শান্তিতে নোবেল জিতল আইসিএএন
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শান্তিতে নোবেল জিতল পরমাণু অস্ত্র বিলুপ্তকরণ জোট (আইসিএএন)। নরওয়ের রাজধানী অসলোতে নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইস অ্যান্ডারসন শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ৩ টার দিকে চলতি বছর শান্তিতে নোবেল জয়ী হিসেবে আইসিএএন-এর নাম ঘোষণা করেন।
আগে থেকেই সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কার হাতে উঠছে ২০১৭ সালের শান্তির নোবেল? শোনা যাচ্ছিল তিনশ ১৮টি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে।
তবে গত ৫০ বছর ধরে সম্ভাব্য বিজয়ীর তালিকা গোপনই রেখে আসছে নোবেল কমিটি। একেবারে বিজয়ীর নামটাই প্রকাশ করা হয়। আর সে কারণেই নোবেল পুরস্কার নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ থাকে না।
শান্তিতে নোবেলের মনোনয়ন তালিকায় যাদের নাম ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে ও যাদের নামের গুঞ্জণ শোনা যাচ্ছিল তারা হলেন, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল, জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জ, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, জো কক্স, বুলগেরিয়ার অর্থোডক্স চার্চ, ডেভিড বোয়ি, ভ্লাদিমির পুতিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে শেষ পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্র বিলুপ্তকরণ জোট ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস (আইসিএএন) শান্তিতে নোবেল জিতে নেয়। পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা তুলে ধরে সতর্কতা জারি এবং অান্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বাতিলে কাজ করার জন্য সংস্থাটিকে শান্তিতে নোবেল দেয়া হয়।
আইসিএএন-কে এমন এক সময় শান্তিতে নোবেল দেয়া হল, যখন ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিলের জন্য হুমকি দিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাছাড়া উত্তর কোরিয়াও একের পর যুক্তরাষ্ট্রকে শাসিয়ে যাচ্ছে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ট্রাম্পের দেশকে উড়িয়ে দিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বীপ অঞ্চল গুয়ামে মাঝারি ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে মাত্র ১৪ মিনিটের মধ্যে ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। তার পর থেকেই কিম-ট্রাম্পের বাকযুদ্ধ আরও ডালপালা ছড়ায়।
এদিকে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিলের হুমকি দেয়ার পর ট্রাম্পের উদ্দেশে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, চুক্তি বাতিল হলে যুক্তরাষ্ট্রই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আইসিএএন নোবেল পাওয়ার পর ট্রাম্প হয়তো পরমাণু চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন। গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান মানুয়েল সান্তোস। কলম্বিয়ায় গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টা ও ফার্ক বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য তাকে সেই পুরস্কার দেয়া হয়।
একদিন আগে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার চলতি বছরের সাহিত্যে নোবেল পান ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক কাজুয়ো ইশিগুরো। গত বুধবার রসায়ন শাস্ত্রে নোবেল বিজয়ী তিন বিজ্ঞানীর নাম স্টকহোমে ঘোষণা করা হয়েছে। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপির উন্নতির জন্য বিশেষ অবদান রাখায় তারা পুরস্কারটি পান। বিজয়ী তিনজন হলেন জ্যাকস ডুবোচেট, জোয়াশিম ফ্রাঙ্ক এবং রিচার্ড হেন্ডারসন।
চলতি বছর পদার্থে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন রেইনার ওয়েইস, ব্যারি সি. ব্যারিশ ও কিপ এস থোর্নে। মঙ্গলবার রয়াল সুইডিশ একাডেমি স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় এ তিন বিজ্ঞানীর নোবেল জয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ অনুসন্ধানের স্বীকৃতিস্বরূপ পদার্থের নোবেল পেয়েছেন এই তিন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানী রেইনার ওয়েইস জার্মান বংশোদ্ভূত। এছাড়া অপর দুই বিজ্ঞানী ব্যারি সি ব্যারিশ ও কিপ এস থোর্নে মার্কিন নাগরিক।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব অভজারভেটরিতে (লিগো- ভিরগো) কাজ করেন এই তিন বিজ্ঞানী।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্ল্যাক হোলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার ঘোষণা দেয় লিগো-ভিরগো। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি বলছে, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ এবং শনাক্তরণে সক্ষম হয়েছেন এই তিন বিজ্ঞানী।
সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুসারে নতুন কোনো কিছু উদ্ভাবন, বিশেষ গবেষণা এবং মানব জাতির কল্যাণে অসামান্য অবদান রাখার জন্য প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে দেয়া হয় এ পুরস্কার। সূত্র : গার্ডিয়ান