গরুর ভুড়ি ভুনা
---
কোরবানির ঈদে মাংসের অনেক পদ থাকে। একটানা কয়েকদিন মাংস খেলে অরুচি আসে। তখন অনেকেই গরুর ভুড়ি রান্নার আয়োজন করেন। সুস্বাদু এই খাবারের গল্প শুনিয়েছেন রন্ধনশিল্পী সাহাদাত উদরাজী।
গল্প ও রান্নায় গরুর ভুড়ি রান্না নেই, কথাটা এযাবৎ অনেকবার শুনতে হয়েছে। কারণ হিসাবে অনেকে বলেন বা বলে আসছেন ভুড়ি রান্না আমাদের দেশের একটা জনপ্রিয় খাবার।
অফিস থেকে ফেরার পথে আমি বাস থেকে নেমেই প্রায় প্রতিদিন ভুড়ি রান্নার ঘ্রাণ পেয়ে থাকি। আমাদের রাস্তার মাথায় এক ফুটপাতের দোকানে এই রান্না হয়ে থেকে। অনেক লোককে দেখি দাঁড়িয়ে এই ভুড়ি রান্না পরোটা দিয়ে খেতে। আমি কখনো খেয়ে দেখিনি। তবে ঘ্রাণেই অর্ধভোজন।
কয়েক দিন আগে ভুড়ি কিনে বাসায় আসি। যদিও ভুড়ি পরিস্কার একটা ঝামেলাপূর্ণ। কিন্তু কসাইরাই এই কাজটি করে দেন। তারপরও বাসায় এনে এগুলো পরিস্কার করা হয়। আসুন বলে দেই ভুড়ি ভুনার পুরো প্রক্রিয়া।
১) প্রথম ধাপ: ভুড়ি পরিস্কারের পর সিদ্ধ করে আবারো ভাল করে পরিস্কার করে নিতে হবে। এর পর ছোট ছোট টুকরা করে নিতে হবে। তবে প্রথমে ভুড়ির ময়লা পরিস্কারের পর চুনের পানিতে চুবিয়ে রাখতে হয়, এতে যদি কোন জীবাণু থাকে তা মরে যায়, তার পরেও ভাল করে সিদ্ধ করে নিতে হয়।
২) দ্বিতীয় ধাপ: ভুড়ি রান্না (পেঁয়াজ ছাড়া)
৩) তৃতীয় ধাপ: পেঁয়াজ দিয়ে ভাঁজা বা বাগার
পরিমাণ ও উপকরণ
(পরিমাণ আপনিও অনুমান করতে পারেন, অনুমানিক মাঝারি এক বাটির জন্য বা অনুমানিক ৭০০ গ্রামের জন্য)
– অনুমানিক ৭০০ গ্রাম ভুড়ি, পরিস্কারের পর যা পাওয়া গিয়েছিল
– গরম মসলা (এলাচি ৩/৪টা, দারুচিনি, ২/৩ পিস)
– কাঁচা মরিচ, কয়েকটা
– লাল মরিচ গুড়া, আধা চা চামচ
– হলুদ গুড়া, এক চা চামচের কম
– আদা বাটা, এক টেবিল চামচ
– রসুন বাটা, এক টেবিল চামচ
– ধনিয়া গুড়া, হাফ চা চামচ
– জিরা গুড়া, হাফ চা চামচ
– তেল, ৮/১০ চা চামচ বা কম বেশি (প্রথম ধাপে কম)
– লবণ, পরিমাণ মত
– পানি পরিমাণ মত
বাগারের জন্য/ ভাজার জন্য
– পেঁয়াজ কুঁচি, এক কাপ
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– তেল, ৮/১০ চা চামচ
স্বাদ বাড়ানোর জন্য আরও দিতে পারেনঃ
– টমেটো কুঁচি, যা স্বাদ বাড়াবে আরো
– ধনিয়া পাতার কুঁচি, দুই চা চামচ বা কম বেশি, যারা ঘ্রাণ আরো কমাতে চাইবেন
প্রণালি
সব মশলা, সামান্য লবণ, সামান্য তেল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখা ভুড়ি গুলো একটা হাড়িতে নিন। দুই/তিন কাপ পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। সিদ্ধ না হলে পরেও পানি দিতে পারবেন। টমেটো কুঁচিও এই সময়ে দিয়ে দিতে পারেন। এবার মাধ্যম আঁচে ঢাকনা দিয়ে মাধ্যম জ্বাল দিতে থাকুন।
রান্না হতে সময় লাগবে। পানি শুঁকিয়ে নিতে হবে। সিদ্ধ না হলে আরও পানি দিতে হবে।
এবার অন্য একটা কড়াইতে তেলে পেঁয়াজ কুঁচি, মরিচ ভাঁজুন। পেঁয়াজ কুঁচি হলদে হয়ে আসবে। এবার অন্য পাত্রে রান্না করা ভুড়ি গুলো এই পাত্রে দিয়ে দিন। মিশিয়ে নিন। এসময় আগুনের আঁচ অল্প থাকবে। ভাঁজা চলুক। তবে সতর্কতা হচ্ছে, ভুড়ি এইভাবে ভাঁজতে গেলে ফুটে উঠে, তাই সর্তকতা জরুরি। নিরাপদ দূরে থাকুন। খেয়াল রাখবেন, যাতে তেল শেষ না হয়ে যায়। এই পর্যায়ে শেষবারের মত লবণ দেখুন। ভাঁজাটা কেমন হবে সেটা আপনি নিজেই নির্ধারণ করুন। ইচ্ছা হলে পোড়া পোড়া করতে পারেন। রুটি ভাজির সাথে খেতে হলে, একটা বেশি ভাঁজতে হয়।
ভুড়ি ভুনার অসাধারণ স্বাদ। এই ভুড়ির স্বাদ বুঝানো যাবে না। কারণ আমি এমন দেখেছি, যারা একবার খেয়েছেন, তারা বার বার খেতে চান।
এমডি/মানিক