‘অনেক সাংবাদিক জার্নালিস্ট বানান পারবেন না’
---
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : সাংবাদিকদের অশিক্ষিত, অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে তীব্র সমালোচনা করলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাংসদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
আজ শনিবার সকালে জেলা শহরের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিকদের নিয়ে এসব মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর আধা ঘণ্টার বক্তব্যের প্রায় পুরোটাজুড়েই ছিল সাংবাদিকদের সমালোচনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক আছেন, তাঁদের যদি বলা হয় যে জার্নালিজম বা জার্নালিস্ট বানান লিখে আনেন, লিখতে পারবেন না। আই অ্যাম শিউর। তারপরও তাঁরা নিজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন।’
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, টিভি কর্তৃপক্ষ অনেক সময় লোক খুঁজে পায় না। যিনিই আবেদন করেন, তাঁকেই নিয়োগ দিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘দেশের প্রায় সবগুলো ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকই কোনো না কোনোভাবেই আওয়ামী ঘরানার লোক। তাঁদের এমপ্লয়ি (কর্মী) হিসেবে যখন কাজ করেন, একধরনের দালালি তো আপনাদের (সাংবাদিকেরা) করারই কথা।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যোগ্য ও দক্ষ হন। যাঁরা পকেট ভারী করার জন্য অহেতুক মানুষের ক্ষতি করেন, তাঁদের সম্পর্কে আমাদের অবজারভেশন কিন্তু থাকবে।’ এ সময় তিনি নিজেকে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য বলে দাবি করেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিক হওয়ার জন্য আমার কাছে দু-চারজন আসেন। আমিও সুপারিশ করার সময় এতটা খেয়াল করি না যে তাঁর যোগ্যতা আছে কি না এবং জার্নালিস্ট লিখতে পারে কি না, খেয়াল করি না। রাজনীতির লোক তো, সামাজিক মেলামেশা অব্যাহত রাখার জন্য অনেক সময় অনেক কিছু করতে বাধ্য হই। অনেক সময় সুপারিশ করতে হয়।’
মোকতাদির চৌধুরীর কথা, ‘এটা আমার কথা নয়। আমরা যারা রাজনীতি করি, সকলের জন্য একই কথা প্রযোজ্য। আমার নেত্রী শেখ হাসিনার জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। শেখ হাসিনাও সব সময় ভালো লোকের জন্য কাজ করতে পারেন না। কিছু কিছু খারাপ লোকের জন্য কাজ করতে হয়। অযোগ্য-অদক্ষ লোকের জন্য কাজ করতে হয়। মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন না।’
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া সম্পর্কে লেখার কোনো অভাব নেই। নিউজ করার অনেক বিষয়বস্তু আছে। আপনি পজিটিভও লিখতে পারেন আবার নেগেটিভও লিখতে পারেন।’ বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় লিখলে কেউ আপনাদের (সাংবাদিকদের) শেখ হাসিনার সরকার বা মোকতাদির চৌধুরীর দালাল বলে অবহিত করবে না।’ পকেট ভারী করার জন্য সাংবাদিকেরা অন্যের চরিত্র হনন ও অপসংবাদ পরিবেশন করছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, শতকরা ৯০ আর ১০ ভাগকে সমান চোখে দেখে সাংবাদিকেরা অসততার পরিচয় দিচ্ছেন। দুষ্কর্ম আর অপকর্ম করছেন।
আওয়ামী লীগের সাংসদ চিকিৎসকদেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, শহরের ৯০ ভাগ হাসপাতালের মালিকানা রয়েছে চিকিৎসকদের। তাঁরাই দালাল পুষছেন।
সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাদক প্রবেশের কথা উল্লেখ মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘এটা রোখার দায়িত্ব কার? ব্যারিকেড ভেঙে কীভাবে মাদক ভেতরে চলে আসছে, তা কি গণমাধ্যমে তোলা হয়?’ আওয়ামী লীগের লোক চোরাচালানিতে ধরা পড়লে তা ভালোভাবে লেখা হয় এবং বিএনপির লোকজন ধরা পড়লে কোনো কিছু লেখা হয় না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনেকের বাড়িঘর করা তো প্রয়োজন। কিন্তু কারও কারও বাড়িঘর করার সময় বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মহলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে পয়সা আদায় করাই যদি সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য, তাহলে এই সাংবাদিকতাকে মোকাবিলা করার সাধ্য কারও নেই। এমন ঘটনা ঘটছে সমাজে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দিকে নজর দেন।’
এই বক্তব্য চলার সময় সেখানে দর্শক হিসেবে উপস্থিত স্কুলের কয়েক শ ছাত্রছাত্রী করতালি দেয়। তাঁর এ বক্তব্যে সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক রেজুওয়ানুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ এ এস এম শফিকুল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার প্রমুখ।