g দাম কমায় আলু নিয়ে বিপাকে মুন্সীগঞ্জের চাষিরা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বুধবার, ২৫শে অক্টোবর, ২০১৭ ইং ১০ই কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

দাম কমায় আলু নিয়ে বিপাকে মুন্সীগঞ্জের চাষিরা

AmaderBrahmanbaria.COM
অক্টোবর ২৩, ২০১৭
news-image

---

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি : বাজার দর কমে যাওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মুন্সীগঞ্জের চাষিরা। জেলাতে এখনো প্রায় চার লাখ টন আলু হিমাগারে অবিক্রিত আছে। বর্তমান বাজার দরে এই আলু বিক্রি করলে শত কোটি টাকারও বেশি লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলাতে ৩৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১৫ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। ৭৪টি হিমাগারে রাখা পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টন আলুর মধ্যে অবিক্রিত আছে প্রায় ৪ লাখ টন। বতর্মান বাজার মূল্যে ওই আলু বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে শত কোটি টাকারও বেশি।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বস্তা প্রতি আলুর উৎপাদন খরচ এক হাজার ৩৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা। আর বর্তমান বাজার মূল্য ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। আলুর দর নিম্নমুখী হওয়ায় আলুর বাম্পার ফলনের পরও মজুদ করা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, হিমাগারে বীজ আলুর পরিমাণ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর চাহিদার তুলনায় আলু বেশি উৎপাদিত হওয়ায় দাম কম। ফলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। দাম পড়ে যাওয়ায় হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না কৃষকরা।

এ ব্যাপারে কদম রসুল হিমাগারের ব্যবস্থাপক দুলাল মণ্ডল জানান, এ বছর আলুর উৎপাদন অনেক বেশি। প্রত্যেক হিমাগার এখন আলুতে ভর্তি। যা গত মৌসুমের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। যার কারণে আলুর দাম অনেক কম। আলুচাষিরা এখন বিপাকে আছেন। সরকার যদি ত্রাণ বরাদ্দগুলোতে আলুকে প্রাধান্য দেয় তাহলে অবস্থার পরিবর্তন হবে।

এলিট হিমাগারের ব্যবস্থাপক আওলাদ হোসেন জানান, আলুর বাজারটা শুরু থেকেই মন্দা। দাম কম হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি বস্তা আলুর দাম ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। এতে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বস্তা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে।

আওলাদ হোসেন জানান, গত মৌসুমে ৭৫ শতাংশ আলু হিমাগার থেকে বাইরে যাওয়ার কথা থাকলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। মাত্র ৫০ শতাংশের কাছাকাছি আলু বের করা হয়েছে।

আলু ব্যবসায়ী সিদ্দিক জানান, আলু যখন হিমাগারে রাখা হয়েছিল তখন ভাড়াসহ সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু এখন প্রতি বস্তায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

আলুচাষি দিলদার হোসেন বলেন, ‘আলুর দাম নেই, ক্রেতাও নেই। পাঁচদিন ধরে আলু নিয়ে বসে আছি, কেউই কিনতে আসছেন না। পচে যাওয়ায় ১০০ বস্তা আলুর ১০ বস্তাই ফেলে দিতে হচ্ছে।’ এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কৃষকরা আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ হিমাগার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন পুস্তি বলেন, ‘খাদ্য হিসেবে আমাদের আলুর ওপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে আলু রপ্তানির ওপর জোর দিতে হবে।’

মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমরা হিমাগার ব্যবসায়ীরা চরম হতাশাগ্রস্ত। কারণ কৃষক যদি আলু না নেন, তবে আমরা লোকসানে পড়ব। আমরা কৃষকদের আলু বপনের জন্য ঋণ সহায়তা দিয়েছি, সেই টাকা আমাদের উঠবে না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, হিমাগারে সংরক্ষিত আলু ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছে। যারা আলু তোলার পরই বিক্রি করেছেন তারাই লাভবান হয়েছেন।

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের চাওয়া, আলুর বিভিন্নমুখী ব্যবহার ও বিদেশে রপ্তানি করাসহ দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। তবে হয়তো কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।

এ জাতীয় আরও খবর