সোমবার, ১৮ই জুন, ২০১৮ ইং ৪ঠা আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

কসবা উপজেলার পটভূমি

কসবা ফরাসী শব্দ। কসবা শব্দটির অর্থ উপশহর বা জনপদ। ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনামলে ১৩৩৮ খিস্ট্রাব্দে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে কৈলাঘর নামে একটি দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। ঐ দূর্গের আশে পাশে প্রথম দিকে জনবসতি এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে ছোট শহর কসবা গড়ে ওঠে। সেজন্য কৈলাগড় থেকে কসবার উৎপত্তি। রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে কৈলাগড় দূর্গের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
অবস্থানঃ
একেবারে পূর্বপ্রান্তে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিশালগড় থানার পশ্চিমে সীমান্তবর্তী কসবা উপজেলা। কসবা উপজেলার উত্তরে আখাউড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা, দক্ষিণে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা, পশ্চিমে কুমিল্লা জেলা এর মুরাদনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা ও পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য।
আয়তনঃ
প্রায় ২০৯.৭৬ বর্গ কিলোমিটার স্থান নিয়ে গঠিত হয়েছে কসবা উপজেলা।
ভৌগোলিক পরিবেশঃ
বাংলাদেশের প্রায় সকল ভৌগোলিক উপাদান ও বৈশিষ্ট্য এখানে পরিলক্ষিত হয়। বিস্তীর্ণ সমভূমি, নিচু ভূমি, জলাশয়, উচ্চ ও অনুচ্চ পাহাড়, লাল মাটির পাহাড়, নদী-নালা, খাল বিল পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলা ভূমি। সমগ্র কসবা ছিল নূরনগর পরগনার অন্তর্ভূক্ত। তিতাস, সালদা, বিজনা, সিনাই, সাঙ্গুর, বুড়ি, কালিয়ারা নদী একে বেকে কসবার মধ্যে অতিক্রম করে গেছে। এ উপজেলার পূর্বপ্রান্তে রয়েছে লাল মাটির পাহাড়ী টিলা ভূমি। ছোট ছোট টিলার সবুজ বনানী আর পশ্চিম প্রান্তে সমতল ভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক ঐতিহ্যবাহী স্থান কসবা উপজেলা যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, সবুজ গাছপালায় ঢাকা গ্রাম, পাহাড়ী টিলার সবুজ বনানী কসবার প্রকৃতিকে করে তুলেছে অপরুপ। আদি বসতির বিভিন্ন নিদর্শন, ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে গড়ে উঠেছে কসবা উপজেলা।
উপজেলার সার্বিক তথ্যাদিঃ
ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর অন্তর্গত। এ উপজেলায় গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত এই তিনটি ঋতুর প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মে মাসে ৩০ ডিঃসেঃ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ডিঃসেঃ পরিলক্ষিত হয়। জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ ও স্বাস্থ্যকর। বার্ষিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১১৪.৬৫ ইঞ্চি এবং সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত ৫৬.৪৩ ইঞ্চি এবং গড় বৃষ্টিপাত ৭৮.০৬ ইঞ্চি।
প্রশাসনিক বিন্যাস
এই উপজেলাটি ১০ টি ইউনিয়ন, ১ টি পৌরসভা, ৯০ টি ইউপি ওয়ার্ড, ১৫২ টি মৌজা ও ২৩৭ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত।কসবা থানা গঠিত হয় ১৯০৮ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
জনসংখ্যাঃ
২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী কসবা উপজেলার মোট জনসংখ্য ৩,১৯,২২১ জন; পুরুষ ১,৫১,৮৫২ জন ও মহিলা ১,৬৭,৩৬৯ জন। মুসলিম ২৫৭৩৯২ জন, হিন্দু ১৩৭৯৩ জন, বৌদ্ধ ১৭ জন ও অন্যান্য ২৯ জন।
শিক্ষাঃ
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এখানকার শিক্ষার হার ৫০.৭% এবং সাক্ষরতার হার ৭৫%। এখানে রয়েছেঃ
প্রাথমিক বিদ্যালয় – ২১৪টি;
মহাবিদ্যালয় – ৮টি;
উচ্চ বিদ্যালয় – ৩৯টি;
জুনিয়র বিদ্যালয় – ২টি;
মাদ্রাসা – ২৩টি।
স্বাস্থ্যঃ
স্বাস্থ্য সেবাদানের জন্য রয়েছেঃ
উপজেলা স্থাস্থ্য কেন্দ্র – ১টি;
জন্ম নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র – ৫টি;
কমিউনিটি ক্লিনিক – ২টি;
স্যাটেলাইট ক্লিনিক – ৬৪টি;
পশু চিকিৎসা কেন্দ্র – ১টি;
কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র – ১টি।
মুক্তিযুদ্ধে কসবাঃ
মুক্তিযুদ্ধের সময় কসবা উপজেলা ২নং সেক্টরের বৃহত্তম রণাঙ্গন ছিল। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর লতুয়ামুড়া ও চকচন্দ্রপুরে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং কোল্লাপাথরে অপর এক লড়াইয়ে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাছাড়া এসময় উপজেলার আকছিনা, আড়াইবাড়ী, হরিয়াবহ, ক্ষীরণাল, চারগাছ ও বায়েক অঞ্চলে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। এ উপজেলায় অবস্থিত কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থল। এখানে ৫০ জন শহীদ মুক্তি যোদ্ধা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। এর মধ্যে ৪৭ জনের পরিচয় মিলেছে ও তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
কৃষিঃ
এখানকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষক। প্রধান ফসল হল ধান, গম ও বিভিন্ন ধরণের সবজি। প্রধান ফল কলা, কাঁঠাল, আম ও জাম।
কৃতী ব্যক্তিত্বঃ
এ উপজেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রয়েছেন সিরাজুল হক বাচ্চু, আনিসুল হক (প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও আইনমন্ত্রী), সৈয়দ আব্দুল হাদী (বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী), খন্দকার আশোক শাহা (সুফী সাধক ও ধর্ম প্রচারক), আল্লামা শায়খুল বাঙ্গাল (রাহ্) (বিশিষ্ট আলেম ও সুফি সাধক), ডঃ এম. এ. রহমান (চিকিৎসক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সুফি সাধক) প্রমুখ।
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহীত।
Print Friendly, PDF & Email