ও রফিকুল ইসলাম মাস্টার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন । রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবর্তন থাকলেও তাঁরা একজন অন্যজনকে অসম্ভব সমীহা করতেন । আদালতের কর্ম-সমাপ্তির শেষে প্রায়ই চা চক্রে দীর্ঘ সময় আড্ডা দিতেন । তখনকার সময় পুরো পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে রাজনীতির নতুন সমীকরণে বিভাজন সৃষ্টি হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও সহমর্মিতার রাজনীতির চর্চা ছিল ।
সেকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুবিখ্যাত ব্যক্তি ও খ্যাতনামা মোক্তার আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ছিলেন শারীরিক ও দৈহিক দিক থেকে ছোটখাটো অথচ অসাধারন সুদর্শন ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন স্বপুরুষ । গায়ের রং ফর্সা, সব সময় আচকানা-পায়জামা ও জিন্নাহ টুপি পরিহিত অবস্থায় তাকে অনেক চমৎকার ও আকর্ষণীয় মনে হতো । পেশায় মোক্তার হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বহু উকিল মোক্তারের চেয়েও অনেক বেশী খ্যাতিমান ছিলেন । মহকুমা হাকিম তাঁকে ন্যায় বিচারক বলে সমীহ করতেন । তাঁর উপস্থিতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পশ্চিমঞ্চল থেকে কেউ অভিযোগ নিয়ে আদালত পাড়ায় এলে তিনি তাঁদের সহজে মামলা মোকাদ্দমা করতে দেননি । তিনি ভালো করেই উপলব্ধি করতেন যে কোট-কাচারিতে মামলা মোকাদ্দমা হলে ব্যক্তিগত জীবনে ও সামাজিক ভাবে এ অঞ্চলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে ।
তাই তাদের বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন । আদালতের কাজ শেষ করে এলাকায় চলে আসতেন এবং ততসময়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উভয় পক্ষের আলাপ আলোচনা শুনে আপোস মিমাংসা করতেন । সে সময় তিনি কোন বিষয়ের উপর কথা বললে সবাই তাঁর কথা সহসায় মেনে নিতো । মহকুমা প্রশাসন থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায় থেকে যাঁরাই আসতেন তাঁর স্মরনাপন্ন হতেন । তিনি বড়ই মহৎ উদ্যোগী মানুষ ছিলেন । গুণী এই মণীষীর জন্য কোর্ট কাচারিতেই শুধু নয়, সমগ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই এ এলাকা সুনাম বৃদ্ধি পেয়ে ছিলো । এছাড়াও মুসলিম লীগের রাজনীতির নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি, নাম, যশ খ্যাতি আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল । মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, নবাব খাজা নাজিমউদ্দিন, মাওলানা তমিজউদ্দিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী থেকে শুরু করে অবিভক্ত ভারতের মুসলিম লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে তাঁর ছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ । মুসলিম লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা মহকুমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসলে তাঁর উদ্যোগে বৈঠক হতো । এবং তার মৌলভীপাড়া বাসগৃহে রাত্রি যাপন করতেন। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথেও তাঁর চৎমকার সুসম্পর্ক ছিল ।
১৯৩৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসডিও ছিলেন পাঞ্জাবের কৃতিপুরুষ নিয়াজ মোহাম্মদ খাঁন (আইসিএস), তিনি এন এম খাঁন নামে পরিচিত ছিলেন । তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বহু উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ইতিহাসখ্যাত হয়ে আছেন । জনহিতিকর কাজের জন্য আজও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসির মনে অমরত্ব হয়ে আছেন । আব্দুল হামিদ ভূইঁয়া ও এন এম খাঁনের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহু শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়নে তারা সব সময় সহযোগী ও উদ্যোগী ছিলেন । ততসময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনদের সাথে এন এম খাঁনসহ একটি গ্রুপ ছবিতে দেখা যায় এন এম খাঁনের ডানপাশে মৌলভী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া আচকানা-পায়জামা ও জিন্নাহ টুপি পরিহিত অবস্থায় বসেছেন। জেলার অনেক ঐতিহাসিকদের মতে মুহকুমা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষা, সামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের কোন এক গুরুত্বপূর্ণ সভার পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে এক ফ্রেমে ক্যামেরায় বন্দি হয়েছিলেন । এন এম খাঁন, মাসুদ আহম্মদ, সুলতান আহম্মদ-সহ পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা প্রশাসকের দায়িত্বে যাঁরাই এসেছিলেন তাঁদের সাবার সাথেই হৃদতাপূর্ণ সম্পর্ক অটুট ছিল ।
আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া গুণীমহলে বহুৎ সম্মানীয় একটি নাম । একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি হিসেবে দেশ ও জাতি গঠনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বিপুল জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । দেশ বিভাগের পরে ১৯৪৭ সালে জেলা বিদ্যালয় বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন । তিনি শিক্ষা বিস্তারে সারা জীবন কাজ করে গেছেন । মেঘনা-তিতাস বিধৌত এ জনপদকে শিক্ষা -দিক্ষায় অগ্রসরে যে ঐতিহাসিক ব্যক্তিগণ তৎপর ছিল তাদের মধ্যে আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার ভূমিকা অনাদিকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে ছিলেন বিশিষ্ট । বিশেষ করে তাঁর প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও প্রেরণায় শহর ও গ্রামে গড়ে উঠে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । ১৯৪৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া (বর্তমানে সরকারি) কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এই খ্যাতিমান পথিকৃত । তিনি ১৯৪০ সালে পশ্চিম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালশহর হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উদ্যোগতা ছিলেন এবং ১৯৪২ সালে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মূক বধির হাই স্কুল প্রতিষ্ঠাতাকালীন উদ্যোগতাদের একজন হয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন । ১৯৪২ সালে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠার সাথেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন । ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গর্ভেমেন্ট গালর্স হাই স্কুল। ১৯৪৯ সালে তালশহর করিমিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, নাওঘাট দক্ষিনপাড়া ( মাগুড়া ) মসজিদ-সহ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার সময় তাঁর শ্রম ও একাগ্রতা সর্বজন-বিদিত ।
তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের গর্ভেনিং বডির সভাপতি ও আন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়, সারোজনীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গর্ভেনিং বডির সদস্য ছিলেন । এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ, অন্নাদা হাই স্কুল, নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাই স্কুল, গর্ভেমেন্ট গালর্স হাই স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন । তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোক্তার সমিতির সেক্রেটারি ছিলেন । জেলা পরিষদের সদস্যপদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এছাড়া তিনি সামাজিক, রাজনীতিক ও স্বেচ্ছাসেবী মূলক বহু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন ।
মৌলভী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৌলভীপাড়া নিজ বাড়িতে স্বপরিবার নিয়ে বসবাস করতেন । মৌলভীপাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের অন্যসব পাড়া-মহল্লার চেয়ে ছিল বিশিষ্ট । অভিজাত এলাকা হিসেবে মৌলভীপাড়ায় পূর্বকাল থেকেই শহরের খ্যাতিমান মণীষীরা বসবাস করতেন । খ্যাতিমান রাজনীতিক ও মোক্তার আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া একজন উচ্চু সমাজের মানুষ হলেও সাদামাটা জীবন-যাবন করতেন । বিত্তবিলাস, লোভ-লালসা, হিংস্রা-বিদ্বেষ বিন্দুমাত্রও রেশ তাঁর মধ্যে ছিলনা । তিনি খুব সহজেই মানুষকে কাছে টেনে আপন করে নিতে পারতে । সমাজের সবার সাথে মিশে যেতেন । বয়সে পোড়পড়া প্রবীণ মুরুব্বিরা বলতেন তিনি ক্রোধের ভাষায় কখনও কারো সাথে কথা বলছেন এমনটি কোনদিন শুনেনি ।
এলাকার সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন সকলের মধ্যেমণি । তাঁর প্রাণবন্ত অতিথেয়তা ও আন্তরিক ব্যবহারে মানুষ মুগ্ধ হয়েছেন। গ্রামের থেকে মানুষ তাঁর সাথে দেখা করার জন্য মৌলভীপাড়ার বাড়িতে এলে তিনি তাদের খাওয়া-দাওয়া না করে কখনও আসতে দিতেন না । এমনকি কোন কাজের কেউ শহরে আসলে তাঁর সাথে রাস্তা ঘাটে দেখা হলে বাসায় নিয়ে যেতেন এবং এক সঙ্গে বসে খাবার খেতেন । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহাসিক মোক্তার বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজসেবক আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া দানশীলতায় অনেক বিখ্যাত ছিলেন । গরীব দুখী মানুষ থেকে শুরু করে বিয়ে সাদী, অসুখ-বিসুখে তিনি সব সময় তাঁর হাত বাড়িয়ে দিতেন । বহু শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রচুর দান করেছেন । বিশেষ করে সাধারণ ও দরিদ্র পরিবারের অসংখ্যা ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার জন্য প্রচুর পরিমাণ সাহায্য সহযোগীতা করেছেন । তাঁর মৌলভীপাড়ার বাড়িতে প্রতি বছর ৫ থেকে ৭ জন ছাত্র-ছাত্রীকে মাস-দেড়েক রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও অন্নাদা উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়াতেন ।
শিক্ষা বিস্তারে উদার মানসিতাকতার এক অন্যন্যা নজির রেখে গিয়েছেন তিনি । তাঁর কল্যাণে নাওঘাট গ্রামে শিক্ষার্থীদের এক জাঁকজমকপূর্ণ মিলন মেলায় পরিনত হয়েছিল । দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এক সময় এসে সমগ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উচ্চ শিক্ষার প্রথম স্থানে নাওঘাট গ্রাম একক ছত্র অধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয় । পূর্বপুরুষদের এই ধারাবাহিকতা এখনো ধরে রেখেছে এ গ্রামের ছেলে-মেয়েরা। তিনি সব সময় চিন্তা করতেন অন্ধকার থেকে এলাকাবাসিকে কিভাবে আলো পথে নিয়ে আসা যায়। এজন্য বলতেন নাওঘাট গ্রামকে সম্মানের এক উচ্চতায় পৌঁচ্ছাতে হলে প্রতি ঘরে ঘরে সু শিক্ষার বাতি জ্বালাতে হবে । সব সময় মাটি ও মানুষের কল্যাণ কাজ করে গেছেন । এই মহান মনীষীর স্মৃতি রক্ষায় পিতার আদর্শে মানুষ হওয়া তাঁর যোগ্য উত্তরসূরিরা ২০০৩ সালে নাওঘাট গ্রামে আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে । বছরের প্রতিদিনই কয়েকটি গ্রামের হত-দরিদ্র চিকিৎসা বঞ্চিত অবহেলিত শতশত মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে । এছাড়াও সব সময় সমাজের অবহেলিত এবং অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছে আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ।
মৌলভী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার ব্যক্তি এবং পারিবারিক জীবন ছিল সুখী ও সমৃদ্ধ । বড় মেয়ে শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবিকা বেগম শামসুন্নাহার । যেকালে মুসলিম সমাজের মেয়েদের লেখাপড়া করা ছিল অত্যন্ত দুরুহ একটা ব্যাপার তেমনি কঠিন ছিল নারীদের ঘর থেকে বেড় হওয়া । পর্দাপ্রথা, সামাজিক অনুশাসন, ধর্মীয় গোঁড়ামি এ সবই ছিল নারী শিক্ষার বিরাট প্রতিবন্ধিকতা । সেকালে এই মহিয়সী নারী মুসলিম সমাজের নারী শিক্ষার প্রতিরুদ্ধ প্রাচীর ভেঙ্গে সারা জীবন মানুষ গড়ার কাজে মানষ্যত্বের জাগরণ ঘটিয়েছেন । তিনি সর্বপ্রথম নারী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন ।
১৯৪৬ সালে কলকাতার লেডি ব্রার্বোন কলেজ থেকে বি,এ পাস করেন । তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাব ডিভিশন (বর্তমান জেলা)’র মধ্যে প্রথম বি, এ পাস নারী এবং পরবর্তী একযুগ অর্থাৎ ১২ বছরের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্য কোন নারী বি,এ পাস করেনি । অথচ তাঁর নামটিও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোন ইতিহাস গ্রন্থে খুঁজে পাওয়া যায় না । এখানো এই মহিয়সী নারীর প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখানো হয়েছে । বেগম শামসুন্নাহার-এর ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ছিলেন একজন প্রকৌশলী এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক হিসেবে তিনি অবসর গ্রহন করেন । তাকে বলা হতো এতদয়ঞ্চলের সাধারণ ও শিক্ষিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লাকি কয়েন । তিনি রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক থাকাকালে অসংখ্যা মানুষ কে চাকুরী দিয়ে ক্যারিয়ার জীবনে সফল হয়েছেন । দ্বিতীয় ভাই মরহুম আতিকুল ইসলাম ভূঁইয়া উত্তরা ব্যাংকের জি,এম হিসেবে চাকুরীরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন । তৃতীয় ভাই পানি বিজ্ঞানী ড. সাদিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সিভিল ইঞ্জিনিয়ার । তিনি ফিলিপাইনের ম্যানিলায় সায়েন্টিফিক কর্মকর্তা ছিলেন । তিনি পানি ও ধান গবেষণার ওপর দেশ-বিদেশে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে অংশ গ্রহন করেন এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন। ছোট বোন আশরাফুন্নাহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন এবং হল্যান্ডে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন । আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার নাতি পুঁতিরাও কর্মজীবনে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ।
আমাদের সমাজকে অনেক কিছুই দিয়েছেন তিনি । কিন্তু নেই তাঁর স্বপ্ন পরিপক্কতা, পরিণতিপ্রাপ্তির বহুপূর্বে মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালে নভেম্বর মাসে ক্ষয় (যক্ষা) রোগে আক্রান্ত হয়ে পরপারে পাড়ি জমান । তাঁর মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গুণীমহল থেকে শুরু করে সর্বোস্থরেই নেমে আসে শোকের ছায়া । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংবাদপত্রগুলোতে ফলোও করে ছাপিয়েছিলো এই গুণী মানুষটির মৃত্যুর সংবাদ । শহর ও গ্রামে দুই দফা জানাযা নামাজ শেষে সবুজ-শ্যামল, সুজলা-সুফলা প্রিয় জন্মভূমি নাওঘাট গ্রামে চির-নিদ্রায় সমাহিত করা হয় ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমাজ, সংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জীবন তাঁদের প্রভাব অনস্বীকার্য । দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবক ও শিক্ষা সংস্কারক আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার জীবন ও কর্ম মানব সভ্যতার ইতিহাসে অনেক বেশি গুরুত্ববহন করে । এসব মানীষীর জীবন ও কর্মের উপর কেউই তেমন আলোকপাত করনি। তাঁর মতো বিরল ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ জীবনী সমাজের স্বার্থে রচিত হওয়া উচিৎ ।
লেখক: লোক-সাহিত্যনুরাগী, রাজনীতিক কর্মী ও সংগঠক।